ছদ্মবেশে থেকেছেন ২৩ বছর; অবশেষে গ্রেফতার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি

|

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

দীর্ঘ ২৩ বছর ছদ্মবেশ ধরে পালিয়ে বেড়িয়েছেন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মহুবর রহমান (৪৮)। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা পুলিশ।

গতকাল বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে রংপুর মেট্রোপলিটনের মাহিগঞ্জ থানার আলুটারী বস্তি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন আদিতমারী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল হক ও এসআই জয়নাল আবেদীন। গ্রেফতারকৃত মহুবর রহমান আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবর্দ্ধন গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে।

আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ২৭ মে মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবর্দ্ধন গ্রামের মনসুর আলীর কাউন ক্ষেত খায় ওই এলাকার বছরউদ্দিনের একটি বাছুর গরু। পরে গরুটি খোয়াড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গেলে বছরউদ্দিন গরুটি খোয়াড়ে না দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে। এ সময় বছরউদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে মহুবর। বছরউদ্দিকে উদ্ধারে তার ভাতিজা আফজাল উদ্দিন এগিয়ে আসলে মনসুর উত্তেজিত হয়ে আফজালের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আফজাল। ওই দিনই মৃত আফজালের চাচা কাচু শেখ বাদি হয়ে এ ঘটনায় আদিতমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় মহুবর রহমানকে প্রধান ও তার বাবা মনসুর আলীকে হুকুমের আসামি করা হয়। ঘটনার দিনই মনসুর আলীকে গ্রেফতার করা হলেও প্রধান আসামি মহুবর রহমান এলাকা থেকে পালিয়ে যান। একই সালের ২ সেপ্টেম্বর তাদের বাবা ছেলেকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হক।

এ মামলায় ২০০৩ সালের ২৯ মার্চ লালমনিরহাট জজ আদালতের বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা প্রধান আসামি মহুবর রহমান ও তার বাবা মনসুর আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা অনাদায়ে আর‌ও ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। বাবা মনসুর আলী গ্রেফতার থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মনসুর আলী ১৪ বছর সাজা ভোগ করে মুক্তি পান। এ মামলায় প্রধান আসামি মহুবর রহমান পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

ঘটনার দিন থেকে পলাতক থাকা মহুবর রহমান দীর্ঘ ২৩ বছর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় ছদ্মবেশে দিনমজুরের কাজ করে আত্নগোপনে থাকেন। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

আদিতমারী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, ৬ মাস আগে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা পেয়ে আদিতমারী থানার এসআই জয়নাল আবেদীন তাকে গ্রেফতারে অনুসন্ধান চালান। কুমিল্লা শহরের বাসিন্দা এসআই জয়নাল আবেদীন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সোর্স নিয়োগ করে আসামি মহুবর রহমানের অবস্থান জানতে পারেন। পুলিশের অভিযান বুঝতে পেয়ে গত মাসে কুমিল্লা শহর ছেড়ে আবারও শরীরের গঠন পরিবর্তন করে রংপুর শহরের
আলু বস্তিতে বসতি গড়ে তুলেন আসামি মহুবর রহমান। অবশেষে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তা নিয়ে মহুবর রহমানকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই আমরা।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ১৯৯৯ সালের মে মাসের ২৭ তারিখের পর থেকে পলাতক থাকে মহুবর। তাকে ধরতে ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সে সবসময় ছদ্ধবেশে থাকতেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাকে রংপুর থেকে গ্রেফতার করার পর আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা
হয়েছে।

জেডআই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply