রহস্য রেখেই শেষ ‘অজানা উড়ন্ত বস্তু’ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক শুনানি

|

ক্যামেরায় ধারণকৃত অজানা উড়ন্ত বস্তু। ছবি: সংগৃহীত

৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউএফও বা ‘অজানা উড়ন্ত বস্তু’ দেখতে পাওয়ার বেশ কিছু ঘটনা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক গণশুনানি শেষ হয়েছে অস্পষ্ট কিছু উত্তরদানের মাধ্যমে। সেই সাথে, বেশকিছু প্রশ্নের জবাব কারও পক্ষেই দেয়া সম্ভব হয়নি বলে মঙ্গলবার (১৭ মে) অনুষ্ঠিত এই শুনানি শেষ হলেও রয়ে গেছে রহস্য। খবর বিবিসির।

মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব কাউন্টার টেররিজমে অনুষ্ঠিত হয় এই গণশুনানি। ভিডিওতে ধারণকৃত ইউএফও’র দৃশ্যগুলো তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, বেশিরভাগ ঘটনার ব্যাখ্যা ও বস্তুসমূহের শনাক্তকরণ সম্ভব। সেই সাথে, কয়েকটি ঘটনা তাদের ব্যাখ্যার অতীত বলেও মন্তব্য করা হয়েছে এই শুনানিতে। এ সময় পেন্টাগনের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা রোনাল্ড মল্টরি বলেছেন, চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বেশিরভাগ ইউএপি বা ব্যাখ্যাতীত আকাশচারী বস্তুর শনাক্ত করা সম্ভব, তবে সব নয়। তিনি বলেন, এমন সব ঘটনার রেকর্ড আমরা পেয়েছি যাকে চাইলে বিচ্ছিন্ন ভাবা যায়; চাইলে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে শনাক্তও করা যেতে পারে। আবার দরকার হলে, এসবকে এড়িয়েও যাওয়া যায়।

ছবি: সংগৃহীত

এই শুনানিতে হাজির করা হয় ২০০৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত নথিভুক্ত ৪০০’র বেশি ঘটনা, যেখানে মিলিটারি পাইলটরা এরকম অজানা উড়ন্ত বস্তুর সম্মুখীন হন। শুধুমাত্র গত এক বছরেই এরকম ১৪৪টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানায় পেন্টাগন। এই ঘটনাকে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবেও দেখা হয়েছে। এই রিপোর্টে ‘অ্যালিয়েন’ বা ‘ভিনগ্রহের প্রাণী’র মতো কোনো শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। তবে বস্তুগত অস্তিত্ব থাকা এসব জিনিস যে পৃথিবীর বাইরে থেকে আসেনি, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া হয়নি। তবে এসব আসলেই কী, তার কোনো জবাবও দেয়া সম্ভব হয়নি শুনানিতে। যেসব সেন্সরের মাধ্যমে এসব অজানা উড়ন্ত বস্তুকে চিহ্নিত করা গেছে, সেসব সেন্সর ছিল রণতরী বা যুদ্ধবিমানে। তবে জানা যায়নি, এসব বস্তু এত বেশি গতি কীভাবে লাভ করলো।

শুনানিতে একটি ঘটনা সম্পর্কে বলা হয় যে, সেটা কোনোভাবেই ‘এক্সট্রা-টেরেস্টেরিয়াল’ বা পৃথিবীর বাইরের কিছু নয়। কিন্তু সেই ঘটনায় যে ব্যাখ্যা হাজির করেছে পেন্টাগন, তা হয়তো অনেকেরই মনঃপুত হবে না। পিরামিড আকৃতির যে ব্যাখ্যাতীত আকাশচারী বস্তুর অস্তিত্ব ধরা পড়েছিল, সেটার বিখ্যাত ছবিটি নেয়া হয় ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের কাছে ডেস্ট্রয়ার নামক রণতরী থেকে। তখন পিরামিড আকৃতির সেই বস্তুর ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া যায়নি। তবে আটলান্টিক উপকূল থেকে নেভির ক্যামেরায় ধারণকৃত আরেকটি ভিডিও পাওয়া গেছে। এরপর দুটি ভিডিও তুলনা করে দেখা যায়, পিরামিড আকৃতি পাওয়া গেছে এখানেও। পরে বলা হয়, নেভির রণতরীর কাছেই সে সময় ছিল একটি ড্রোন। তারপর গবেষণার পর আরও বলা হয়, বিখ্যাত সেই পিরামিড আকৃতি আর কিছুই নয়, নাইটস্কোপ ক্যামেরায় ধরা পড়া ড্রোনের আলো; যার ছবি তোলা হয়েছে ডিএসএলআর ক্যামেরায়। তবে এই ব্যাখ্যায় হয়তো ইউএফও বিশেষজ্ঞরা কোনোভাবেই সন্তুষ্ট হবেন না। কারণ, ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল থেকে প্রশান্ত মহাসাগর কিংবা আটলান্টিকের ছবি ধারণের ক্ষমতা কোনো ড্রোনেরই থাকার কথা নয়।

আলোচিত পিরামিড আকৃতির অজানা উড়ন্ত বস্তু। ছবি: সংগৃহীত

শুনানিতে কয়েকটি ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ২০০৪ সালের এরকম একটি ঘটনায় প্রশান্ত মহাসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরী থেকে চালিত যুদ্ধবিমানের পাইলটরা একটি বস্তুর সম্মুখীন হন; যা হঠাৎ করে কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে এসে আচমকা থেমে যায়, এবং ঝুলছিল বলেও মনে হয়।

মঙ্গলবারই (১৭ মে) প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখানো হয় আরও এক ধারণকৃত দৃশ্য। ক্যামেরায় ধরা পড়া একটি বস্তুকে উড়তে দেখা যায় মার্কিন নৌবাহিনীর একটি ফাইটার জেটের পাশ দিয়ে, যা থেকে গেছে ব্যাখ্যাতীত।

নৌ গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর স্কট ব্রে বলেন, কিছু উড়ন্ত বস্তুর বৈশিষ্টকে হাতের কাছে থাকা তথ্য উপাত্ত দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় না। স্বাভাবিকভাবেই এগুলো আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ সৃষ্টি করে।

নাইট ভিশন ক্যামেরায় ইউএফও। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাখ্যাতীত আকাশচারী বস্তুগুলোর সাথে বুদ্ধিমান অ্যালিয়েনের সংযোগের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে স্কট ব্রে বলেন, কোনো জৈব বা অজৈব উপাদান বা ব্যাখ্যাতীত ধ্বংসাবশেষ কখনো উদ্ধার করা হয়নি এবং অজানা উড়ন্ত বস্তুর সাথে যোগাযোগের প্রচেষ্টাও সফল হয়নি।

গণশুনানির পর শুরু হয় উপস্থিত মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সাথে সামরিক গোয়েন্দাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। এসব ব্যাখ্যাতীত আকাশচারী বস্তুসমূহ জাতীয় হুমকি কিনা, সে শঙ্কা প্রকাশ করা হয় সেই বৈঠকে। আরকানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর রিক ক্রফোর্ড বলেন, অ্যালিয়েনের আকাশযান খুঁজতে আসিনি আমরা। তবে এসব বস্তুর পরিচয় আলোর মুখ না দেখা হয়তো গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার পরিচায়ক।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply