সালমান রুশদির ওপর হামলা নিয়ে যা বলছেন ইসলামি চিন্তাবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা

|

ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর হামলা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে জোর আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন লেখক-রাজনীতিকরা। মানবাধিকার কর্মীদেরও অভিমত, এটি মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা চর্চার ওপর আঘাত। ইসলামি চিন্তাবিদরাও বলছেন, ফতোয়া জারি মানেই কাউকে খুন করার এখতিয়ার দেয়া নয়।

বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত সাহিত্য সমাজ। রাজনৈতিক মহল থেকেও চলছে নিন্দা-সমালোচনা। হামলার পর সামনে এসেছে ১৯৮৯ সালে সালমান রুশদির বিরুদ্ধে ইরানের জারি করা ফতোয়া ইস্যুটিও। তবে ইসলামি চিন্তাবিদ ইব্রাহিম মোগরা বলছেন, তৎকালীন ইরানি শাসকের চিন্তাধারা ফতোয়ার মূল আদর্শের সাথে মেলে না।

যুক্তরাজ্যের এই ইমাম বলছেন, ফতোয়া হত্যার হুমকি বা কাউকে খুন করার এখতিয়ার দেয়া নয়। বরং পথভ্রষ্ট কোনো ব্যক্তিকে ধর্মীয় অনুশাসনে ফেরাতেই এ নির্দেশনা। ইরানি সরকার সেসময় যে কারণে ফতোয়াটি দিয়েছিল, পশ্চিমা গণমাধ্যম তার গোলমেলে অর্থ প্রচার করেছে। যার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন বহু ইসলামি চিন্তাবিদ। কারণ, ভিন্নধর্মী কেউ যদি না-ই জানেন, কেন মহানবি (স) মুসলিমদের কাছে এত শ্রদ্ধেয় তাহলে তারা অবজ্ঞা করবেনই!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সমবেদনা প্রকাশ করছেন ৭৫ বছর বয়সী ঔপন্যাসিকের পরিবারের প্রতি। হামলাকে মুক্তবাক চর্চার ওপর আঘাত বলে মন্তব্য করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

হিউম্যানিস্ট ইউকের নির্বাহী প্রধান অ্যান্ড্রু কপসন বলছেন, সৃজনশীল লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভিক সালমান রুশদি। তিনি মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং উদার সমাজনীতির ধারক-বাহক। অথচ তিনিই শিকার হলেন হামলার। সাহিত্যে পুরোপুরি অজ্ঞ-নিবোর্ধ এক ব্যক্তি রুশদির কণ্ঠস্বর থামাতে চাচ্ছিলেন। এর মাধ্যমে স্বার্থান্বেষীরা বিশ্বে বিভাজন তৈরি করতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শুক্রবার নিইউয়র্কের সাহিত্য ইন্সস্টিটিউ শ্যাটাকুয়ায় সালমান রুশদির ওপর চালানো হয় অতর্কিত হামলা। অন্তত ১০ বার ছুরিকাঘাত করা হয় তার শরীরে।

নিউইয়র্ক গুড নেইবর বুকস্টোর নামে একটি বইয়ের দোকানের মালিক বব লিংলে বলছেন, ঘটনাটি গোটা কমিউনিটিকে নাড়া দিয়েছে। বইপ্রেমিরাও হতবাক। আমাদের দোকানে সাধারণত নিষিদ্ধ বই-উপন্যাস থাকে। সালমান রুশদি বক্তব্য রাখবেন জেনে আরও কিছু বই এনেছিলাম। কিন্তু ভাবিনি এমন কিছু হতে চলেছে।

এদিকে হামলাকারী হাদি মাতার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শনিবার, নিউইয়র্ক কাউন্টি আদালতে হাজির করা হয় ২৪ বছর বয়সী লেবানিজ বংশোদ্ভুত এ মার্কিন নাগরিককে। জামিন না দিয়ে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সাথে হাদি বা তার পরিবারের কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা, তা যাচাই করা হচ্ছে। কারণ, উগ্রপন্থী শিয়া এবং ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রতি তার সমর্থন ছিল।

বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত উপন্যাস স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য হয়ে ওঠেন বিতর্কিত। অভিযোগ ওঠে, মহানবি হযরত মুহাম্মদকে (স) অবমাননা করা হয়েছে তার এই বইয়ে।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply