কেন আলোচনায় ন্যাটো?

|

ন্যাটোর সদর দফতর। ছবি: সংগৃহীত।

নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো); রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে আলোচনার তুঙ্গে পশ্চিমা সামরিক জোটটি। মূলত ন্যাটোর সহযোগী দেশ ইউক্রেন চাইছিল চূড়ান্ত সদস্যপদ। তাতে নিরাপত্তা সংকটে পড়বে সীমান্তঘেষা পরাশক্তি রাশিয়া, এই অজুহাত দেখিয়ে বাধা দেয় পুতিন প্রশাসন। বাগবিতণ্ডা একপর্যায়ে গড়ায় প্রাণঘাতী যুদ্ধে।

আর এদিকে যুদ্ধের মধ্যেই জোটটিতে জায়গা করে নিচ্ছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। শিগগিরই ৩০ থেকে ৩২ সদস্যে পরিণত হবে সামরিক জোটটি। অথচ, গেলো বছর কিয়েভকে সদস্যপদ দেয়নি ন্যাটো। বরাবরই ন্যাটোর উদ্দেশ্য ও কর্মযজ্ঞ আর সামরিক কৌশল নিয়ে ছিল আলোচনা-সমালোচনা।

ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটোর দরজা সবসময় উন্মুক্ত। সে কারণেই ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলো। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট, কখনোই ন্যাটো বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে সফল হবেন না পুতিন। নিজস্ব পথ বেছে নেয়ার অধিকারকে বরাবর গুরুত্ব দেয় সামরিক জোটটি। তাই নর্ডিক দেশগুলোর অর্ন্তভুক্তিকে স্বাগতম জানাচ্ছি।

কিন্তু কি এই ন্যাটো? তাদের উদ্দেশ্য কী? সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন থেকে পশ্চিম বার্লিন এবং ইউরোপকে সুরক্ষিত রাখতেই ১৯৪৯ সালে যাত্রা শুরু করে এ সামরিক জোট। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন-কানাডাসহ ২০টি দেশ। জোটভুক্তরা পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সম্মিলিত সেনাবহরের খরচ পৃথিবীর সব দেশের সামরিক ব্যয়ের প্রায় ৭০ ভাগ।

স্পেনের মাদ্রিদে এবারের ন্যাটো সম্মেলনে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে এ সামরিক জোট। সম্মেলনজুড়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে একটাই প্রতিপক্ষ, রাশিয়া। গোটা ইউরোপের হুমকিদাতা হিসেবে উঠে আসছে অভিন্ন নাম, ভ্লাদিমির পুতিন। তাই মস্কো আর পুতিনকে ঠেকাতেই উঠে আসে এ সামরিক জোটের মহাপরিকল্পনা।

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবার সবচেয়ে বড় উদ্যোগ নিয়েছে ন্যাটো। মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ নিজেই জানিয়েছেন, ন্যাটো সেনাবহরে এত বড় আকারে পুনর্বিন্যাস হয়নি আগে। ১১ পৃষ্ঠার নতুন কৌশলগত পরিকল্পনায় তুলে ধরা হয় ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবেলায় কর্মপন্থা।

জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, অত্যাধুনিক সক্ষমতা, ন্যাটোর সেনাসদস্য বৃদ্ধি এবং মহড়ার পেছনে বিনিয়োগ করতে রাজি সদস্য রাষ্ট্রগুলো। এর বাইরে জোটের অর্থনৈতিক তহবিল বৃদ্ধির ব্যাপারেও আমরা সম্মত হয়েছি। সেটি সমরাস্ত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণ, সামরিক কৌশল আয়ত্ত্বের পেছনে খরচ হবে। এর ফলে সদস্যদের মধ্য বাড়বে পারস্পরিক ঐক্য।

অবশ্য বিশ্লেষকদের অভিমত, স্বার্থ ছাড়া বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করবে না ন্যাটো। মূলত নিজ অবস্থান শক্ত করতেই জোটটি দেশে-দেশে বাধায় যুদ্ধ।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সাঈদ ফরহাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটো নিজেদের লক্ষ্য পূরণকেই গুরুত্ব দেয়। বিশ্ব বা বৈশ্বিক জনগণের ব্যাপারে তাদের বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নেই। সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে উসকে দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ বাধায়। সেখানে নিত্য-নতুন কৌশল আর আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে, অর্জন করে সক্ষমতা। জোটে অংশ নিতে আগ্রহীরাও রয়েছেন ধোঁকায়। দু’দিন পরই বুঝতে পারবে, ন্যাটোর আসল চেহারা।

সবশেষ, ২০২০ সালের মার্চে জোটটিতে যোগ দেয় নর্থ মেসিডোনিয়া। এর আগে ২০০৯ সালে সদস্যপদ পায় আলবেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply