সুচির ভাষণে ৫টি মিথ্যাচার

|

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি গতকাল এক ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলেছেন। ভাষণের পরপরই বিশ্বজুড়ে নতুন করে নিন্দার মুখে পড়েন তিনি। শান্তির জন্য নোবেল পাওয়া এক সময়ের এই গণতান্ত্রিক নেত্রীর বক্তব্যে হতাশ হয়েছেন সবাই। নিজের ভাষণে সুচি কী ধরনের মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছিলেন তা তুলে ধরেছে ব্রিটেনের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকা। কয়েকটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর পয়েন্ট নিচে তুলে ধরা হল-

১.
সুচি তার ভাষণে বলেছেন, “শান্তিপূর্ণভাবে বেশ কয়েকটি মাস কাটার পর ২৫ আগস্ট ৩০টি পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালায় সশস্ত্র গ্রুপ।”

সুচির এই বক্তব্য অর্ধসত্য। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর বর্তমান সংঘাত শুরু হলেও নিপীড়িত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির আবাসস্থল রাখাইনের উত্তরাঞ্চল কখনো ‘শান্তিপূর্ণ’ ছিল না। হামলার আগের কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকার শত শত রোহিঙ্গাকে কোথাও কাজে যেতে এবং খাবার সংগ্রহ করতে দেয়া হচ্ছিল না।

এছাড়া ওইসব এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায়। কখনো কখনো সেসব ‘নিধন অভিযান’ রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে সরকারি তথ্যদাতাদেরকে হত্যা করার।

২.
সুচি বলেছেন, “দায় এড়ানো ও কাউকে দোষারোপ করার কোনো অভিপ্রায় মিয়ানমার সরকারের নেই। আমরা সব ধরনের মানবাধিকার লংঘন ও আইন বহির্ভূত সংঘাতের নিন্দা জানাই।”

গার্ডিয়ান এই বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেছে। বৌদ্ধপ্রধান দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বর্তমান সংঘাতের জন্য বারবার ‘উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী’দেরকে দায়ী করে এসেছে। এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনতার দ্বারা সংঘটিত অপরাধের কোনো নিন্দা করেনি সরকার।

৩.
সুচি দাবি করেন, “৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রাখাইনে কোনো ধরণের সশস্ত্র সংঘাত হয়নি, এবং (সেনাবাহিনীর) ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ও চালানো হয়নি।”

এটি ডাহা মিথ্যাচার। গার্ডিয়ান প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে লিখেছে, “গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া অব্যাহত রয়েছে। এসব দৃশ্য বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়। ৫ সেপ্টেম্বরের পরও নিয়মিত সশস্ত্র সংঘাতের তথ্য পাওয়া গেছে। সুচির কার্যালয় তাদের ফেসবুক পেইজে জানিয়েছে যে, ৫ সেপ্টেম্বরের পরও ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।”

৪.
সুচি বলেছেন, “রাখাইনে বসবাসকারী সবাই কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়াই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পায়।”

মিয়ানমারের নেত্রীর এটিও একটি চরম মিথ্যাচার। রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগেরই নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। এবং সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে তারা বঞ্চিত। তারা স্বাস্থ্যসেবা পায় না বললেই চলে। অনেককেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেয়া হয় না। বিশেষ করে যেসব রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পে থাকেন, তারা অনুমতি ব্যতিত বাইরে বের হতে পারেন না।

৫.
সুচি বলেছেন, “(রোহিঙ্গাদের) ৫০ শতাংশের বেশি গ্রাম অক্ষত রয়েছে।”

এটি অর্ধসত্য বক্তব্য। তিনি ৫০ শতাংশ গ্রাম অক্ষত থাকার কথা বললেও বাকি ৫০ শতাংশ গ্রাম যে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে সেটি মুখে উল্লেখ করেন নি। ‘৫০ শতাংশ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আর ৫০ শতাংশ অক্ষত আছে’- এমনটি বললে সত্য কথন হতো। তবে সুচির বক্তব্য পরোক্ষভাবে হলেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দেয়া তথ্যের সাথে মিলে যাচ্ছে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছিল, রোহিঙ্গাদের অন্তত ২১৪টি গ্রাম একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, যা মোট এলাকার ৪০ শতাংশ।

/কিউএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply