আলোর স্বপ্নে এইচএসসি পরীক্ষায় ১৬ দৃষ্টিহীন

|

পাবনা প্রতিনিধি

১৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে পাবনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব অন্ধ যুবক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার জন্য শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ ও জাগির হোসেন একাডেমী কেন্দ্র থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

নরসিংদী জেলার আব্দুল্লাহ ও শিহাবুদ্দিন ভুইয়া, টাঙ্গাইলের আবুল কালাম আজাদ ও আবদুল্লাহ আল আমিন, গোপালগঞ্জের ইখতেয়ার মৃধা, জামালপুরের গোলাপ মল্লিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহাদত হোসেন, পঞ্চগড় জেলার রোকনুজ্জামান, দিনাজপুরের আব্দুল আজিজ, কুড়িগ্রামের ইমরান হোসেন, রাজশাহীর মনিরুজ্জামান, ময়মনসিংহ জেলার মোজাম্মেল, জয়পুরহাটের মোহাম্মদ আলী, বরিশালের হুমায়ুন কবির এবং পাবনার মনিরুল ইসলাম এই ১৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যান ট্রাষ্টের আশ্রয়ে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এ পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখে বলে শ্রুতি লেখকদের শোনান এবং শ্রুতি লেখকরা সেটি লিখে আবার তাদের পড়ে শোনান। একারণে তাদের জন্য তিন ঘণ্টার অতিরিক্ত মাত্র ২৫ মিনিট বেশি সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। এসময় যথেষ্ট নয় বলে তারা দাবি করেন । শিক্ষা বোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকদের অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা এবং বিভিন্ন বোর্ডের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে পদে পদে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।

এবার ৭ জনের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরে। পরীক্ষার তিনদিন আগে তারা জানতে পারে বোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকের অনুমোদন দিচ্ছে না। নির্ধারিত একজনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে ১৬ জন শ্রুতি লেখকের জন্য মোট ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করা থাকলেও নানা রকম তালবাহানা করে বোর্ড। অবশেষে পাবনার জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কায়সারুল ইসলাম বিষয়টা জানার পরে এ ব্যপারে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করেন। এরপর এই ৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগের দিন রাজশাহীতে গিয়ে বিষয়টা সমাধান করতে পারে। দরিদ্র এসব চোখের আলোহীন শিক্ষার্থী তাদের এ সংগ্রামে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক বাধা পেয়ে থাকে। সব বাধা ও প্রতিকুলতাকে জয় করে তারা সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। দরিদ্র এসব অন্ধদের শ্রুতি লেখকের সম্মানী তো দূরের কথা লেখা পড়ার করার ন্যুনতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। তার পরেও থেমে থাকেনি এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন। এ ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মত আরো প্রায় ৭২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যান ট্রাষ্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা পড়া করছেন।

এছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১২জন পথশিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা, ৮জন ৯ম শ্রেণীতে, ১০ম শ্রেণীতে ৭জন, একাদশে ৯ জন, ২ জন এমএ সহ বিভিন্ন শ্রেনিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অধ্যাপক আবুল হোসেন-চেয়ারম্যান, মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট পাবনা, তিনি এ তথ্য জানান। এ প্রতিষ্ঠানকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দেয়া হলে সারা দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে জানান তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply