স্কুল মাঠ ফাঁকা, ফলাফল জানতে ভিড় সাইবারক্যাফেতে!

|

মেহেরুল সুজন, বগুড়া

রোববার দুপুর ১টার দিকেও কোনো ফলপ্রার্থী বা অভিভাবকের দেখা মিললো না বগুড়া জিলা স্কুল মাঠে! কয়েক বছর আগেও ফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে এই মাঠ ভরে থাকতো ফলপ্রার্থীদের পদভারে। সন্তানের ফলাফল নিয়ে সহজাত চিন্তায় থাকা বাবা-মায়েরও দেখা মিলতো স্কুলের ভেতর। তারপর ফল ঘোষণা শেষে আনন্দে ভেসে যাওয়া মেধাবীরা খুশিতে ভাসিয়ে দিতো পুরো স্কুলপ্রাঙ্গন। তাদের হইচই আর খুশির নাচনে মুখরিত হয়ে উঠতো আশপাশ। ইন্টারনেটে ফলাফল জানার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এমন উৎসবমুখর পরিবেশ কমতে শুরু করে বগুড়ার স্কুলগুলোতে।

এবারো ফলাফল প্রার্থী বা অভিভাবকদের দেখা মেলে নি বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিনয় স্কুল কিংবা বিয়াম মডেল স্কুলে। যদিও নিয়ম করে ঠিকই দুপুর ২টার দিকে স্কুলে স্কুলে টানানো হয়েছে ফলাফল। দুপুর ১২টার আগে থেকেই ফলপ্রার্থীদের ভিড় দেখা গেলো শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকার সাইবার ক্যাফেগুলোতে। কোনো সাইবারক্যাফেই ফাঁকা নেই। অপারেটররা বসে আছেন শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট খুলে, আর শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা কাগজের টুকরোয় রোল-রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লিখে নিয়ে অপেক্ষা করছেন ফলাফলের! ইন্টারনেটে ফলাফল জানার সুযোগ ঘটতেই দেখা মিললো চিরচেনা খানিকটা উচ্ছ্বাসের। তবে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে এসএসসির ফলাফল জানার যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, তার কাছে বাজারের ভেতরে দোকানে দাঁড়িয়ে ফলাফল জানার উচ্ছ্বাস যেনো অনেকটাই ম্রিয়মান।

ইন্টারনেটে ফল জানতে আসা জাকিরুল ইসলাম জানালো, বন্ধুরা কেউ স্কুল যায় নি ফলাফল আনতে, সবাই সাইবার ক্যাফেতে চলে এসেছে। তাই সে নিজেও স্কুল না গিয়ে ফলাফল জানতে এসেছে এখানেই।

সন্তানের সঙ্গে ফলাফল জানতে সাইবার ক্যাফেতে আসা বেলাল হোসেন জানান, স্কুলে ২ টার আগে ফলাফল জানানো হবে না। কিন্তু ইন্টারনেটে তার অনেক আগেই ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে, তাও আবার বিষয়ভিত্তিক ফলাফলসহ। তাই ফলাফল জানতে এখন আর স্কুলে যাওয়া হয় না।

শিক্ষাবিদ বজলুল করিম বাহার বলছেন, একসময় স্কুলমাঠে ফলাফল জানার জন্য যে অপেক্ষা, ফল পাবার পর যে আনন্দানুভূতি-প্রযুক্তি সেটি থেকে আজকের প্রজন্মকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এখন আর সকাল থেকে দুপুর বা বিকেল পর্যন্ত স্কুল মাঠে ভিড় দেখা যায় না ফলপ্রার্থী কিংবা বাবা-মা’র। স্কুলে ফল আসার আগেই সবাই ইন্টারনেটে পেয়ে যাচ্ছে। এটি বাহ্যিকদৃষ্টিতে ভালো দেখালেও এর একটা খারাপ দিকও আছে। স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে বড় একটি পাবলিক পরীক্ষার ফল জানার যে নির্মল আনন্দ, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আজকের শিশুরা। সামাজিক বিবর্তনের ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ছে তাদের শৈশবের আনন্দস্মৃতির সময়গুলো।

এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও বেশ ভালো করেছে বগুড়ার কয়েকটি স্কুল। বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৩৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় পরীক্ষায়। শতভাগ পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮৫ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে বগুড়া ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ২৮০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭৬ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অংশ নেয়া ২৭৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছ ২৩৭ জন। আর বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২৫৭ জন পরীক্ষার্থী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০২ জন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply