ছিনতাইকারী সেজে বাবাকে পিটিয়ে ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ তিন ছেলের, গ্রেফতার ২

|

ভুক্তভোগী বাবা ও অভিযুক্ত তিন ছেলে।

যে বাবা-মা তাদের রক্ত-মাংস এক করে মানুষ করেছেন তিন ছেলেকে, তারাই বাবাকে মেরে রক্তাক্ত করে ছিনতাই করে নিয়েছে ৩১ লাখ টাকা। এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মানিকদী এলাকায়। নিজের আপন ছেলেদের মারে ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন (৭০) এখন ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। বাবার করা মামলায় তিন ছেলের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ছেলেদের অত্যাচার সইতে না পেরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পশ্চিম মানিকদীর একটি ভবনে মেয়ের পরিবারের সাথে ভাড়া থাকেন জয়নাল-হনুফা দম্পতি। নিজের সম্পত্তির অধিকাংশই দিয়েছেন তিন ছেলের নামে। নিজের স্ত্রী আর মেয়ের কথা ভেবে মানিকদী এলাকার আড়াই কাঠা জমি ছেলেদের দেননি। তাই তাদের উপর মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করতো তিন ছেলে। পরে ওই জমি বিক্রি করে টাকা জমিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন জয়নাল। জমি বিক্রি করে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় ছিনতাইকারীর বেশে জয়নালের উপর হামলা চালায় তিন ছেলে। লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে জখম করে বাবাকে।

জয়নাল আবেদীন বলেন, জমি বিক্রি করে ৩১ লাখ টাকা নিয়ে বাসায় ঢোকার সময়ই হামলা করা হয়। আমার তিন ছেলে আর তাদের এক সহকর্মীকে নিয়ে চারজন মিলে মেরে আমার পা আর মাথা জখম করে দেয়। প্রায় এক বিঘার মতো জমি ছিল। সন্তানদের লালন পালন করতে করতে পরে যা ছিল তার প্রায় সবই ছেলেদের দিয়েছি। এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।

ঘটনার পর কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে থানায় গিয়ে মামলা করেন জয়নাল দম্পতি। এরপর থেকেই গাঢাকা দেয় ছেলেরা। তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধর্ণা দিতে থাকেন নির্যাতিত বাবা। ঢাকার ডিবি পুলিশের কাছে এমন তথ্য আসার পর টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে পালিয়ে থাকা দুই ছেলে হান্নান ও মান্নানকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা। কিন্তু এখনো পলাতক প্রধান আসামি বড় ছেলে হানিফ। দুই ছেলেকে আটকের পর বাবার কাছ থেকে ছিনতাই করা ৩১ লাখের মধ্যে ২৯ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাবা-মার প্রতি সন্তানদের এমন আচরণ দেখে হতবাক কর্মকর্তারা।

ডিএমপির ডিবি উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ছেলেগুলো বখাটে। তার পাশাপাশি তাদের স্ত্রী ও স্ত্রী পক্ষীয় আত্মীয়-স্বজনরাও লোভী। তাই বাবা-মাকে ভালোবাসা বা ভরণপোষণের পরিবর্তে তারা স্বামীদের উস্কে দিতো তাদের নির্যাতন করার জন্য।

দেশের আইন অনুযায়ী, পিতা-মাতা বৃদ্ধ হলে তার ভরণ-পোষনসহ তাদের নিয়মিত সময় দিতে বাধ্য থাকবেন সন্তানরা। কেউ এরকম অন্যায়ের শিকার হলে দ্রুত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ পুলিশের।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply