অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ

|

ছবি: সংগৃহীত

প্রচলিত বাজারের বাইরে নতুন বাজার অনুসন্ধানে সফলতা আসছে দেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক খাতে। চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ সময়ে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৩০৬ কোটি মার্কিন ডলারের। পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি সম্প্রসারণের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে গেছে। এ কারণে বৈশ্বিক পর্যায়ে পোশাকের যে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার ইতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক রফতানির ওপর পড়েছে। পাশাপাশি নগদ প্রণোদনা ও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নতুন নতুন বাজারে পোশাক রফতানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে শুধু জাপানের বাজারে ৫২ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার জাপানে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর এ সময়ে রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে ৩৪ কোটি ১২ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। গত অর্থবছরের একইসময়ে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ফলে বিগত বছরের একইসময়ের তুলনায় এ বছর রাশিয়ায় রফতানি বেড়েছে ৩৮ দশমিক ১০ শতাংশ।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের, এর আগের বছরে একইসময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে সেখানে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এই সময়ে ভারতের বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের। গত বছর একই সময়ের ভারত থেকে পোশাক রফতানি আয় ছিল ২৩ কোটি ১৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভারতে পোশাক রফতানি থেকে আয় বেড়েছে ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এছাড়া এসময়ে অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একইসময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে অপ্রচলিত এই বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।

এদিকে, মেক্সিকোতে আলোচিত সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে দেশটিতে এ খাতে রফতানি আয় হয়েছিল ৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের। বছরের ব্যবধানে দেশটিতে রফতানি আয় বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় দেশগুলো পোশাক রফতানির প্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এর বাইরে চিলি, চীন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার বাজার পোশাক রফতানির নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ দেশগুলোতে পোশাক রফতানি গাণিতিক হারে বাড়ছে।

তিনি বলেন, নতুন বাজারে পোশাক রফতানির ব্যাপারে উদ্যোক্তারা খুব আগ্রহী। বিজিএমইএ থেকেও রফতানিকারকদেরকে কেবলমাত্র প্রধানতম বাজারগুলোর ওপর নির্ভরশীল না থাকার বিষয়ে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন নতুন বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা সহায়তা বিশেষভাবে কাজে লাগছে বলে তিনি মনে করেন।

বিজিএমএই সভাপতি আরও বলেন, অপ্রচলিত বাজারে রফতানি সম্প্রসারণে নগদ প্রণোদনার পরিমাণ ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হলে রফতানি সম্প্রসারণে খুবই কার্যকরী হবে। একইসাথে তিনি পোশাক রফতানি বাড়াতে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশী মুদ্রার মান কমানোর আহবান জানান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply