রাশিয়া নাকি ইউক্রেন, কোনদিকে যাবে বাংলাদেশ?

|

রাশিয়া নাকি ইউক্রেন? কোন পক্ষে যাবে বাংলাদেশ? এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানে সরকার। এমনকি এ ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটও দেয়নি ঢাকা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ সরকার। তবে এ নিরপেক্ষতার নীতি বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না বলে সংশয় তাদের। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব।

সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাশ হয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। সেখানে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪১টি দেশ, আর পক্ষে ছিল মাত্র ৫ দেশ। শক্তিধর চীন ছাড়াও ভারত এবং বাংলাদেশসহ ভোট দেয়নি ৩৫ সদস্য।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, একটি দেশের বিরুদ্ধে যখন সুনির্দিষ্ট কোনো রেজ্যুলুশন আনা হয় তখন আমরা সাধারণত ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া বিবৃতিতে অবশ্য ইউক্রেনে হামলার নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা। একদিকে মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া তথা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা আর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশটির বড় বিনিয়োগ- আবার যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ইস্যুর কারণে কৌশলী অবস্থানে ঢাকা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এসব বিষয় নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা চাই কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও শান্তি আলোচনার মাধ্যমে যেন এই বিরোধের সমাধান হয়।

অবশ্য প্রতি মুহূর্তে পাল্টাচ্ছে সমীকরণ। আলোচনা বা সাময়িক বিরতি যেমন আশা জাগায়, তেমনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলেরে মত ঘটনা আশঙ্কাজনকও বটে। অনেকের ধারণা, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে, তাতে বেশিদিন নিরপেক্ষ থাকা কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার যে অবস্থানে আছে তা এখন পর্যন্ত যথার্থ। তবে ভবিষ্যতে পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত বড় চ্যালেঞ্জের বা ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স রিডলের সামনে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান আরও বলেন, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক এই দুটো বিষয়কে এক করে ভূ-কৌশলগত পরিবর্তন, জ্বালানী ডিস্ট্রিবিউশন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সাথে সাথে আমাদের যে ফাইন্যান্সিয়াল ট্রানজেকশনগুলো আছে বা আমাদের যে ডিফেন্স রিলেশনগুলো আছে এগুলো নিয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে যে আমরা ভবিষ্যতে কীভাবে এগুলো পুর্ননির্ধারণ করবো।

বিশিষ্ট কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান বলেন, বিশ্ব দুটি প্রধান ক্যাম্পে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। এর একটির নেতৃত্ব দিবে চীন আর অপরটির নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। যেভাবে আমরা ‘সবার সাথে মিত্রতা ও কারো সাথে শ্ত্রুতা নয়’ নীতি অবলম্বন করছি, এই নীতি আমরা বেশিদিন ধরে রাখতে পারবো না বলেই আমার মনে হচ্ছে।

মেজর জেনারেল (অবঃ) মুনিরুজ্জামান আরও বলেন, সংবিধান যা বলে সেটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা কাজ করতে পারছি কী না, আমাদের নৈতিক অবস্থানগুলোর সাথে এই ভোটগুলো মিলছে কী না, বা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের নিরাপত্তার ওপরে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে সেটি বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি কী না সেটি বিবেচনা করলে আমার মনে হয় আমাদের ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দেয়া উচিত ছিল।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, নির্যাতিতদের পাশে দাড়ানোর কথা বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে দেয়া প্রথম ভাষণেই সেটি স্পষ্ট করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে ইউক্রেনে নোঙর করা জাহাজে গোলা হামলায় জীবন দিতে হয়েছে বাংলাদেশি এক নাবিককে। দেশটি থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন ছয় শতাধিক বাংলাদেশি। এখনও দু’তিনশ বাংলাদেশি ইউক্রেনে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply