কে২ এর বেসক্যাম্পে ওয়াসফিয়া নাজরীন

|

কে২ এর বেসক্যাম্প থেকে ওয়াসফিয়ার পোস্ট করা ছবি।

কে২ পর্বতমালা এক্সপিডিশনে ইতোমধ্যেই পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন।

বুধবার (২৯ জুন) কে২ এর বেসক্যাম্পে পৌঁছেছেন ওয়াসফিয়া। সেখানে কোনো ধরনের নেটওয়ার্ক না থাকলেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বেসক্যাম্পে নিজের একটু ছবিসহ দেয়া এক স্ট্যাটাসে সেখানে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন ওয়াসফিয়া নিজেই।

স্ট্যাটাসে ওয়াসফিয়া লিখেছেন, কে২ এর বেসক্যাম্প থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা। আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে দ্য গ্রেট ফাদার ছোগোরি একেএ কে২। অনেক বাধা পেরিয়ে কিছুটা দেরি হলেও গত ২৬ জুন আমরা এখানে পৌঁছেছি, তবে এখন সবকিছু ঠিকঠাক আছে। এখানে কোনো নেটওয়ার্ক নেই তাই আপডেট দিতে স্যাটেলাইট ব্যবহার করছি। এরপরের আপডেটগুলো দিতে আরও কিছু সময় লাগবে।

ওয়াসফিয়ার ফেসবুক থেকে নেয়া ছবি।

এখানে পৌঁছে শেরপা রীতিতে অভিযানের মঙ্গলকামনায় পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। জায়গাটা এমন যে মনে হচ্ছে যেন আমি এখানে আগেও এসেছি।

ওয়াসফিয়া লিখেছেন, এর আগে আমি যে আপডেট জানিয়েছিলাম তারপর স্কারদু থেকে আশকোলি পর্যন্ত আসতে আমরা বেশ কয়েকবার ভূমিধসের সম্মুখীন হয়েছি। বেসক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেয়ার পর ঝোলা নামক জায়গায় আমরা দুইবার নদীতে প্রায় পড়েও গেছি (হাসির ইমোজি)। তবে এরকম ভয়ানক কাদা ও বৃষ্টির মধ্যেও আমাদেরকে নিরাপদে ঝোলায় পৌঁছে দেয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই আমাদের ড্রাইভার আলী ভাইয়ের পাগলা ড্রাইভিংয়ের। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে পৌঁছাতে পেরেছি কারণ আমাদের পর এখানে আসবে এমন বেশকিছু ট্র্যাকার টিম এখনও অপেক্ষায় আছেন যারা রাস্তা ভাঙা থাকায় আসতে পারছেন না।

ওয়াসফিয়া আরও লিখেছেন, ঝোলা থেকে ট্র্যাক করে আমরা পাইয়ু হয়ে উর্দুকুশ এবং তারপর গোরো২ পর্যন্ত ট্র্যাক করেছি। এরমধ্যে একবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলাম, তবে এখন সেরে গেছি। মনে হচ্ছে কে২তে ওঠার আগে পরিশুদ্ধি হলো।

নিজের মানসিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ওয়াসফিয়া লেখেন, মানসিক-শারীরিক ও আধ্যাত্বিকভাবে খুবই উজ্জ্বীবিত বোধ করছি। এখানকার আবহাওয়ার সাথে অভ্যস্ত হতে এরমধ্যেই বেশকিছু হাইক করেছি। এখন আমরা অপেক্ষা করছি ভাল আবহাওয়ার যাতে আমরা এই মাউন্টেনের আরও কাছে যেতে পারি। ডাটা সীমিত হওয়ার কারণে আমার এক্সপিডিশনের বাকি ছবিগুলো পরে পোস্ট করবো। মাইটি কে২ এর কোল থেকে আমার ভালোবাসা জানবেন সবাই।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১০ জুন কে২ অভিযানের উদ্দেশে পাকিস্তানে পৌঁছেন ওয়াসফিয়া। কে২ পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যার অবস্থান পাকিস্তানের কারাকোরাম অঞ্চলের গিলগিট বালতিস্তানে। এর কিছু অংশ চীন শাসিত জিনজিয়াং প্রদেশেও রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাতটি শৃঙ্গ জয়ের অভিযান সম্পূর্ণ করেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরিন। ২০১১ সালের অক্টোবরে আফ্রিকার মাউন্ট কিলিমানজারো (৫ হাজার ৮৯৫ মিটার), একই বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আমেরিকার মাউন্ট আকনকাগুয়া (৬ হাজার ৯৬১ মিটার), ২০১২ সালের মে মাসে মাউন্ট এভারেস্ট (৮ হাজার ৮৪৮ মিটার), ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে এন্টার্কটিকার মাউন্ট ভিনসন (৪ হাজার ৮৯২ মিটার), ২০১৩ সালের মার্চে ইউরোপের মাউন্ট অ্যালব্রুস (৫ হাজার ৬৪২ মিটার), ২০১৪ সালের জুনে উত্তর আমেরিকার মাউন্ট ম্যাককিনলে (৬ হাজার ১৯৪ মিটার), এবং ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওশেনিয়ার কার্সটেসনস পিরামিড (৪ হাজার ৮৮৪ মিটার) জয় করেন ওয়াসফিয়া। তিনিই প্রথম সেভেন সামিটজয়ী বাংলাদেশি পর্বতারোহী।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply