১৩ বছর ধরে পলাতক ডাকাতি মামলার আসামি এখন জনপ্রতিনিধি!

|

বাঁয়ে মোস্তফা এবং ডানে শাহজাহান আলী।

১৩ বছর ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ডাকাতি মামলার এক আসামিকে। যমুনা টেলিভিশনের টিম থ্রি সিক্সটি ডিগ্রির অনুসন্ধানে তার খোঁজ মিললেও জানা গেছে, সেই আসামি এখন জনপ্রতিনিধি। তিনি পরিচয় লুকোতে গিয়ে ফাঁসিয়ে দেন আপন চাচাতো ভাইকে। তদন্তে গাফিলতি আর আসামির কূটচালে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ডাকাতির মামলা ঝুলছে একজন বেসরকারি এনজিও কর্মকর্তার ঘাড়ে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশায় চাকুরি করেন শাহজাহান আলী। কিন্তু তার নামে রয়েছে এক গ্রেফতারি পরোয়ানা। সেটিও আবার ছোটখাট মামলা নয়, রীতিমত ডাকাতি মামলা। শাহজাহান বলেন, এলাকায় একজনই ডাকাত, সেটা হচ্ছে মোস্তফা ডাকাত। উনি বলেছিলেন, আমি একজন দাগি আসামি। এজন্য কৌশলটি ব্যবহার করে আমি বেড়িয়ে এসেছি। নামটার সাথে তাই একটা নাম সংযুক্ত করে দিয়েছি।

এনজিও কর্মকর্তা শাহজাহান আলী।

অভিযোগের তির যায় চাচাতো ভাই মোস্তফার দিকে, যিনি এখন ঠাকুরগাঁও জেলার লেহেম্বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। কিন্তু তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বিষয়টি পরিষ্কার হতে খোঁজ নেয়া হয় ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল থানায়। সেখানে ওসি জাহিদ ইকবাল বলেন, শাহজাহান ওরফে মোস্তফা নামের একটি ওয়ারেন্ট আমাদের কাছে আছে। এটি লাল কালির ওয়ারেন্ট এবং পুরনো ওয়ারেন্ট।

লেহেম্বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোস্তফা।

এখান থেকে মামলার নথি কিংবা আসামির ছবি পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায়, ডাকাতির মামলাটি দায়ের হয়েছিল ২০০৯ সালে কেরানীগঞ্জ থানায়। তারপর কেরানীগঞ্জ থানা থেকে ১৩ বছরের পুরনো মামলার নথিপত্র পেলেও আসামির কোনো ছবি পাওয়া যায়নি। নথি বলছে, সেই মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৯ ডাকাত প্রত্যেকে ৩ মাস করে জেল খেটেছিলেন। অর্থাৎ, কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। মামলার ৭ নম্বর আসামি শাজাহান আলী ওরফে মোস্তফার ছবি ও তথ্য সংগ্রহের জন্যে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে পাওয়া যায় আসল আসামির ছবি, যা আদতে মোস্তফারই ছবি বলে প্রতীয়মান হয়।

নথিতে পাওয়া মোস্তফার ছবি।

এটি তার নিজের ছবি তা স্বীকার করে নেন রানীশংকৈল উপজেলার লেহাম্বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোস্তফা। তবে যে মামলায় জেল খেটেছেন তিনি সেখানে কেন শাহজাহানের নাম আসলো, এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মোস্তফা। কেবল অস্বীকারই করে গেছেন বিষয়টি। ২০০৯ সালে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এস.আই মাইনউদ্দিন। তিনি এখন ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নাম ঠিকানা যাচাই ছাড়া কীভাবে তিনি অভিযোগপত্র দিলেন। এরও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি ত্রিশাল থানার ওসি মোহাম্মদ মাইনউদ্দিনের কাছে।

অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে, গ্রেফতারের পর মোস্তফা স্থায়ী ঠিকানা ঠিক রাখলেও, নিজ নামের বদলে ব্যবহার করেন চাচাতো ভাই শাহজাহানের নাম আর বাবার জায়গায় চাচার নাম।

সেন্টার ফর লিগ্যাল এইড অ্যান্ড রিফর্মের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহমুদ আল মামুন বলেন, এখানে প্রকৃত আসামিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, নাম-ঠিকানার মিল নেই। যার নাম ব্যবহার করা হয়েছে তাকে এখন আদালতে হাজিরা দিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে, এটা সে নয়। তাই তাকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই না করে অভিযোগপত্র দায়ের করার কারণেই অসংখ্য নিরিহ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply