কাভারে ঝলকে উঠবে না বিদ্যুৎ, বিদায় সাইমো

|

ছবি: সংগৃহীত

আরও একটি মন খারাপের সকাল ছিল আজ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। সূর্য ওঠার আগেই উপমহাদেশের সমর্থকরা জানলেন, মাত্র ৪৬ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন সাবেক অজি ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। শেন ওয়ার্ন ও রড মার্শের মৃত্যুর পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আকাশে আরো এক তারকার বিদায়। শনিবার (১৪ মে) রাতে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় জীবন প্রদীপ নিভে যায় অজিদের হয়ে দু’টি বিশ্বকাপজয়ী এই অলরাউন্ডারের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৬ বছর।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সোনালী সময়ে আবির্ভাব অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের। ১৯৯৮ সালে অভিষেকের পর তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই অজিদের হয়ে খেলেছেন নিয়মিত। ছিলেন ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। ২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে দলের বিপর্যয়ের মুখে খেলেছেন ১২৫ বলে ১৪৩ রানের অনবদ্য ইনিংস। সব মিলিয়ে ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রায় ৭ হাজার রান ও ১৬৫ উইকেট তার। সবচেয়ে বেশি সফল ছিলেন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে। তবে সংখ্যার কী সাধ্য সাইমন্ডসের প্রভাবকে প্রকাশ করার!

ছবি: সংগৃহীত

তবে ২২ গজের চেয়ে মাঠের বাইরেই বেশি জনপ্রিয় ছিলেন সাইমন্ডস। প্রচণ্ড রসবোধ ও জীবন উপভোগের মন্ত্রে ছিলেন সতীর্থদের মধ্যমণি। তার অকাল বিদায় মেনে নিতে পারছেন না কেউই। বিশ্বস্ত বন্ধু হারানোর কষ্টে ডুবে আছেন গিলগ্রিস্ট-গিলেস্পি-মাইকেল ক্লার্ক থেকে শুরু করে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।

প্রতিপক্ষের কাছে সাইমন্ডস ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশেষ করে ব্যাট হাতে তার আগ্রাসী রুপ স্বস্তি দেয়নি বোলারদের। সেই সাইমন্ডসেরও মন ভেঙ্গেছিল ২০০৮ সালে ‘মাঙ্কিগেট’ ঘটনায়। ঘরের মাঠের সেই সিরিজে তাকে ‘বাঁদর’ ডেকেছিলেন ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং। যদিও সেই অভিযোগের স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল সাইমো ও তার দল। এই ঘটনা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করেছিল অস্ট্রেলিয়ান তারকাকে। সপ্তাহ তিনেক আগে এক আড্ডায় ব্রেট লিকে জানিয়েছিলেন সে কথা।

সাইমন্ডসের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সেই হরভজনই। শোক প্রকাশের মিছিলে নাম লিখিয়েছেন অনিল কুম্বলে, ভিভিএস লক্ষণ, শোয়েব আক্তার, মাইকেল ভন, গ্রায়েম সোয়ানরা।

সাইমন্ডসের ক্যারিয়ারজুড়েই ছিল নানা বিতর্ক। তবে, সমালোচনা সইতে হয়েছে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের ঘটনাতেই। যদিও সেসবের প্রভাব মাঠে পড়তে দেননি একদমই। আগ্রাসী ব্যাটিং, কার্যকর মিডিয়াম পেস ও স্পিন বোলিংয়ের সাথে ফিল্ডিংয়ে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস ছিলেন সময়ের সেরা। বৃত্তের ভেতর বা বাইরের ফিল্ডিং থেকেও হঠাৎই দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনতে পারতো তার নির্ভুল নিশানা। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজ সিং ও রবিন উথাপ্পার জুটিতে যখন ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, তখন কাভারে বিদ্যুৎ বেগে ডাইভ দিয়ে অকল্পনীয় ক্ষিপ্রতায় তালুবন্দি করেন বল। এতোটাই অবিশ্বাস্য ছিল সাইমন্ডসের রিফ্লেক্স যে, উথাপ্পা মাঝ ক্রিজে দাঁড়িয়ে কেবল তাকিয়ে দেখলেন সেখান থেকেই সরাসরি থ্রোতে সাইমো উপড়ে ফেললেন তার স্ট্যাম্প!

ছবি: সংগৃহীত

অজি কেতাদুরস্ত ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন না অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, ছিলেন তার মতোই। অনুশীলনের চেয়ে মাছ ধরার দিকেই ছিল বেশি ঝোঁক। হোতেলের ঘেরাটোপের চেয়ে নাইট ক্লাবের আলো আধারিই তাকে টানতো ঢের বেশি। তবে সকল প্রবণতার ঊর্ধ্বে চলে গেলেন বন্ধুদের সাইমো বা রয়। আর সারা বিশ্বের অগণিত ক্রিকেটামোদিদের কাছে অতি পরিচিত কাভারে দাঁড়ানো অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস; যার সম্পর্কে রিচি বেনো বলেছিলেন, ডাইভ দিয়ে বল হাতের মুঠোয় নিয়ে দুই পায়ের ওপর দাঁড়ানোর আগেই তার হাত থেকে চলে গেছে বল। ভেঙে যাওয়া স্ট্যাম্প দেখে ব্যাটার তখনই বুঝবেন, বেজে গেছে বিদায় ঘণ্টা।

কিন্তু এবার যে অকল্পনীয় ঘণ্টার আওয়াজে প্রস্থান করলেন সাইমন্ডস! এমন অপ্রত্যাশিত বিদায়ে এককালের ‘শত্রু’ হরভজনও বললেন, শান্তি পাক তার বিদেহী আত্মা।

/ এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply