বিচার চাওয়ায় ধর্ষণ, মামলার শাস্তি হত্যা!

|

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ছবিকে ঘিরে এখন সর্বত্র আলোচনায়। সবুজ ঘাসের ওপর লাল জাম পড়া ক্ষত-বিক্ষত এক নারীর মরদেহ দেখে শিউরে উঠছেন সবাই। হতভাগ্যের নাম বিউটি; বাড়ি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামে। চোখভরা স্বপ্ন নিয়ে কাজে যেতেন-আসতেন। সবই চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু কাজে আসা-যাওয়ার পথে বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা উত্ত্যক্ত করে বিউটির জীবনের শান্তি কেড়ে নিতে নষ্ট করতে থাকলো।

পরিবার জানায়, এই হয়রানির অভিযোগ করায় প্রতিবেশী, ২ সন্তানের জনক বাবুল মিয়া ২১ জানুয়ারি অপহরণ করে বিউটিকে। অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে ধর্ষণ করে বিউটি আক্তারকে। অনেক মিনতির পর ৯ ফেব্রুয়ারি গুরুতর অবস্থায় বিউটিকে ফিরিয়ে দেয় বাবুল মিয়া।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তার মা ইউপি সদস্য কলমচানকে আসামি করে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ৪টা মার্চ শায়েস্তাগঞ্জ থানা এ মামলা গ্রহণ করে। তারপরও শাস্তোগঞ্জ থানা পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ বিউটির স্বজনদের।

অপরদিকে বাবুল মিয়ার হুমকির পর আদালতে নিরাপত্তা চেয়ে বিউটির বাবা ১৭ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেন।

অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় ১৩ মার্চ বিউটিকে লাখাইয়ে নানার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে ১৬ মার্চ ফের অপহরণ করা হয় বিউটিকে। এরপর গত ১৭ মার্চ ব্রাহ্মণডোরা হাওরে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয় বিউটির মৃতদেহ।

বিউটি হত্যার ঘটনায় বাবুল মিয়া ও তার মা ইউপি সদস্য কলমচাঁনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা হয়। এরমধ্যে কলমচাঁনসহ দুইজন গ্রেফতার হলেও, এখনও পলাতক বাবুল মিয়া।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত, তাদেরকে আমরা বের করে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের কাঠগড়ার দাঁড় করানোর ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

এ ঘটনায় পুলিশের অবহেলাকে দায়ী করছেন হবিগঞ্জের সচেতন মহল। বিচারহীনতার কারণে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটছে বলেও মনে করেন তারা। হবিগঞ্জ সুজনের সাধারণ সম্পাদক ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, মামলা দায়ের করার পরে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেভাবে ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিলো। যদি ঐ সময় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতো বা আসামিদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে মেয়েটাকে জীবন দিতে হতো না।

বিচারহীনতাই কারণেই এ ঘটনা বারবার ঘটছে বলে মন্তব্য করেন নাট্যকার ও মানবাধিকার কর্মী রুমা মোদক।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply