গর্ভপাতের অধিকার বাতিলের রায়ে ট্রাম্পের উল্লাস, বাইডেনের মতে ‘মর্মান্তিক ভুল’

|

ক্ষোভে ফুঁসছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন নারীদের ‘গর্ভপাত বিষয়ক অধিকার’ বাতিল হওয়ায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল গোটা যুক্তরাষ্ট্র। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে মর্মান্তিক ভুল বলেছেন খোদ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অন্যদিকে, সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রায়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ইস্যুটি ঘিরে তাই বিভক্ত সুশীল সমাজ। অনেকেই বলছেন, আইনের মারপ্যাচে এখন ধর্ষকের সন্তানকে জন্মদানে বাধ্য হবেন নারীরা। সিএনএন, ফক্স নিউজ, বিবিসি, এনপিআরসহ বেশ কিছু বৈশ্বিক গণমাধ্যমে এসেছে এই খবর।

ক্ষোভে ফুঁসছে আটলান্টা থেকে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২৪ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে ৯ বিচারপতির বেঞ্চের ৬ জন গর্ভপাত অধিকার আইন বাতিলের রায় দেন। যার ফলে, দেশটির অর্ধেক অঙ্গরাজ্যে নিষিদ্ধ হতে পারে গর্ভপাত। এরই মধ্যে, ১৩টি রাজ্য এই বিষয়ক আইন পাস করেছে। কঠোরভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, মানা হবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা।

রায়ে কিছুটা ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার ডেমোক্র্যাট মিত্ররা। স্পষ্টভাবেই তারা জানান, মর্মান্তিক ভুল করেছেন আদালত। জো বাইডেন বলেন, ব্যক্তি ও পারবারিক স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের জায়গায় আমি বিশ্বাস করি, সাংবিধানিক আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে ‘রো বনাম ওয়েড’র সিদ্ধান্তটিই ছিল সঠিক। রায়ের দিনটি অবশ্যই দেশ এবং আদালতের জন্য একটি কালো দিন। তবে যুদ্ধ এখানেই শেষ হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে রো বনাম ওয়েড সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল করা জরুরি। এই কাজটি যারা করবে তাদের নির্বাচিত করতে হবে। এই রায় দিয়েছে এমন তিন বিচারকের নিয়োগ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

১৯৭৩ সালের ঐ আইন বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, গর্ভপাত অধিকার আইন বাতিলের মাধ্যমে সংবিধান রক্ষা করলেন সুপ্রিম কোর্ট। এটি আইনের শাসন এবং জীবনাচরণের জয়। দশকের পর দশক, যে লাখো-কোটি মানুষ প্রার্থনা করছিলেন, তাদের স্বপ্ন পূরণ হলো আজ। আপনাদের ভালোবাসা, বলিদান এবং ধর্মানুরাগ এতোদিনে পেলো সঠিক সম্মান। অভিনন্দন!

মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবীরা ব্যক্ত করেছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়। তাদের অভিমত, এর ফলে ধর্ষকের সন্তান গর্ভধারণে বাধ্য হবেন নারীরা। প্রো-লাইফ ডিরেক্ট অ্যাকশন লিগের নির্বাহী পরিচালক এরিক শেইডলার বলেন, একজন মানুষকে গর্ভে ধারণ করাটাই সুপার পাওয়ার। অথচ, ধর্ষণের শিকার নারীদের আমরা ধিক্কার দেই। সমাজ তাদের গর্ভপাতে বাধ্য করে। সন্তানকে হত্যার জন্য সারাজীবন সেই নারী ভোগেন অনুশোচনায়। অথচ, সমাজে বুক ফুলিয়ে হাটে ধর্ষক। এতোদিন গর্ভপাতের সুযোগ থাকায় সহজেই পতিতালয়ে নিপীড়িত হয়েছেন দরিদ্র নারীরা।

অন্যদিকে, জেনস’ কালেক্টিভের মানবাধিকার কর্মী হিদার বুথ বলেন, আদালতের এই রায় বড় সংকট। কারণ, দেশের প্রতি পাঁচজন মায়ের একজন গর্ভপাত করিয়েছেন। সন্তান পালনের সামর্থ্য নেই বা ছোট পরিবার রাখতে চান; থাকতে পারে এমন হাজারো কারণ। এখন, গর্ভপাতে অবৈধ পথ অবলম্বনের প্রবণতা বাড়বে। অথবা, বাধ্য হয়েই ধর্ষকের সন্তানকে জন্ম দিতে হবে।

গেলো মে মাসে, রয়টার্স-আইপিএসওএস পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে, ৭১ শতাংশ আমেরিকানের চিন্তাধারা অনুসারে, গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং তার চিকিৎসকের। ২৬ ভাগ মার্কিনী জানিয়েছেন, বৈধ হওয়া প্রয়োজন গর্ভপাত। বিরোধী অবস্থানে ছিলেন মাত্র ১০ ভাগ।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply