গাইবান্ধায় করতোয়া নদীর ২০ পয়েন্টে ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

|

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাত-দিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে নদী থেকে বালু তোলার বাণিজ্যে মেতেছেন স্থানীয় একটি চক্র। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় স্থানীয় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হলেও বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়ে বরং তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে বালু উত্তোলন কার্যক্রম। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে প্রশাসনের ভূমিকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালির নির্মাণাধীন ব্রিজের পূর্ব পাশেই করতোয়া নদীতে ৩টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। একটু দুরেই সমসপাড়া গ্রামেও একাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার চিত্র দেখা গেছে। শুধু কাটাখালি ব্রিজ ও সমসপাড়াই নয়; করতোয়া নদীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে পুলপাড়া, চকরহিমারপুর, বগুলাগাড়ী, খলসি, কাইয়াগঞ্জ, শাকপালা, কাটাখালি, ধর্মপুর ও ফুলবাড়ি এলাকাতে।

নদীতে বসানো ড্রেজার মেশিনের সাথে মোটা পাইপ স্থাপন করে বালু তুলে এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরেও সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগসাজস করে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন বৃদ্ধি ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও বিভিন্ন এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক। হুমকির মুখে পড়েছে কাটাখালি ব্রিজ, বাঁধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ছাড়াও নানা স্থাপনা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। উত্তোলিত এসব বালু ফসলি জমিসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তোলিত অধিকাংশ বালু সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণ এবং রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ছয় লেনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। মূলত মহাসড়কের ছয়লেন কাজ শুরুর পর থেকেই নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের চিত্র বেড়েছে।

এদিকে, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে গত ৫ সেপ্টেম্বর ও ১৬ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুশীল চন্দ্র সরকার (সুশীল কুমার)। তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিভাগীয় কমিশনারসহ জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়। এ ছাড়া জেলার নদীর চর সমূহ থেকে বালু সংগ্রহের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি পাঠায় সহকারী সচিব। কিন্তু জেলা প্রশাসক বালু উত্তোলন বন্ধের পদক্ষেপে শুধু অভিযান পরিচালনায় জেল-জরিমানা এবং চর সমূহে বালু উত্তোলন সমীচীন নয় বলে প্রতিবেদন পাঠায় ভূমি মন্ত্রণালয়ে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে তৎপরতার কথা জানিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু সাঈদ বলেন, গত ৫ মাসে করতোয়া নদীসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৬০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫টি মামলায় বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের কাছে ৯ লাখ টাকার বেশি জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত একটি মামলাও হয়েছে। উপজেলাজুড়েই বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও বালু উত্তোলনকারীদের থামানো যাচ্ছেনা। এছাড়া স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে সচেতন মহল, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply