সয়াবিন ও পাম তেলের নির্ধারিত মূল্য নিয়ে প্রশ্ন, সব পর্যায়েই কারসাজির অভিযোগ

|

সরল অংকে মিলে গেছে হিসেব। কিন্তু আসলেই কি তেলের দামের ক্ষেত্রে অংকটা এতো সহজ? সয়াবিন এবং পামতেলের নতুন যে দাম নির্ধারণ হয়েছে তা কতোটা যৌক্তিক? সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, একমাস আগের আন্তর্জাতিক বাজারের তথ্য ধরেই নির্ধারণ হয়েছে দাম। কিন্তু দাম নির্ধারণে হয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। তারওপর গেল কয়েকদিনে লুটে নেয়া হয়েছে দেড়শ কোটি টাকার বেশি। সব পর্যায়েই হয়েছে কারসাজি।

দেশে চাহিদার ৯০ ভাগ তেলই আমদানি নির্ভর। তাই বিশ্ববাজারে দাম উঠানামার ওপর নির্ভর করে স্থানীয় বাজার। কিন্তু স্থানীয় বাজারে যে দামে তেল বিক্রি হচ্ছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও রয়েছে বড়সড় প্রশ্ন। ঈদের একদিন পর ভোজ্যতেলের নতুন দাম বেধে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে এক লাফে লিটারে দাম বেড়েছে ৩৮ টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে নির্ধারণ হলো দাম?

দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কয়েকটি খাতের কথা উল্লেখ করলেন ট্যারিফ কমিশনের সহকারী প্রধান মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিসটেম লস, টেমপ্রিসিয়েশন (অস্থায়ীকরণ), সেলিং অ্যাডমিনিসট্রেটিভ এক্সপেন্স এবং ব্যাংক ইন্টারেস্ট এই বিষয়গুলো হিসেব করে যে দাম আসে সেটিই নির্ধারণ করা হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি মাসের জন্য তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমলে নেয়া হয় এপ্রিল মাসের বিশ্ববাজারের দর। দেখা যায়, ১ হাজার ৭৯০ ডলারে নিষ্পত্তি হয় এলসি। ১ ডলার ৮৯ টাকা ধরে হিসাব কষলে প্রতি টন সয়াবিন তেলের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। এই দামের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও অন্তত ৩০টি ব্যয়ের খাত। ট্যারিফ কমিশনের হিসেবে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম দাঁড়ায় ২০০ টাকা।

তবে ব্যয়ের খাতের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, এই যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এই তেলটা কবে থেকে আনা? নতুন লেবেল না লাগানো পর্যন্ত এই দাম নেয়ার সুযোগই নেই। তাছাড়া সরকার তেলের ওপর যে ট্যাক্স প্রত্যাহার করেছে সেটি অব্যহত থাকলে এই দাম অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন এমদাদ হোসেন মালেক। বলেন, তেমন হলে একদিকে সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হবে, অন্যদিকে জনতার পকেট কাটা যাবে। পাশাপাশি, এলসি ওপেন থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত মনিটরিং দরকার বলে মনে করেন তিনি।

পাম তেলের ক্ষেত্রেও একই সূত্র ব্যবহার করে ট্যারিফ কমিশন। দেখা যায়, ১ হাজার ৭৫০ ডলার ধরে টাকার অংকে প্রতিটনের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বলা হচ্ছে, মিল মালিক পর্যায়েই শুধু নয়, পাইকারি এবং খুচরা সবক্ষেত্রেই হয়েছে কারসাজি। সবক্ষেত্রেই তেল মজুদ করে রেখে সংকট সৃষ্টি করা হয়। নতুন করে মূল্য নির্ধারণের পর লুটে নেয়া হয়েছে দেড়শ কোটি টাকা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে ৩৫-৪০ হাজার টন পাইপলাইনে তেল আছে, যেগুলো পুরানো দামে কিনেছে কিন্তু এখনও ভোক্তার কাছে পৌঁছায়নি। সেই তেল যদি পুরানো দামে বিক্রি করতে পারে তাহলে অংকটা খুবই সহজ।

তেলের দাম কমালে, তা বাজারে প্রভাব পড়তে দীর্ঘ সময় লাগে। তবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঠিক তার বিপরীত। পুরনো দামের তেল বিক্রি করা হচ্ছে বেশি দামে। অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, যখন আমরা দাম কমালাম তখন তাদের পুরানো দামের তেল বাজার থেকে শেষ হতে ১৫ দিন সময় লাগলো। কিন্তু যখনই দাম ৩৮ টাকা বাড়ানো হলো, রোববারের মধ্যেই তেল বাজারে চলে এসেছে। এ ক্ষেত্রে দাম কমানো ও বাড়ানোর ক্ষেত্রে মিল মালিকদের ভূমিকা একই হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply