৩২৫ রকম উপায়ে শাড়ি পরাতে পারেন, বলিউড নায়িকাদেরও পছন্দ ডলিকে

|

ডলি জৈন, যার জীবন শুরু হয়েছিল সাধারণ গৃহবধূর মতোই। কিন্তু পরিপাটি করে শাড়ি পরতে ও পরাতে ভালোবাসতেন ভারতের কলকাতার এ গৃহবধূ। কিন্তু কে জানত, এই শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে ডলির সাফল্য। নিজেও ভেবেনি বোধহয়।

একদিন বিয়ের এক কনেকে শাড়ি পরানোর সময় ডলির কাজ দেখেন বিখ্যাত ডিজাইনার সন্দীপ খোসলা। তার আগ্রহেই ডলির প্রবেশ ঘটে সেলিব্রিটি বিয়ের দুনিয়ায়। এরপর আর ফেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি ডলিকে। কেবল এগিয়ে যাওয়ার গল্পই রয়েছে তার ক্যারিয়ারের ঝুলিতে।

শাড়িতে ডলি। ছবি: সংগৃহীত

ডলির কাজের জগৎ
শাড়ি পরানোকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে ধাপে ধাপে ডলি রপ্ত করেন, গোটা ভারতে প্রচলিত থাকা অন্তত ৩২৫ রকম উপায়ে শাড়ি পরানোর ধরন। সোনম কাপুর থেকে শুরু করে হালের ক্যাটরিনা কাইফ, অনেক বলিউড নায়িকার বিয়েতে শাড়ি পরানোর নেপথ্যে দায়িত্ব সামলেছেন ডলি জৈন।

শুধু কী তারকাদের বিয়েতে কাজ করেন? না, যেকোনো বিয়েতে শাড়ি পরানোর ডাক পেলেই ডলি কাজ করেন। ভারতের শাড়ির ধরন বুঝতে দেশটির বিভিন্ন ছোট ছোট জায়গায় ঘুরে বেড়ান ডলি। গ্রামে গ্রামে মহিলাদের সঙ্গে মেশেন, বোঝেন তাদের জীবন যাত্রা। আর শিখে নেন তাদের শাড়ি পরার ধরন। এ প্রসঙ্গে ডলির ভাষ্য, শাড়ি পরানোর জন্য তিনি যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন। প্রত্যেক নারী একে অন্যের থেকে আলাদা। তাদের গঠন আলাদা, রুচি আলাদা এমনকি শাড়ির ধরনও আলাদা। সবাই বলে, সাজ দিয়ে মেয়েদের মন জয় করা কঠিন। কিন্তু তিনি প্রত্যেকবারই এই কাজে সফল হয়েছেন।

ডলির শাড়ি পরানোর কয়েকটি ধরন। ছবি: সংগৃহীত

ডলির বেড়ে ওঠা, অণুপ্রেরণা ও নিজস্বতা

কলকাতার গৃহবধু হলেও ডলির জন্ম বেঙ্গালুরুতে। জীবনের শুরুতে শাড়ির প্রতি তেমন কোনো আগ্রহই ছিল না তার। আর পাঁচজন মেয়ের মতো নিজেও জিন্স, ট্রাউজার পরতেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন। বিয়ের পর থেকেই মুলত শুরু হয় শাড়ির প্রতি ডলির ভালোবাসা।

ডলি জানিয়েছেন, শাড়ি পরাতেও ভালোবাসতেন। কিন্তু এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু ভাবেননি কোনোদিন। শ্রীদেবীকে একদিন শাড়ি পরিয়ে দিলে, এই নায়িকা নাকি ডলিকে বলে তার হাতে জাদু আছে। চাইলেই শাড়ি পরার বিষয়টিকে শিল্পের রুপ দিতে পারে। এরপর ডলিরও মনে হলো, এভাবে ভেবে দেখা যেতে পারে।

প্রত্যেক শিল্পীরই নিজস্ব একটি ধরন থাকে। যে তরিকায় তার কাজ হয়ে ওঠে অনন্য। সঙ্গে অধ্যাবসায়ও থাকে। গত ১৫ বছর ধরে ডলি রোজ সকালে একটি ম্যানিকুইনকে শাড়ি পরিয়ে তার দিন শুরু করেন। সঙ্গীত সাধকের যেমন রেওয়াজ, ডলির কাছেও যেন তাই। শুধু তাই নয়, এই দীর্ঘ চর্চা ও অভ্যাস তাকে দিয়েছে এক অনবদ্য ক্ষমতা। একটি শাড়ি পরাতে ডলি সময় নেন মাত্র ১৮.৫ সেকেন্ড।

বউ সাজিয়েছেন ডলি। ছবি: সংগৃহীত

ভেঙেছেন চিরাচরিত নিয়ম
আগে শাড়ির সঙ্গে পেটিকোট পরাই চল ছিল। কিন্তু ডলি লক্ষ্য করেন, এখনকার সময়ে মেয়েরা পেটিকোটের থেকে শাড়ির নিচে জিন্স, লেগিন্স বা জেগিন্স পরতে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন। আর তা থেকেই নতুন ভাবনা আসে তার মাথায়।

তার আরেকটি বিখ্যাত উদ্ভাবন হলো মারমেড স্টাইলে শাড়ি পরানো। এক্ষেত্রে শাড়ি দিয়ে গোটা শরীর ঢেকে ফেললেও ডলির আঙুলের জাদুতে উদ্ভাসিত হয়ে থাকে কনের শরীরের প্রতি ভাঁজ। সাধারণত মিউজিক নাইটে এই ধরনের শাড়ি পরার বিশেষ চাহিদা থাকে। এর মাধ্যমে নাচ-গানের সময় শরীরের প্রতিটি মুদ্রার ভঙ্গি অনেক বেশি স্বচ্ছ ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

অনেকেই আবার চমকে ওঠেন, যখন ডলি একইসঙ্গে দুইটা শাড়ি পরিয়ে দেন। বাইরে থেকে দেখতে বিন্দুমাত্র ভারী লাগে না। অথচ দুই রকমের শাড়ির যুগলবন্দিতে শাড়ির নতুন রুপ চলে আসে।

ক্যাটরিনা কাইফকে শাড়ি পরাচ্ছেন ডলি জৈন। ছবি: সংগৃহীত

ডলিকে নিয়ে করা মন্তব্য:

তোমার আঙ্গুলে জাদু আছে: নীতা আম্বানি

শাড়িতে তখনই সবেচেয়ে বেশি মুগ্ধতা দেখায়, যখন তোমার হাতের ছোঁয়া পায়:দীপিকা পাড়ুকোন

তোমার উচিত সেফটি পিন এবং এর যাত্রা নিয়ে একটি বই লেখা: রাভিনা টেন্ডন

ইশ্বরই তোমাকে এই শিল্প উপহার দিয়েছে: শ্লোকা মেহতা

রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোনের বিয়েতেও এই নায়িকাকে শাড়ি পরিয়েছেন ডলি। ছবি: সংগৃহীত

সূত্র: ডলি জৈন ডটকম, ইনস্কিপ্ট, আনন্দবাজার পত্রিকা


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply