সুবর্ণ আইজ্যাক কি আসলেই প্রফেসর? যা জানা গেলো অনুসন্ধানে

|

ভাস্কর ভাদুড়ী:

মাত্র ছয় বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সুবর্ণ আইজ্যাক বারী, এমন প্রচারণা থাকলেও সেটির সপক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। গণিত, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞানে অসামান্য প্রতিভা রয়েছে শিশুটির। তবে সুবর্ণকে বিস্ময়বালক হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে তার পিতার অতিরঞ্জন, এমনই সমালোচনা প্রযুক্তিবিদদের। অসত্য তথ্যের কারণে উইকিপিডিয়া থেকেও সরানো হয়েছে সুবর্ণকে। তার বাংলাদেশে আগমন ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক।

বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে সুবর্ণর প্রতিভার কথা ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। তার পিতা দাবি করেন, দুবছর বয়স থেকেই গণিত, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞানে অসাধারণ মেধার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন সুবর্ণ। সেই থেকে শুরু নানা আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সুবর্ণকে জানানো হয় সম্মাননা। ২০১৮ সালে সুবর্ণকে বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, এমন দাবি করে বসেন পিতা রাশেদুল বারী। তবে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টচেক সংস্থা হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননা পত্রটি পরীক্ষা করে দেখেছে। সেখানে সুবর্ণর অদম্য মেধার স্বীকৃতি দেয়া হলেও অধ্যাপকের স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

গিনেস বুকস অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ঘেটে দেখা যায়, বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ অধ্যাপক আলিয়া সবুর। ২০০৮ সালে ১৮ বছর ৩৬২ দিন বয়সে কনকুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোনীত হন এই দক্ষিণ কোরিয়ান। এর আগে বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রফেসর ছিলেন ইংল্যান্ডের গণিতবিদ কলিন ম্যাকলরিন।

কিন্তু উইকিপিডিয়া ঘেটে সুবর্ণ বারীর নাম মেলেনি। ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, অসত্য তথ্যের কারণে বাদ দেয়া হয়েছে সুবর্ণ আইজ্যাককে। পিতা রাশেদুল বারীর ফেসবুক পেইজে সুবর্ণকে বিস্ময়বালক উল্লেখ করে প্রতিদিন নানা আপডেট দিতে দেখা যায়। অতিরঞ্জিত তথ্য দেয়ায় তাকে ফেসবুক থেকে সর্তক করারও প্রমাণ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি সুবর্ণ বারীর বাংলাদেশ সফরের ঘোষণায় জোর হাওয়া লেগেছে সমালোচনার পালে। দেশ-বিদেশের বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদদের মতে জন্মগত প্রতিভা থাকলেও অতিরঞ্জন দশ বছর বয়সী শিশুর জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। বিজ্ঞান লেখক নাইম হোসেন ফারুকী বলছেন, সম্প্রতি সুবর্ণ আইজ্যাকের নামে শোনা যায়, সে দ্য ভিঞ্চি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। তবে তিনি নিজে অনুসন্ধান করে দেখেছেন, এই অ্যাওয়ার্ড সুবর্ণ পায়নি। তবে আফ্রিকান একটি অখ্যাত অ্যাওয়ার্ড সে পেয়েছে বলেও জানান এই লেখক।

প্রযুক্তি গবেষক মো. ইকবাল বিন শাহীদ মনে করছেন, সুবর্ণর প্রকৃত অর্জন নথিপত্রসহ আলোচনায় আসা উচিত। এ নিয়ে বিতর্ক আখেরে প্রতিভাবান শিশুটির ক্ষতির কারণ হবে বলেও মনে করেন এই গবেষক।

বির্তকের মধ্যেই বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় স্মারক বক্তৃতায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে সুবর্ণকে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, প্রতিহিংসাবশত নানা বির্তক থাকলেও, জন্মগত মেধার স্বীকৃতি দিতে চায় তারা। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাই হলো সব ধরনের জ্ঞানকে একত্র করা।

দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পাবার যোগ্যতা রয়েছে সুবর্ণর, এমন প্রচারণাও চালান তার পিতা। ২০৪৮ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবেও সুবর্ণকে নিয়ে প্রচারণা করেছেন রাশেদুল বারী। তবে এসব বিতর্কের বিষয়ে রাশিদুল বারীর বক্তব্যের জন্য বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply