‘৪৭ বছর বয়স হয়েছে, একদিনও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারলাম না’

|

কামাল হোসাইন, নেত্রকোণা:

নেত্রকোণার কলমাকান্দা সীমান্তের পাহাড়ি টিলাঘেরা পাঁচপাড়ার গ্রামের শতাধিক পরিবার পানি সংকটে ভুগছে। ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি, আর টিলার নিচে তিন চাঁকের (চাঁক্কি) তৈরি অগভীর কুপের ময়লা পানিই শতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চললেও তাদের খোঁজ নিচ্ছেনা কেউই।

কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চেংগ্নী গ্রামের হতদরিদ্র পাঁচটি পাড়ার লোকজনের জন্য সরকারিভাবে টিউবওয়েল কিংবা গভীর নলকুপ তৈরি করে না দেয়ায় তাদের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি। গ্রামে স্বচ্চল পরিবারের লোকজনের সুবিধামত নিজ নিজ বাড়িতে একাধিক টিওবওয়েল দিলেও দরিদ্র লোকজন দিনযাপন করছেন ময়লা পানি পান করেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার ঘুরেও কোনো ফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

লেঙ্গুরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের টিলাঘেরা চেংগ্নীর টেংরা টিলাপাড়া, বাঙ চাকুয়া, বাতানগ্রী, কনকোণা, ধলধলার লোকজন ১০ থেকে ১২ বছর আগে নির্মিত একটি কুয়া থেকে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য ময়লা পানি সংগ্রহ করেন।

বাতানগ্রী পাড়ার ফাতেমা সাংমা (৬৫) জানান, এই তিন চাকার কুয়াতে কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৬ মাস পানিই থাকেনা। বছরের বাকি ছ’মাস চেংগ্নী ছড়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। ছড়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের কাছে অনুরোধ করে ছড়ার উৎস মুখ থেকেও পানি সংগ্রহ করে এনে জীবন ধারণ করেন তারা।

একই গ্রামের টেংরা টিলাপাড়ার জেমদিনী রাকসাম ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘৪৭ বছর বয়স হয়েছে। একদিনও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারলাম না।’

চেংগ্নী মাতৃমন্ডলীর পাষ্টার গিজিয়ন চিসিম (৬৫) জানান, কলমাকান্দা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে শুরু করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহ অনেকের কাছে ধর্ণা দিয়েও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি তারা।

সুবিনাথ সাংমা (৫৫) বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাছে আশা নেই। কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি উদ্যোগী হয়ে একটি টিওবয়েল বা গভীর কুয়া বসিয়ে দিতেন এই কয়টি পাড়ার মানুষের জন্য, তাহলে আমাদের দুর্ভোগ কমে যেত।

খাওয়ার জন্য এই ময়লা পানিই ভরসা ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর কয়েক হাজার মানুষের

লেঙ্গুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ভুঁইয়া জানান, চেংগ্নী এলাকায় পানির দুর্ভোগের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। তিনি বলেন, আসলে ওখানে প্রায় হাজার ফুট গভীর নলকুপ বসাতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাটির নীচ থেকে পাথর সরিয়ে যদিও বিকল্প হিসেবে একটি গভীর কুয়া বসানো যায় তাতেও ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।

সাইদুর রহমান মনে করেন, সরাসরি উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেই কেবল দ্রুত সময়ের মধ্যে পানির সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।

নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, ওই এলাকার আদিবাসী পরিবারের লোকজনের বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই এটা আমি জানতাম না,এখন খোঁজ-খবর নিয়ে এলাকায় সরকারিভাবে টিওবওয়েল কিংবা গভীর কুয়া তৈরির জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরিফুল ইসলাম জানান,বিষয়টি জানা ছিল না। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply