যমুনার মুখোমুখি আরসা প্রধান আতাউল্লাহ, প্রথমবার সাক্ষাৎকার দিলেন কোনো গণমাধ্যমে

|

যমুনার মুখোমুখি আরসা প্রধান আবু আম্মার জুনুনি আতাউল্লাহ।

আতাউল্লাহ। পুরো নাম- আবু আম্মার জুনুনি। জন্ম ১৯৭৭ সালে, পাকিস্তানের করাচিতে। বাবা গোলাম শরীফ। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অষ্টম তিনি। ৬ বছর বয়সে চলে যান সৌদি আরবের রিয়াদে। ইসলামি শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা করেন মক্কা ও রিয়াদে। ২০১৩ সালে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসা’র প্রধান হিসেবে যোগ দেন।

অভিযোগ ওঠে, তিনি মিয়ানমার জান্তা সরকারের সৃষ্টি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় আরসা। ফলাফল- রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর অভিযান। নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা।

এই আতাউল্লাহ’র সাথে গত চার বছর ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করে যমুনা টেলিভিশন। অবশেষে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে অনলাইনে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হন তিনি। বিশ্বের কোনো টেলিভিশনে এই প্রথম তিনি আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার দিলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেলের এডিটর অপূর্ব আলাউদ্দিন


সাক্ষাৎকারের শুরুতেই তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদক এবং যমুনা টেলিভিশনকে স্বাগত জানান।

আপনি আরসার কী হিসেবে আছেন?

আমি আতাউল্লাহ, আবু আম্মার জুনুনি। কমান্ডার ইন চিফ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি।

আপনার সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? কেন আপনি এই সংগঠন গঠন করেছিলেন?

আপনার এটা জানেন যে, ১৯৪৮ সালে অনেক দেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল। মিয়ানমার সরকারও ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পায়। এরপর বার্মা সেনাবাহিনী নিজের জাতি ছাড়া বিভিন্ন জাতির ওপর নির্যাতন শুরু করে। ওরা মানুষকে মানুষ মনে করতো না। ওরা মানুষের সাথে পশুর মতো আচরণ করেছে। ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করে আসছে। ১৯৬০, ১৯৭০, ১৯৮২, ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করেছে। এমন কোনো নির্যাতন বাদ নেই যে, ওরা করেনি।  

কেন এই সংগঠন করার ইচ্ছা হলো আপনার?

২০১২ সালে বার্মা জালিম সরকার বেশি নির্যাতন শুরু করলো। বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ-মাদরাসা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। হাফেজখানার জীবিত ছাত্রদের পুড়ে মারে। মান্ডিলে প্রদেশ, রেঙ্গুন প্রদেশ ও নেপিদো (রাজধানী) প্রদেশগুলোতে মুসলমানদের ওপর বেশি বেশি নির্যাতন শুরু করে।

এসব দেখে আমি ‘আরসা’ গঠনের পরিকল্পনা করলাম। আগে পুরনো যেসব সংগঠন ছিল, তাদের ঐক্যবদ্ধ ও অ্যাকটিভ করার জন্য চেষ্টা করেছি। এসব সংগঠন আগে অনেক খারাপ কাজ করেছে, তারপরও রোহিঙ্গাদের স্বার্থে, রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করতে ওই সংগঠনগুলোর সাথে আমি এক হয়ে কাজ করতে চেয়েছি। আলোচনায় বসতে চেয়েছি। কিন্তু আমি সফল হইনি। ওই সংগঠনগুলো আমার কথায় রাজি হয়নি।

এরপর, আমি ২০১৩ সালে আমার বাড়ি-ঘর ছেড়ে আমি আরাকানে চলে আসি। আরাকানে আসার পর আমি এদিকের অবস্থা আমি নিজ চোখে দেখি। দেখার পর, আমার অন্তর অনেকে কেঁদেছে। রোহিঙ্গাদের অবস্থা যেন, পাখির বাসার মতো। পাখিরা যেভাবে তাদের বাসায় ভয়ে লুকিয়ে থাকে, সেভাবে রোহিঙ্গারাও ভয়ে ভয়ে দিন পার করে। রোহিঙ্গাদের এই দুর্দশা প্রত্যেককে বোঝাতে শুরু করি। রোহিঙ্গাদের বলতে থাকলাম যে, ‘আমরা পশু না, আমরা মানুষ। পুরো পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তাদের প্রত্যেকের স্বাধীনতা আছে। আমাদের রোহিঙ্গা জাতিরও অধিকার আছে’। এটা বোঝানোর পর আমি কাজ শুরু করি। প্রথমে ছাত্রদের বুঝিয়েছি। যুবকদের বুঝিয়েছি। যুবকরা প্রথমে অনেক ভয় পেয়েছিল। ওরা আমাকে বলে- ‘আপনার মতো অনেক লোক এসেছিল। আপনিও ওদের মতো আমাদের রেখে চলে যাবেন। পরে বার্মা সরকার আমাদের আবার নির্যাতন শুরু করবে’।
আমি বলেছি, ‘আমি চলে যাবার জন্য আসিনি। আমি এখানে থাকার জন্য এসেছি। তোমাদের  এই নির্যাতন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য এসেছি’। রোহিঙ্গাদের এই আশ্বাস দেয়ার পর কাজ শুরু করি। আমি বোঝানোর পর ওরা বুঝতে পারে যে, রোহিঙ্গারা কারো গোলাম না। তারা বুঝতে পারে, তারা তো মানুষ। আমাদের অধিকার আছে।

বোঝার পর, আমার দলে অনেক যুবক যোগ দেয়। এরপর আমার মনোবল চাঙ্গা হয়-আলহামদুলিল্লাহ। এরপর তাঁদেরকে আমি বিভিন্ন ধরণের ট্রেনিং দিয়েছি। গেরিলা ট্রেনিং দিয়েছি। ছেলেরা সবাই আমার সাথে মিশে গেছে-আলহামদুলিল্লাহ। পরে আরসা অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠে-আলহামদুলিল্লাহ।

বুঝতে পেরেছি আপনি ২০১২ সাল থেকে পুরনো সংগঠনগুলোকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন। তারা আপনাকে আস্থায় নিতে পারেনি। পরে আপনি নিজ থেকে একটা সংগঠন করলেন। ছাত্রদের মোটিভেটেড করে এই লাইনে এনেছেন। আপনি বলছিলেন- প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ কি আপনি দিয়েছিলেন, নাকি অন্য কেউ দিয়েছিলো?

আমার সাথে অন্য প্রশিক্ষক ছিলেন। যারা আরাকানে ছিল, তাদের আগে প্রশিক্ষণ ছিল। পুরনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাছ থেকে নতুনরা শিখেছে। এরপর বিভিন্ন সময় আমি যতটুকু পেরেছি, শিখিয়েছি। আমার সাথে কমান্ডার ছিল তারাও ট্রেনিং দিয়েছেন। যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল তাদেরকে আরো ঝালাই করা হয়। এরপর তারা খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারা সবাই সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করলো।

বর্তমানে আপনার সংগঠনের সদস্য সংখ্যা কত?

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের আরসার মধ্যে কয়েকটা বিভাগ আছে। পুরো জাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য, অধিকার আদায়ের জন্য আমরা কাজ করছি। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছি। তাদের শিক্ষিত করার জন্য চেষ্টা করছি। ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মাধ্যমে কাজ করি। মূল উদ্দেশ্য যেটা আমরা সামনে দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্নস্থানে ১৫ থেকে ১৬ হাজার আর্মি আছে আমাদের। আরাকানে সব সময় ২ হাজার থাকে। আর বাকি যারা আছে তারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পালাবদল করে তারা কাজ করছে।

এর মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কতজন?

৫ থেকে ৬ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আছে। এখানে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সব সময় দুই হাজার থাকি।

বাকি ১৩ হাজার কোথায় কোথায় থাকে?

অনেক অনেক জায়গায় আছে। তবে আমরা বলবো না। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক জায়গায় আছে। ক্যাম্প বলে কথা না, অনেক জায়গায় আছে। আমাদের কাজ একটা না। যেহেতু অনেক কাজ আছে। অনেক বিভাগ আছে। বিভিন্ন বিভাগে লোক নিয়োগ দিয়ে রেখেছি। আলাদা আলাদা কাজ দিয়ে। ওদের কাছ থেকে সার্ভিস নেই। এই সার্ভিসের জন্য তাদের বহু জায়গায় কাজ দিয়ে রেখেছি। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক জায়গার আমার কাজের লোকগুলো আছে।

আপনি হাশিমকে তো চিনেন। যিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। হাশিম আরসার কোন দায়িত্বে ছিলেন?

উনি সেকেন্ড-ইন-কমান্ডার ছিলেন না। উনি সিনিয়র কমান্ডার ছিলেন। এখানে মাঠে-ময়দানে কাজ করতেন। সময় সময় ক্যাম্পেও যেতেন। আত্মীয়-স্বজন ছিল, সেখানে যেতেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এখানে থাকতেন। কিন্তু শেষবার যাওয়া পর কী হয়েছে বুঝতে পারিনি। সরকারের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন শুনেছি। পরে শুনলাম এ রকম…এরকম। পরে ইন্টারনেটে ছবি দেখলাম মারা গেছেন।

আপনি বলছেন উনি সিনিয়র কমান্ডার ছিলেন। উনি কি ট্রেনিং দিতেন? ক্যাম্পে তো অনেক ট্রেনিং চলে। অনেকে আপনাদের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়-ছবিতে দেখা যায়

এগুলো ক্যাম্পের ছবি না তো। আরসার ক্যাম্পের ছবি নেই। থাকলেও, ওগুলো চোর-ডাকাতের ছবি। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কয়েকটি ডাকাত গ্রুপ আছে। তারা পুরনো সংগঠনগুলোর সাথে জড়িত। এসব লোকজনই পোশাক পরে ট্রেনিং দেয়। আরসা ট্রেনিং দিয়েছে এমন প্রমাণ নেই। এমন কোনো পোশাক নেই। ছবিও নেই। আরসা কীসের জন্য দিবে? আরসা তো আরাকানে।

কিছু ছবি দেখাতে চাই আপনাকে। দেখেন তো এগুলো আপনার সদস্য কিনা?

এটা কে? এটা তো আমাদের না। এটা ডাকাত, ডাকাত।

পোশাক?

এটা না। এগুলো ডাকাতের কাপড়। এসব ছবি থাকতে পারে। এসব ছবি আমি অনেক দেখেছি। এগুলো সব ডাকাতের ছবি। এগুলো অন্য সংগঠনের ছবি। যারা যুদ্ধ করার অজুহাত দেখিয়ে চুরি-ডাকাতি করে। ইয়াবা ব্যবসা করে। এরা সব ইয়াবার গডফাদার।

ক্যাম্পে কোন কোন গ্রুপ কাজ করে, আপনি জানেন?

আমি অনেক গ্রুপের নাম শুনেছি। তবে আমি উচ্চারণ করতে চাই না। কারণ, এটা আমার বলা ঠিক হবে না। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে প্রশ্ন করলে আপনি ভালো জানতে পারবেন, এরা কারা। বাংলাদেশে ১০টা গ্রুপ কাজ করে।

ক্যাম্পে ‘সিক্স মার্ডার’র অন্যতম অভিযুক্ত লাল মোহাম্মদের ছবি দেখানো হয় আতাউল্লাহকে। এই লাল মোহাম্মদ এখন মিয়ানমারে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে।

এই লোককে চিনেন? হুজুরের নাম লাল মোহাম্মদ।

আচ্ছা, এটা লাল মোহাম্মদ?

জ্বি জ্বি..

কী সমস্যা হয়েছে?

উনি কী দায়িত্বে আছেন?

উনি আমার সদস্য। উনি নামাজ শেখায়, দোয়া শেখায়। মানুষকে তাবলীগ জামায়াতে পাঠায়। দ্বীনের কথা বলে। এসব কাজ করে।

আপনাদের ইসলামী দলের নাম কী? এখানে যে ছয়টা মার্ডার হলো ক্যাম্পে। ইসলামি মাহাশ, ওলামা কাউন্সিল। ওলামা কাউন্সিল কি আপনার? নাকি, ইসলামী মাহাশ?

ওলামা কাউন্সিল আমার।

ওলামা কাউন্সিল আপনার। এখানে কতজন সদস্য আছে আপনার?

ওলামার ভেতর আরো বিভাগ আছে। সবগুলো আমার অধীনে চলে না। ওলামার অধীনে চলে। আমার অধীনে চলে না।

আপনার আরসার সাথে তো সবার যোগাযোগ আছে।

সম্পর্ক আছে। আমার সাথে যোগাযোগ আছে। আলাদা মানুষ চালায় এটা। আমাদের আলাদা আলাদা বিভাগ আছে। যিনি যে বিভাগের দায়িত্বে আছেন, তিনি সেই বিভাগ চালান।

আপনি তো প্রধান। আরসার সবগুলো শাখা তো আপনার অধীনে চলার কথা। এটা আলাদা চলছে কেন?

আমার অধীনেই আছে। আমি তো মিয়ানমারে থাকি, এখানে যুদ্ধ করছি। এখানে যুদ্ধ করলে ওখানে ছোটখাটো কাজে কি আমি নজর দিতে পারবো? আমি দিতে পারবো না।  

আপনি তাদের লিড দিতে পারছেন না? তারা কি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে?

লিড করি, আলহামদুলিল্লাহ। সব কিছু আমার পরামর্শে হয়। ওলামা কাউন্সিল আছে, ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আছে, মেডিক্যাল সার্ভিস আছে। যার যেটা করতে হয়, আমার সাথে পরামর্শ করে করতে হয়।

মাদ্রাসায় ৬ জন খুন হলেন। অভিযোগ উঠেছে, আপনার ওলামা কাউন্সিল গিয়ে ইসলামী মাহাশের লোকজনকে খুন করেছে

আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার কোনো ছেলে জড়িত না। এ ঘটনায় আমার ওলামা কাউন্সিলের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। আমার লোকজনের সাথে কোনো যুদ্ধ হয়নি। কিছু লোক বলে, আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুনোখুনি হয়েছে। আর কিছু লোক বলে, অন্য একটা সংগঠনের লোক অস্ত্রসহ ধরা খেয়েছে। এমন শুনেছি আমি। এগুলো আমার জানা নেই, এটা কারা করেছে।

আরসার বিরুদ্ধে সাধারণ রোহিঙ্গারা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়েছে, এটা দেখেছেন?

আপনি যদি দু’একটা ভিডিও দেখেন, তাহলে অনেক কম দেখেছেন। আরো অনেক দেখতে পারবেন। চোর-ডাকাতের হাতে অনেক টাকা। যারা ইয়াবা ব্যবসা করে ভিডিও করায়। প্রপাগান্ডা করতে ওদের কোন সমস্যা হয় না। ওদের এগুলো তো কষ্টের টাকা না। কষ্টের টাকা হলে, খরচ করতে কষ্ট হতো। ইয়াবার ব্যবসার টাকা দিয়ে ১০ জন, ২০ জন, ৫০ জন, ১০০ জন লোক জড়ো করা কোন ব্যাপার না। এমন আরো ১০-২০টা দেখবেন।

আরসা প্রধান আতাউল্লাহর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেলের এডিটর অপূর্ব আলাউদ্দিন।

আপনার সংগঠনের তো অনেক খরচ হয়। এই খরচের টাকা আসে কোথা থেকে?

আমাদের কোনো দেশ সাহায্য করে না। কোনো ব্যক্তিও সাহায্য করে না। কোনো সংগঠনও আমাকে সাহায্য করে না। আমাদেরকে সাহায্য করে যারা আমাকে সমর্থন করে। বার্মা সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩০ বছর আগে, যুবকরা চিকিৎসার জন্য মা-বাবাকে বা আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলে গিয়েছিল। তারা আর দেশে ফিরতে পারেনি। অন্য দেশে গিয়ে স্থায়ী হয়েছে। ওরাই আমাকে সাহায্য করে। নিজের দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে এজন্য ওদের মধ্যে একটা আক্ষেপ আছে। আজকে ওরা এটাই অনুভব করছে যে, আমাদের একটা সংগঠন দরকার। যে সংগঠন রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ করবে তাদেরকে আমরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করবো। আলহামদুলিল্লাহ, বিভিন্ন বয়সের যুবকরা এবং ব্যবসায়ীরা আমাদের সাহায্য করে। তাদের সাহায্য নিয়ে আমরা চলি। আরসার যে টাকা দরকার হয়, ওটা দিয়ে আমরা চালাই।

আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, আপনি জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করছেন এবং টাকা না দিলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন, এটা সত্য কিনা?

এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। প্রথম কথা, এটা আমাদের কাজ না। দ্বিতীয়ত হলো, আমাদের যদি কেউ সাহায্য করতে চায়… এবং শেষ কথা হচ্ছে, যারা একথা বলছে, তারা বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কাজ করে। যারা খারাপ মানুষ তারা নিজেদের জীবন বাঁচাতে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের সংগঠন আছে তারা এসব বলে।

আপনি কি কোন চাঁদার রশিদ ছাপিয়েছেন? টাকা সংগ্রহের জন্য?

আমাদের কিছু কিছু সদস্য পরামর্শ দিয়েছেন, বিদেশ থেকে যে টাকা আসে, সেটা অনেক সময় শেষ হয়ে যায়। তখন চলতে কষ্ট হয়। পরে আমাদের সদস্যদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়, চলার জন্য…অল্প স্বপ্ল, কারো কাছ থেকে ১০০ টাকা, কারো কাছ থেকে ৫০ টাকা নেব। এগুলো সংগ্রহ করে খরচ করবো। এমন একটা পদ্ধতি চালু করেছিলাম। তবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভালো লাগেনি, এজন্য এটা বাদ দিয়ে দিয়েছি।

আপনারা কী চান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হোক? রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক? এটা কি আপনি চান কিনা?

আমরা আরসা গঠন করেছি প্রত্যাবাসন করার জন্য। ক্যাম্পে ১০, ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে শুধু এদের নয়, সারা বিশ্বে আরো ৩০ লাখ রোহিঙ্গা আছে, সবাইকে দেশে এনে স্থায়ী করার জন্য আরসা গঠন হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই। সব রোহিঙ্গা চায়, আরাকানে এসে নিজেদের ভূমিতে স্থায়ী হওয়ার জন্য। এটাই আরসা চায়। আরসা সব সময় প্রত্যাবাসন চায়। শুধু ক্যাম্পে নয়, সারা বিশ্বে যত রোহিঙ্গা আছে সবার প্রত্যাবাসন চাই।

আপনারা যদি প্রত্যাবাসন চান, তাহলে ক্যাম্পে ক্যাম্পে আপনারা হামলা চালাচ্ছেন কেন? ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দাবি করছে, মুহিবুল্লাহ মার্ডার, সিক্স মার্ডার আপনার করেছেন।

পুরো রোহিঙ্গা জাতির মধ্যে আরসা একটি শক্তিশালী সংগঠন। আর পুরো জাতির মধ্যে যত চোর-ডাকাত আছে তারা চুরি-ডাকাতি করে, ইয়াবা ব্যবসা করে, বিভিন্ন টার্গেট কিলিং করে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে আরসার ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। এটা আরসার কাজ না। আমাদের টার্গেট হচ্ছে, বার্মা সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করা। রোহিঙ্গাদের কেন আমরা টার্গেট করবো? রোহিঙ্গাদের কেন আমরা মারবো? যিনি রোহিঙ্গাদের নেতা, যিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চান, এরকম লোককে আমরা কেন মারবো? ওনাকে ওরাই মারবে, যারা নেতা হতে চায়, বাইরের দেশে বসে বসে ৩০-৩৫ বছর ধরে নেতা দাবি করে, পুরো রোহিঙ্গা জাতির জীবন শেষ করে দিয়েছে। কোন দিন জাতিকে সেবা দিতে পারেনি। মুহিবুল্লাহ নেতা হয়েছিলেন। ওরা সহ্য করতে পারেনি। ওরা মনে করছে, যেহেতু আরসা মাঠে আছে, এটাই ভালো সুযোগ। আরসা যদি না থাকতো, তাহলে দোষটা ওদের ওপর যেত। এটা করার পর (মুহিবুল্লাহ হত্যা) বাইরের নেতারা অনেক দান-খয়রাত করেছেন। নামাজ পড়েছেন, রোজা রেখেছেন। এটা আরসার কাজ না। যারা প্রত্যাবাসন চায় না, এটা তাদের কাজ।

তাহলে, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে আপনার সংগঠন জড়িত না?

না, এটা আরসা কাজ না। এটা আরসা করতে পারে না। আরসার কাজ এটা না।

মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ মামলা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এটা আরসা করেছে।

আপনাদের ভালোভাবে বুঝতে হবে। প্রথম যখন মামলা করেছে তখন আরসার নাম উল্লেখ করেনি। তখন বলছে, কে করছে আমি বলতে পারি না। বাইরের দেশে যেসব নেতা শয়তানের বেশ ধরে  বসে আছে, বার্মার এজেন্ট হয়ে বসে আছে, তারা হাবিবুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে। এরপর ওর মুখ দিয়ে আরসার নাম বলিয়েছে। যদি তার মুখ থেকে বের হতো, তাহলে প্রথমেই মামলার করার সময় আরসার নাম উল্লেখ করতো। আপনাদের বুঝতে হবে প্রথমে নেয়নি। পরে নিয়েছে।

সবাই বলছে, আপনার সংগঠন মিয়ানমারের সৃষ্টি।

জ্বী জ্বী, এটা অনেক হাস্যকর কথা। প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা যদি বার্মার সেনাবাহিনী সরকারের সৃষ্টি হই- এটার জবাবে বুঝতে হবে যে, তাদের সাথে আমাদের দফায় দফায় যুদ্ধ হচ্ছে। ওরা সৃষ্টি করলে, আমরা কেন তাদের মারতেছি? দফায় দফায় আক্রমণ করছি? এটা কোনোদিন হতে পারে? এটা কোনোদিন হতে পারে না। এ মাসে তাদের সাথে আমাদের ৪টা যুদ্ধ হয়েছে। চারটা যুদ্ধের মধ্যে যেটা মংডুতে হয়েছে, সেখানে আমরা তাদের গাড়িতে অ্যাটাক করেছি। তাদের ২০ জনের ওপরে সেনা সদস্য মারা গেছে। এরপর ৭ তারিখ, ৯ তারিখ, ১১ তারিখ যে যুদ্ধ চলছিল-তাহলে কীভাবে আমরা সৃষ্টি হই। এটা কোনোদিন হতে পারে না যে আমরা তাদের সৃষ্টি।

এটা তারাই বলে, যারা (বিভিন্ন রোহিঙ্গা সংগঠন) আরাকানের ভেতরে থাকতে পারেনি, যারা আরাকানের জঙ্গলের ভেতর থাকতে চায় না। আরসা জঙ্গলে থাকতে পারে, ওরা পারে না। এই জবাবদিহি এড়াতে একটা ইস্যু বানিয়ে ওরা এটাই প্রচার করে। আরসা কীসের জন্য জঙ্গলে থাকতে পারে জানেন? আরসা জীবন দেয়ার জন্য আসছে এখানে। যে জীবন দিতে জানে, তার মধ্যে কোনো ভয় নেই। যিনি জীবনের মায়া ছাড়তে পারে না, তিনি কখনো জঙ্গলে থাকতে পারে না। আমরা জঙ্গলে আসছি জীবন দিতে। মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ করা এখন আমাদের জন্য ওয়ান-টু ব্যাপার, আলহামদুলিল্লাহ।

২০১৭ সাল থেকে আপনার সদস্য কতজন মারা গেছে?

জ্বী, আমাদের আনুমানিক ৩৯০ জনের ওপর শহীদ হয়েছেন।

২০১৬ সালে টেকনাফে আনসার ক্যাম্পে একটা হামলা চালিয়েছিলেন। ১৯টি অস্ত্র এবং ৬০০ ওপরে গুলি লুট করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটা কেন করেছিলেন?

না, না এটা আরসার কাজ না। পাশের দেশ যেগুলো আছে, তাদের ক্ষতি করা, আইন ভঙ্গ করা আরসার কাজ না। পাশের দেশগুলো আরসার টার্গেট না। এটা আমরাও শুনেছি। তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যেসব চোর ডাকাত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার পাহাড়গুলোতে বসে আছে, এগুলো তাদের কাজ। তাদের কাজ এটা শুনেছি। আরসার কাজ এটা না। আরসার কাজ বার্মার মিলিটারিকে মারা।

বাংলাদেশ তো মুসলিম। ওদের কাছ থেকে কেন আমরা অস্ত্র নিবো। এটা আমাদের টার্গেট না।

নুরুল আলম ও আবুল কালাম নামের দু’জন আসামি গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, এটা আরসা লুটপাট করেছিল-মিয়ানমারে হামলা করার জন্য।

না, আমার কাজের সাথে ওরা কেউ জড়িত না। বিষয়টা আমি বুঝতে পেরেছি। আজাদ নামে একজন ছিল- নাম শুনেছি। নুরুল আলমও একজন ছিল। আমাদের কাছে কোনো কাজ নিয়ে আসে নাই। তবে ওরা পুরনো একটি সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল। হতে পারে, ওই পুরনো সংগঠনই ওদের এ কাজ দিয়েছিল।

আপনি কোন দলের কথা বলছেন? আপনি বারবার অন্য দলের কথা বলছেন। ওই দল, ওই দল বলছেন। আপনি নাম বলছেন না। আপনি কি নির্দিষ্ট করে বলবেন, তাদের নামটা কী? কারা এগুলো করছে?

নাম উচ্চারণ করতে চাই না। আমি অন্য সংগঠনের নাম উচ্চারণ করবো না। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে আপনি ভালো উত্তর পাবেন।

রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?

আমি রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের এটাই বলবো যে, নিজেদের অধিকার আদায়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ৭৫ বছর ধরে বার্মা সরকার বিভিন্নভাবে আমাদের নির্যাতন করছে, ধর্ষণ করছে, হত্যা করছে, দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করছে। আমাদের বিভিন্ন দেশে চলে যেতে হয়েছে। আজকে এ সময় আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, ভুল-ভ্রান্তি সব ভুলে গিয়ে, দলাদলি বাদ দিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের এক প্লাটফর্মে এসে যুদ্ধ করতে হবে।

আলোচনার টেবিলে বসে কোনোদিন কাজে আসে না। যদি আলোচনায় কাজ হতো, শেখ মুজিবুর রহমান নামে একজন বড় মাপের রাজনীতিবিদ ছিলেন। বাঙালি জাতির ওপর যেভাবে নির্যাতন করেছিল, তাহলে তিনি আলোচনা করে সমাধান করে ফেলতেন। আলোচনার আশায় বসে থেকে তিনি ৩৫ বছর বসে থাকেননি। উনি কী করেছেন? যুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। ৩০-৪০ বছর বসে থেকে সময় নষ্ট করেননি। আমাদের রোহিঙ্গা নেতা যারা আছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। বাংলাদেশের এত বড় একজন নেতা, সেজন্য আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সেজন্য আলোচনার পাশাপাশি যুদ্ধও করতে হবে। একটাই পথ, মিয়ানমার সরকারের ওপর হামলা করতে হবে। ওদের মেরে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। মিয়ানমার সরকার আলোচনা বুঝে না, ওদেরকে মেরে বুঝাতে হবে। সেজন্য আমি রোহিঙ্গা জাতির উদ্দেশে বলছি, তোমরা প্রস্তুত হও। তোমরা এক প্লাটফর্মে আসো। দলাদলি বাদ দেই আমরা। বার্মা ভাষা ব্যবহার করে আমরা বার্মা সরকারের দালাল হয়ে থাকবো না। বার্মার এজেন্ট হবো না। যারা আমাদের বাপ-দাদাকে নির্যাতন করেছিল, আমাদের পূর্ব পুরুষদের জুলুম করেছে, ৭৫ বছর ধরে দেশ থেকে বিতাড়িত করছে। দেশটা নিয়ে ফেলেছে আমাদের কাছ থেকে। এদেশ আমাদের আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য রোহিঙ্গা জাতিকে আল্লাহর ওয়াস্তে আমি বার্তা দিচ্ছি যে, আমরা দলাদলি বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। এক প্লাটফর্মে এসে আলোচনাও করি, যুদ্ধ করি। যুদ্ধ করে স্বাধীনতা আনতে হবে।

আপনি যে যুদ্ধ করবেন। আপনি রোহিঙ্গা আহবান করছেন, এজন্য তো অস্ত্র দরকার, টাকা দরকারএই অস্ত্র কোথা থেকে পাবেন?

যুদ্ধ করার জন্য অস্ত্র এবং যে টাকা দরকার আছে, সেটা মানুষের মাথায় আছে। যারা রাজনীতি করে, তাদের মাথাতেও আছে। এরআগে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনের অনেক অস্ত্র ছিল। এই হাজার হাজার অস্ত্র শেষ করে ফেলেছে। এগুলো দিয়ে কিছু করতে পারেনি। বিভিন্ন সময় এগুলো নষ্ট করে ফেলেছে। অস্ত্র থাকার পরও ওরা কিছু করতে পারছে? পারে নাই। একটা আর্মিও মারতে পারে নাই।

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের হাতে অস্ত্র না থাকলেও, তাদের মেরে আমরা অস্ত্র নিয়েছি। সেই অস্ত্র দিয়ে ওদের মেরে এখানে এখনো টিকে আছি। আল্লাহর ওপর ভরসা আছে বলেই আমরা এখনো অটল আছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের টাকাও আল্লাহ যোগাড় করে দিবেন। আল্লাহ তাদের মারার এবং তাদের কাছ থেকে নেয়ার তৌফিক দিবেন।

ইনশাল্লাহ, আমরা রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় করতে পারবো। আমরা আরাকান ছেড়ে যাবো না। আমরা ওদের হত্যা করবো, এ মাটির ওপর। দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাবো না। আমাদের বিশ্বাস আছে, হয়তো আজ দেখছেন না, তবে ২০ বছর পর হলেও দেখবেন, ইনশাল্লাহ। রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত হবে। রোহিঙ্গারা এখানে ফিরে আসবে, ইনশাল্লাহ।

এই যে আপনাদের অস্ত্র কম, টাকা কম তারপরও যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, পেছন থেকে আপনার পরামর্শদাতা কে? আপনার নেতা কে?

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সাথে অনেকে আছে। আমাদের দলে ছাত্র আছে, শিক্ষক আছে, উচ্চতর ডিগ্রিধারী মানুষও আছে, অধ্যাপকও আছে। তবে আমরা তাদের সামনে আনছি না। কীসের জন্য করছি না? আমাদের জাতিতে অনেক বেঈমান আছে, বড় বড় এমন কিছু নেতা আছে তারা এসব সহ্য করতে পারবে না। কীভাবে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করবে, কীভাবে তাদের হত্যা করবে, এ রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে ফেলবে, এটা সব সময় তারা চিন্তা করে। যারা অধ্যাপক আছেন, উচ্চতর ডিগ্রিধারী আছেন তাদের আমরা পর্দার পেছনে রাখি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের পরামর্শ দেয়ার জন্য অনেক লোক আছে। ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার সব আছে আমাদের। আমরা এদের আড়ালে রাখি, এদের প্রকাশ্যে আনি না।

বুঝতে পেরেছি আপনার অনেক লোক আছে। অনেক পেশাজীবী লোকও আছে। আমি আরেকটা বিষয় জানতে চাচ্ছি যে, আপনার পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। আপনি তো পাকিস্তানে জন্ম নিয়েছেন। আপনি সৌদি আরবে পড়াশোনা করেছেনকী বিষয়ে পড়েছেন? কীভাবে বেড়ে উঠেছেন?

আমার জন্ম পাকিস্তানের করাচিতে। এরপর আমার বাবা-মা সৌদি আরবে চলে গেছেন। সৌদি আরবে আমি বড় হয়েছি। সেখানে আমি ডিগ্রি নেই। এমএ ইসলামিয়া ওপর হেরাম শরীফে লেখাপড়া করেছি। এরপর আমি রিয়াদে স্থায়ী হই। ওখানে আমি শিক্ষকতা করি।

রিয়াদে শিক্ষক ছিলেন। হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্য এতো আকুতি তৈরি হলো কেন?

তাহলে এটা শুনেন। এটা একটা বড় ইতিহাস, বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। যখন আমার বয়স ১৯৮০ সালে ……১৯৯২, ১৯৯৩, ১৯৯৫ সালে শুনতে পাই, আরএসও আরাকানে কাজ করছে। একইভাবে অন্য সংগঠনগুলো কাজ করছে। এ সময় আমাদের রোহিঙ্গা কমিউনিটি আছে, সমাজ আছে। সেখানে আমরা আলোচনা করতাম। ১৬, ১৭, ১৮ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করার কথা ভাবি। যেসব নির্যাতন হচ্ছিল, সেগুলো ধাপে ধাপে আমরা জানতে পারি। ছোটবেলা থেকে সেই যন্ত্রণা আমার ভেতরে কাজ করে। আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, রোহিঙ্গা জাতির মুক্তির জন্য। রোহিঙ্গাদের যত সংগঠন ছিল, সবার সাথে যোগাযোগ করতাম। সৌদি আরবে কাজ করেছি। রিয়াদে কাজ করেছি, মদিনায় কাজ করেছি, মক্কায় কাজ করেছি। ২০১২ সালের আগে, ২০১৩ সালে যখন এখানে এসেছি, তার আগ পর্যন্ত আমি ওখানে কাজ করেছি।

বিশ্লেষকরা বলছেন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে আপনি বার্মায় যে হামলা চালিয়েছেন, সেটা বিশ্বের নজরে আনার জন্য করেছেন। ওসামা বিন লাদেনের মতো আলোচনায় আসার জন্য আপনি এটা করেছেন।

না, না। এ রকম কথা নাই। জনপ্রিয় হওয়া উদ্দেশ্য না। আমার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, রোহিঙ্গা জাতি ৭৫ বছর ধরে দুঃখ-কষ্টে আছে। যত নেতা ছিলেন, তারা কেউ রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় করেনি। তারা এক কাপড় নিয়ে দেশ থেকে বের হয়ে আসেন। আসার পর নিজের স্বার্থ দেখেছেন। রোহিঙ্গা জাতিকে সামনে রেখে অন্যান্য দেশে নেতা সেজে স্থায়ী হয়ে গেছেন। নাগরিকত্ব নিয়েছেন, ওখানে স্থায়ী হয়েছেন। এরপর আমরা দেখেছি, কেউ এসে স্বাধীনতা চাননি। সেই পারে যিনি জীবন দিতে জানে। বিদেশে নাগরিকত্ব নিয়ে কোনোদিন রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় করা যায় না। 

আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর জেল খেটেছেন। উনি কি আমেরিকায় গিয়ে নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন? উনি দেশ ছেড়ে যাননি। উনি ২৭ বছর জেল খেটেছেন। ওনার স্ত্রী মারা গেছে, ছেলে মারা গেছে-তাদের দেখতে পারেননি। কী জন্য? নিজের জাতির জন্য। তবে, রোহিঙ্গার যেসব নেতা আছে তারা আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছেন, বৃটেনে স্থায়ী হয়েছেন, কানাডায় স্থায়ী হয়েছেন, জাপানে স্থায়ী হয়েছেন। তারা কী করে? তারা একটি ছবি সংগ্রহ করে, ভিডিও সংগ্রহ করে, সেগুলো এক লাখ ডলার, ৫০ হাজার ইউরোতে বিক্রি করে ।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য তারা নিজের দেশে ফিরে আসবেন না। তারা স্থায়ী হয়ে গেছেন। এজন্য বলছি, এমন একজন লোককে উঠা দরকার যে লোক রোহিঙ্গাদের জন্য জীবন দিতে পারবে। এজন্য আমি এখানে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ, এখানে নাম প্রচারের দরকার নেই। নিজের রোহিঙ্গা জাতির অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। আল্লাহকে খুশি করার জন্য আমার উদ্দেশ্য ছিল।

যদি নিজে জনপ্রিয় না হওয়ার জন্য এটা করেন, তাহলে আপনি এই ভুলটা কেন করলেন? কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট দেয়ার পরদিন কেন হামলা চালালেন?

এটা আমি নিজেও চিন্তা করেছি। তিন দিন পর শুনেছি কফি আনান কমিশন এটা করেছে। এটা আমার মাথায় ছিল না। এটা আমি জানতামও না। আমি হলফ করে বলতে পারি যে, কফি আনান যে এটা দিয়েছে, এটা আমি জানতামও না, বুঝতেও পারিনি। মাথাতেও ছিল না।

তার মানে, এটা আপনার ভুল হয়েছে। আর এই ভুলের কারণে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আজ দেশ ছাড়া হয়েছে।

না, না এটা ভুল না। এর আগেও কী হয়েছে, এরা মুসলমানদের কোনোদিন অধিকার দেয়নি। মুসলিমদের দিয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। ইন্দোনেয়িশার তিমুর, সুদানের দারফুর আছে, ফিলিস্তিন আছে। যেখানে মুসলমান আছে তাদেরকে এত সহজে তারা অধিকার দেয়নি। যখন তিমুরে সমস্যা হয়েছিল, তখন খ্রিস্টানরা দখল করেছে। বিল ক্লিনটন, কফি আনান গিয়ে তিমুর খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দিয়ে আসে। সুদানের দারফুরেও ওয়ান-টু’র মধ্যে খ্রিস্টানদের দিয়ে আসছে। কিন্তু ৭৫ বছর ধরে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করে আসলেও তাদের অধিকার দেয়নি। মুসলমানদের অধিকার যুদ্ধ করে আদায় করতে হয়।

আপনার পারিবারিক বিষয়ে আবার আসি। আপনারা তো সাত ভাই, দুই ভাই। বাবার নাম গোলাম শরীফ। তিনি বনদস্যু ছিলেন। তিনি বার্মা থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সৌদি আরব যান। সৌদি আরবে গিয়ে জাল টাকার ব্যবসা করতেন।

না, না এসব মিথ্যা কথা। আপনাদের একটা উদাহরণ দেই। যেমন, ২০১২ সালে যখন বার্মার জালেম সরকার আরাকানের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করে। এ সময় রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে একটি শব্দ উচ্চারণ হত, এখন যদি ইহুদিরা এসে আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা তাদেরকেই নেতা মেনে নিবো। আগে রাসূল (সাঃ) এর আমলে যেসব ইহুদিরা কষ্ট পেত, ইহুদিরা মদিনা শরীফে এসে বলত- একজন শেষ নবী এখানে আসবে। যিনি আসবেন তাকে নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করবো। আমাদের অধিকার আদায় করবো। যখন নবী মক্কায় আত্মপ্রকাশ করলেন, তখন তারা বললো- আমরা এই নবীকে মানি না। কীসের জন্য মানি না? উনি মক্কা থেকে উঠে আসছেন, সেজন্য মানি না। মদিনা থেকে উঠলে আমরা মানতাম। প্রথমে রোহিঙ্গারা বলেছিল, ইহুদিরা আসলে আমরা নেতা হিসেবে মেনে নিবো, ওনাকে সহযোগিতা করবো। এখন তাদের মতো যেহেতু হইনি, আগের নেতারা যেভাবে তাল মিলিয়ে চলছিল, বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে রোহিঙ্গাদের আর্মি রেখে তাদের মতো কোর্ট-টাই পরে বিদেশে স্থায়ী হতাম, ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ী হতাম তখন আমাকে ধন্যবাদ জানাতো। তারা বলতো, অনেক ভালো লোক। উনি বেশি কাজের লোক। এখন কী জন্য বলে না? তাদের ধান্ধবাজি বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের চলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা যে রোহিঙ্গাদের বেচা-বিক্রি করতো, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য আমি ওদের চোখের কাটা হয়ে গেছি।

আপনি তো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন। আপনার বাবা যে বনদস্যু ছিলেন, এটা অস্বীকার করছেন?

না, না। আমার বাবা বনদস্যু ছিলেন না।

আপনারা সাত ভাই। সাত ভাইয়ের মধ্যে একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বডিগার্ড ছিলেন শাহআলী নামে।

এর সম্পর্কে আমি জানি না।

শরাফতউল্লাহ কি আপনার ভাইয়ের নাম?

শরাফতউল্লাহ আমার ভাইয়ের নাম।

শরাফতউল্লাহ তো আরাকানে এসেছিলেন?

জ্বী…

উনি চলে গেলেন কেন?

ওনার ইচ্ছা।

আপনার ভাইকে ধরে রাখতে পারেননি?

ওনার আরসার সাথে সম্পর্ক ছিল না।

আপনারা দুই ভাই পরিকল্পনা করে এসেছিলেন যে, আপনার দুই ভাই আসবেন। যিনি থাকতে পারবেন, তিনি থাকবেন। অন্যজন চলে যাবেন, এমন পরিকল্পনা ছিল কিনা?

না, না। এমন পরিকল্পনা ছিল না। ওনার সাথে আমার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

উনি সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলীর বডিগার্ড ছিলেন না?

এটা আমি জানি না। থাকলেও আমি জানি না, স্যার।

আরেকটা বিষয় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি- এ সম্পর্কে আপনার জানা আছে? বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি-বিএলএ, পাকিস্তানের।

এটা কী?

এটা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নাম।

আমি তো চিনি না। ওরা কোথায় থাকে?

যেহেতু আপনি দল করেছেন, একটি সংগঠন করেছেন, আপনার তো জানার কথা-এমন একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ সম্পর্কে। যেহেতু আপনার জন্ম পাকিস্তানেও।এটা তো আলোচিত একটা সংগঠন-বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি।

না, না। পাকিস্তানের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ছোটবেলা থেকে আমি চলে গেছি। পাকিস্তান সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।

পাকিস্তানে আপনি কত সাল পর্যন্ত ছিলেন?

আমি তো ছোট থেকে চলে এসেছি। তখন আমার ৬ বছর।

তার মানে, আপনি বলছেন পাকিস্তানের লিবারেশন আর্মি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

তাদেরকে আমি কেন চিনবো?

জানতে পেরেছি আপনি ওই সংগঠনের একজন সদস্য ছিলেন। ওখান থেকে রিক্রুট হয়ে আপনি মিয়ানমারে এসেছেন এবং বাংলাদেশে আইএস জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন।

না, না। এটা আমার পরিকল্পনা না। এমন নোংরা পরিকল্পনা আমার নেই। আমার পরিকল্পনা যেটা আছে, সেটা ভালো পরিকল্পনা। রোহিঙ্গা জাতিকে সহযোগিতা করা, তাদেরকে সেবা করা। কেউ আমাকে ব্যবহার করছে না। আমি কোন কিছু না। আলহামদুলিল্লাহ আমি রোহিঙ্গা জাতির ছেলে। জাতিকে সার্ভিস দেয়ার জন্য এসেছি।

যদি রোহিঙ্গাকে সার্ভিস দেয়ার জন্য আসেন, তাহলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্যাম্পে কেন হামলা হচ্ছে? এ হামলা বন্ধ করার জন্য আপনারা কাজ করছেন?

হামলা বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার আছে না? হামলা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু ক্যাম্পগুলো বাংলাদেশ সরকারের অধীনে। বাংলাদেশ সরকার ওদের সার্ভিস দেয়। আরেকটু ভালো করে সার্ভিস দিতে হবে। যেসব চোর-ডাকাত আছে তাদের ধরতে হবে। যেসব বিভিন্ন দল আছে, পুরনো রোহিঙ্গা সংগঠন আছে, যারা ইয়াবা ব্যবসা করে, বিভিন্ন অপকর্ম করে- এটার প্রধান বিষয় হচ্ছে যে, যেসব বড় বড় অঘটন ঘটছে তার পেছনে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাত আছে। বাংলাদেশ সরকার যদি ভালো করে বন্ধ করতে চায়, ইনশাল্লাহ ক্যাম্পের সব ধরনের অপরাধ শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকারের যত সংস্থা আছে, সব সংস্থাকে এটা বন্ধ করতে হবে। যদি কিছু সংস্থা বন্ধ করে, আর কিছু সংস্থা চালু রাখে তাহলে শান্তি ফিরবে না। সহজে বন্ধ হবে না।

আমরা যেটা জানতে পেরেছি, ইয়াবা ব্যবসা নাকি আপনার সংগঠন করে। আপনারা পাঠান। ক্যাম্পে ইয়াবা ব্যবসা চলে।

আলহামদুলিল্লাহ। এটা আমাদের কাজ না। এখান আরসার কোনো হাত নেই। আমাদের সাথে যত সমস্যা হচ্ছে, এগুলো সব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে হচ্ছে। আরসা ইয়াবার ব্যবসা করতে চায় না। আরসা ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করে। এজন্য যারা বিদেশে বসে রাজনীতি করে ওদের সাথে ইয়াবা বড় বড় গডফাদারের সম্পর্ক আছে। যারা রোহিঙ্গাদের নেতা বলে দাবি করছেন, ওরা টাকা পাঠায়। তাদের টাকা দিয়ে গডফাদাররা ইয়াবা ব্যবসা করছে।

আরসা কখনো চায় না। ইয়াবা ব্যবসা করতে দিবে না। আরসা করেও না। করতেও দিবে না। ইনশাল্লাহ, এটাও আমি বলে দিলাম। আগামীতে আমরা আরাকানে বসে ইয়াবা নির্মূল করে দিবো-আল্লাহ তৌফিক যদি দেন।

বাংলাদেশের ক্যাম্পে একবার এসেছিলেন। কীভাবে আসলেন? আর কীভাবে ফিরে গেলেন?

আমি অসুস্থ ছিলাম। চিকিৎসা করানোর জন্য এসেছিলাম। যেভাবে আমি পায়ে হেঁটে গিয়েছিলাম, ঠিক সেভাবে পায়ে হেঁটে চলে এসেছি।

মিয়ানমার বর্ডার গার্ড-পুলিশ- বিজিপি কিছু বলেনি আপনাকে?

কেন করবে? আমি কি চোর নাকি? আমি তো রোহিঙ্গা নেতা। আমি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দিতে চাই। আমাকে দেখলে স্যালুট দেয়।

আপনাকে দেখছে? বর্ডার পার হওয়ার সময় আপনার সাথে কারো দেখা হয়েছিল?

আমি তো জানি না। কত শত শত প্রশাসন আছে। নাম তো জানি না।

আপনি কতবার আসা-যাওয়া করেছেন? বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কতবার আসা-যাওয়া করেছেন?

দুইবার।

দুইবার? আচ্ছা, এখন দুইবার আসছেন। দুইবার এসে ক্যাম্পে ছিলেন কতদিন?

ক্যাম্পে দুইদিন।

কোন ক্যাম্পে ছিলেন?

১৭ নম্বর ক্যাম্পে।  ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত।

আচ্ছা, ১৫ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ছিলেন?

২০২০ সালে…

তখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কেউ দেখেনি বা চিনেনি রোহিঙ্গারা?

আমি দুয়েকটি মিটিং করেছি তো। বড় বড় মিটিং করেছি।

বৈঠক করেছিলেন?

২ দিনে, ৩টা মিটিং করেছিলাম।

এই তিনটা বৈঠকে কী কী নির্দেশনা দিয়ে এসেছিলেন?

যেটা আপনাকে এতক্ষণ বলেছি, সেটাই বলেছিলাম।

আপনারা ওখানে কী কাজ করেন?

আপনারা শুনেন না। এখানে আমরা তিন-চারটা যুদ্ধ করতেছি। কাজ এটাই করছি। যে যুদ্ধ হচ্ছে, এটাই কাজ।

আপনারা যে কাজ ওখানে করছেন, সেটা কোনো বাঁধা আছে কিনা? আর বাংলাদেশের কারোর সাথে আছে কিনা?

বাংলাদেশ কারোর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো সংস্থার সাথে সম্পর্ক নেই। কোনো যোগাযোগ নেই। কোনো লেনদেন নেই। আমাদের কাজ আমরা করছি। আমাদের কষ্ট আমরাই করছি।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সাথে কথা বলেছেন কিনা? বা বলবেন কিনা?

প্রথম আমি বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা বলবো। বাংলাদেশ সরকার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকে, বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইন্টারন্যাশনাল এনজিওগুলোকে চাপ দিতে হবে। শক্তিশালী দেশ -আমেরিকা, ব্রিটিশ, ফ্রান্সকে বোঝাতে হবে, রোহিঙ্গারা অনেক কষ্টে আছে। আর বোঝাতে হবে, মিয়ানমার সরকার সব সময় মিথ্যাচার করে। বাংলাদেশ সরকারকে বুঝতে হবে, মিয়ানমার সরকার কথা দিয়ে কথা রাখে না। বাংলাদেশ সরকার মনে করে, ওরা সত্য কথা বলে। আজ ৭০ বছর ধরেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে- এটা বাংলাদেশও বুঝতে পারে না। এজন্য বাংলাদেশকে বুঝতে হবে মিয়ানমার সব সময় প্রতারণা করে। বাংলাদেশের সাথে যেসব দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, তাদেরও বোঝাতে হবে। প্রভাব খাটিয়ে হোক, বন্ধুত্ব করে হোক রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা। এটাই আমি বলতে চাই। বাংলাদেশ সরকার চাইলেই পারবে। ব্রিটিশ, ফ্রান্স কোনো দেশ চাইলে এখন পারবে না।

ধন্যবাদ আপানকে।

ধন্যবাদ যমুনা টেলিভিশন এবং আপনাকে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply