যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কূটনৈতিক দায়িত্ব ত্যাগকারী প্রথম কূটনীতিক ছিলেন মুহিত

|

প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত। ছবি: সংগৃহীত।

মারা গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আবদুল মুহিত দেশের সফল ও রেকর্ডধারী অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মোট ১২বার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন তিনি।

১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের ধোপাদীঘির পাড়ের নিজেদের বাড়িতে জন্ম আবুল মাল আবদুল মুহিতের। দাদা খান বাহাদুর আবদুর রহিম ব্রিটিশ ভারতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন আইনজীবী। মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী গৃহিণী।

১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এএমএ মুহিত। এরপর ১৯৫৬ সালে লাহোরস্থ সিভিল সার্ভিস একাডেমি হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের কর্মজীবন শুরু করেন মহকুমা হাকিম (এসডিও) হিসেবে। অর্থমন্ত্রীত্ব লাভের আগে আগে প্রশাসন ও কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তিনি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

এএমএ মুহিত ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স অপ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬০-১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কর্মরত অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে তমগা-এ-খেদমত খেতাবে ভূষিত হন এএমএ মুহিত। তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা কমিশন প্রধান ও ডেপুটি সেক্রেটারি থাকাকালে তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রদান করেন। সেটি ছিল ওই সংক্রান্ত প্রথম প্রতিবেদন।

এরপর ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের ইকনমিক কাউন্সিলর পদে যোগদান করেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনিই প্রথম পাকিস্তানি কূটনীতিক যিনি বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তানে তার কূটনৈতিক দায়িত্ব ত্যাগ করেন।

দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন এএমএ মুহিত। পরে ১৯৭৭ সালে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয় তাকে। তিনি ১৯৮১ সালে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। এরপর বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবি ও জাতিসংঘ সংস্থাসমূহে কার্যক্রম শুরু করেন। পাশাপাশি ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদ এ কাজ করেছেন গৌরবের সাথে।

এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এএমএ মুহিত। ২০০১ সালে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে জয়ী না হলেও তিনি ‘আলোকিত সিলেট’ গড়ার লক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি সিলেট-১ সংসদীয় আসনের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

এএমএ মুহিত জীবদ্দশায় অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে।

সাবেক অর্থমন্ত্রীর বড়ভাই প্রয়াত জনাব এএমএ মসিহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন।
এএমএ মুহিতের সবচেয়ে তার ছোটভাই একে আবদুল মুবিন সাবেক সচিব ও জালালাবাদ এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি। এছাড়া তার ছোটভাই ড. একে আবদুল মোমেন বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এএমএ মুহিতের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ে সামিয়া মুহিত আন্তর্জাতিক ব্যাংকার, বড় ছেলে শাহেদ মুহিত স্থপতি এবং ছোট ছেলে বিদেশে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। মুহিতের সহধর্মিণী সৈয়দা সাবিহা মুহিত একজন ডিজাইনার।

তিনি টানা ১০বার সহ মোট ১২বার জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেছেন। ২০১৮-১৯ সালে বাজেট পেশের আগে গণমাধ্যমে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ইতোমধ্যে বাজেট উপস্থাপনের ক্ষেত্রে রেকর্ড করে ফেলেছি। টানা ৯টি বাজেট দিয়েছি। কোনো অর্থমন্ত্রী এর আগে টানা ছয়টির বেশি বাজেট দেননি। বাকি আছে আর একটি বাজেট। এটি দিলে টানা ১০টি। আর মোট বাজেট উপস্থাপন হবে ১২টি। তাতে অতীতের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলব।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply