ওপারে মেয়ের আকুতি, এপারে মায়ের আহাজারি

|

ভুক্তভোগী তরুণীর মা বলেন, আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার মেয়েকে ফেরত চাই।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ১৯ বছরের এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করার অভিযোগ প্রেমিক তিলক চন্দ্র শুভর (২৩) বিরুদ্ধে। ওই তরুণী হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এমনকি তাকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থী। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, তাকে ভারতে নিয়ে যেতে তিলককে সহযোগিতা করেছেন হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক সুকুমার রায়।

বুধবার (১০ আগস্ট) মেয়েটির দেশে ফেরার আকুতির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিও ভাইরালের পর পরেই বাড়ি থেকে সটকে পড়ে তিলকের পরিবারের লোকজন।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কলেজছাত্রী নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে করে তিলক। পরে ভারতে পাচার করে। এমনকি আমাকে শাঁখা-সিঁদুর পরতেও বাধ্য করে সে। তাকে ভারতের শিলিগুড়ি এলাকার ঘোড়ার মোড়ে একটি বাসায় আটকে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই তরুণী। তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয় জানিয়ে তিনি উদ্ধারের অনুরোধ করেছেন।

মেয়েটির পরিবার জানায়, সে ও তিলক রায় ওরফে শুভ একে অপরকে ভালোবাসতেন। তিলক নিজের ধর্মীয় পরিচয় ও প্রকৃত নাম গোপন করে এই সম্পর্কে জড়ায়। এরই মধ্যে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে কলেজ যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় তরুণী। এ ঘটনায় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ৫ জনের নাম উল্লেখ করে হাতীবান্ধা থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন তরুণীর বড় ভাই। ওই মামলার অভিযুক্তরা হলেন, তিলক চন্দ্র ও তার বাবা ধনঞ্জয় রায় (৫০), মামা গোপাল চন্দ্র (৩২), বন্ধু হামিদুল ইসলাম হৃদয় ও মনিরুজ্জামান তান্না (১৯)। মামলার কয়েকদিন পর হৃদয়কে আটক করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। হৃদয় জামিনে রয়েছেন।

এদিকে চলতি মাসের ৫ আগস্ট ভারতীয় পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হলে তারা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও অভিযুক্ত তিলককে আটক থানায় নিয়ে যায়। তারা সেখানে পুলিশি হেফাজতে আছেন।

বৃহস্পতিবার সরজমিনে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের পড়ার টেবিলের পাশে বসে তার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছেন মা খতিজন নেছা (৭০)। আর আর্তনাদ করে বলছেন, সাত মাস থেকে মেয়েকে দেখি না। আমার মেয়েকে প্রতারণা করে ভারতে পাচার করেছে। আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার মেয়েকে ফেরত চাই। তোমরা আমার মেয়েকে এনে দাও। এ কথা বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।

এ সময় পাশে থাকা তরুণীর ভাবি রশীদা বেগম বলেন, আমার যখন বিয়ে হয় তখন সে ছোট। তাকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করেছি। অনেকদিন হলো তাকে দেখি না। বুক ফেটে কান্না আসে। কিন্তু কিছু করতে পারছি না। আপনারা ওকে ফিরিয়ে আনেন। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বড়বোন ফাতেমা বেগম বলেন, ও আমাদের আদরের ছোট বোন। আপনাদের কাছে অনুরোধ ওকে ফিরিয়ে আনুন। আর যারা তাকে পাচার করেছেন তাদের কঠিন শাস্তি দিন।

বড় ভাই কামরজ্জামান নুলু বলেন, আমার বোনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করা হয়। কিন্তু এসআই সুকুমার আমার বোনকে উদ্ধার না করে উল্টো ওকে পাচারে সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের কঠিন বিচার চাই।

তারা অভিযোগ করেন, ওই তরুণীকে খুঁজে আনতে হাতীবান্ধা থানার এসআই সুকুমার রায় ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সে খুঁজে তো আনেননি, উল্টো ওদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পাচারে সহযোগিতা করেছেন। তবে এসআই সুকুমার রায় তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এখানে ছেলের বাবা-মামার কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি বলে বলেচার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ওই শিক্ষার্থী ভারতে আইনের আশ্রয়ে আছে। তাকে দেশে আনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। যত দ্রুত দেশে আনার আশ্বাসও দেন তিনি।

এদিকে সরেজমিনে তিলক চন্দ্রের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায় না। প্রতিবেশীরাও তাদের কোনো খোঁজ জানাতে পারেন না। তবে তারা ওই তরুণীকে নিয়ে তিলকের ভারতে চলে যাওয়ার ব্যাপারটি জানেন।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply