পেটের ক্ষুধা ও ঋণের বোঝায় দিশেহারা সিলেটের বানভাসি মানুষ

|

সিলেটের বন্যায় দুশ্চিন্তায় হাজারো বানভসি মানুষ।

সিলেটের বন্যার পানি যত নামছে ততই ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। সেই সাথে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ-দুশ্চিন্তা। বানভাসিদের কেউ কেউ ক্ষুধার জ্বালায় কাতর; কারো ঘুম নেই ঋণের কিস্তির চিন্তায়।

এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিল সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সুলতান ও মিনারা দম্পত্তি। সোনালী ধানে যখন পাক ধরেছিল, কেটে ঘরে তুলবে এমন স্বপ্ন বুনছিল দুজন; ঠিক তখনই উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে সব। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে এই দম্পতির স্বপ্ন। তারা জানিয়েছেন, খুব বেশি ধান কাটা হয়নি তাদের। আর বাকি ধানের পুরোটাই তলিয়ে গেছে পানির নিচে। ঘরে কেবল আছে তিন বস্তা ধান। এই নিয়ে কতদিন চলবে তা নিয়ে আছে অনিঃশেষ দুশ্চিন্তা। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের সবকিছু ভেসে যায় পানিতে। কোনো রকমে জীবন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন তারা। এরকম দুর্দশার সম্মুখীন এর আগে কখনোই হতে হয়নি বলে জানান এই দম্পতি। নৌকা নেই, ধান নেই, বাড়িও ধ্বংস হয়ে গেছে বন্যায়।

বন্যার পানি আরেকটু কমলে বাড়ি ফিরতে চান আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষেরা। কিন্তু একদিকে পেটের ক্ষুধা, অন্যদিকে ঋণের বোঝা; সব মিলিয়ে দিশেহারা তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও কিস্তি কীভাবে দেবেন, এই নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই এই মানুষদের। সিলেটের হাজার হাজার বানভাসি মানুষের কাটছে নির্ঘুম রাত। বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। ঘর থেকে কোনোকিছুই নিয়ে আসতে পারেননি অনেকেই। কোম্পানীগঞ্জ ঘুরে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া বানভাসিদের ভাগ্যে জুটেছে কিছু শুকনো খাবার আর চাল। কিন্তু বসতভিটার মায়ায় যারা ঘর ছাড়েনি তাদের খবর নেয়নি কেউ। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এক নারী জানান, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা বলেছেন তাদের কাছে কোনো ত্রাণ আসেনি। কিন্তু তারা শুনেছেন ত্রাণ সামগ্রী এসেছে। কিন্তু বানভাসিদের ভাগ্যে জোটেনি তার কিছুই।

পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আবার জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সিলেটের বানভাসি মানুষ। কিন্তু তাদের কপালে চিন্তার বলিরেখা। প্রতি বছরই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বস্ব হারানো যেন তাদের অলঙ্ঘনীয় জীবন বাস্তবতা। স্থানীয়রা বলছেন, চিরস্থায়ী সমাধান হিসেবে নদী খনন ও বাঁধ নির্মাণ করা না হলে এই সমস্যা থেকেই যাবে; মানুষের ভোগান্তির লাঘবও সম্ভব হবে না।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply