বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে জোটে রাষ্ট্রদ্রোহীর তকমা, মৃত্যুদণ্ড পান ময়মনসিংহের বিশ্বজিৎ

|

বিশ্বজিৎ নন্দী।

‘৭৫ এর ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পাশাপাশি দেশজুড়ে ভয় আর আতঙ্ক প্রতিষ্ঠা করে ঘাতকরা। সামরিক শাসন জারি আর দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণ্যতম খুনের বিচার বন্ধ করে সে সময়ের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। তবে কঠিন সেই সময়েও সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বিশ্বজিৎ নন্দী। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর জাতীয় মুক্তিক্যাম্পে যোগ দেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশবাসীকে সংগঠিত করা। তবে বঙ্গবন্ধুপ্রেমী বিশ্বজিতের কপালে জুটেছিল দেশদ্রোহীর তকমা, চারবার মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, মৃত্যুভয়কে পেছনে ফেলে, বাবা-মা পরিবার সব কিছুকে তুচ্ছ করে আমার তখন একটাই উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়, এই খুনিদের বিনাশ করতে হবে। সেই চেতনাতেই আমি বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম।

বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সারাদেশে হরতাল আহ্বান করে মুক্তি বাহিনী। এর দুদিন আগে হাতে তৈরি বোমা দিয়ে মধুপুরের বানারী সেতু ধ্বংস করেন বিশ্বজিৎ। ১৪ আগস্ট সেনাবাহিনীর অভিযানে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এতে প্রাণ হারান জুবেদ, সুবোধ, দীপাল, মফিজ আর নিখিল নামের পাঁচ সহযোদ্ধা।

বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, ১৪ আগস্টের ওই যুদ্ধের পর সেনাবাহিনীর দুই সদস্য আমাকে মৃত মনে করে দুই হাত ধরে টেনে-হিঁচড়ে শিয়াল-কুকুরের মতো এক স্থানে ফেলে দেয়। তবে একজন বুঝতে পেরে অন্যজনকে বলে, ‘স্যার, মনে হয় জীবিত আছে’। সে যাত্রায় কোনো ক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেফতার করা হয় বিশ্বজিৎকে। তারপর জেল-জুলুম-রিমান্ড শেষে সামরিক আদালতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে চারবার দণ্ডিত হতে হয় তাকে।

বিশ্বজিৎ জানান, নির্যাতন শেষে আমাকে দিয়ে দেয়া হয় ডিজিএফআইয়ের কাছে। সেখানে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। আর জিজ্ঞেসাবাদ মানে নির্যাতন তো আছেই। সব মিলিয়ে ১১৫ দিন চলে এভাবে। এরপর ফাঁসির আদেশ দিয়ে আমাকে কনডেম সেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় আরেক জীবন। ১৪ বছর জেল খাটার পর ১৯৮৯ সালের ‌১৪ ডিসেম্বর আমি মুক্তি পাই। তবে আমার মনে হতো, বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই মৃত্যু হলে আমি হয়তো বঙ্গবন্ধুর চরণে ঠাঁই পাবো। এই মনে হওয়ার কারণে শত কষ্ট-যন্ত্রণা সত্ত্বেও আমি এই ফাঁসি নিয়ে কখনও বিচলিত হইনি।

তবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও দল থেকে আর্থিক কোনো সুবিধা নেননি বিশ্বজিৎ। রাজনীতি নিয়েও তার বাড়তি কোনো আগ্রহ নেই। কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও চাওয়া একটাই, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই চলুক বাংলাদেশ।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply