রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ খুনের রহস্য

|

রিয়াজ রায়হান:

একদিন বা এক মাস নয়, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল অন্তত পাঁচ বছর আগে। মিয়ানমারের মংডুতে করা চক্রান্ত বাস্তবায়ন হয় কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৮ জনের দল। ৫০ হাজার পিস ইয়াবার বিনিময়ে মুহিবুল্লাহকে হত্যার চুক্তিতে ঘাতকদের সহযোগিতা করে মুহিবুল্লাহর এক দেহরক্ষী।

মাত্র দুমাস পর উখিয়ায় লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ। যেখানে পাঁচ শর্তে মিয়ানমারে ফিরে যাবার ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গাদের নেতা হিসেবে অবস্থান পাকাপোক্ত হয় মুহিবুল্লাহর। এরপর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি।

উখিয়ার লাম্বাসিয়া ক্যাম্পের একটি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন মুহিবুল্লাহ। লাগোয়া ঘরটিতেই চলতো তার সংগঠন, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস বা এআরএসপিএইচের কার্যক্রম। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই ঘরেই সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তিনি।

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানে অন্তত ২৫ জনের একটি তালিকা পেয়েছে যমুনা নিউজ। যারা পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে নিখুঁতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। জানা যায়, কিলিং মিশনে ছিল আটজন। এর মধ্যে পাঁচজন অস্ত্রধারী। প্রত্যাবাসন নিয়ে আলাপের কথা বলে দেহরক্ষী মোরশেদকে দিয়েই ঘর থেকে ডেকে আনা হয় মুহিবুল্লাহকে। আগুন্তুকদের সঙ্গে মিনিটখানেক কথা বলার পরই আজিজুল গুলি করে মুহিবুল্লাহকে। এরপর আরও তিনজন পরপর কয়েকটি গুলি করে।

এর আগে ক্যাম্পের মূল প্রবেশ পথে পাঁচজন, আমতলী চেকপোস্ট এলাকায় পাঁচজন, মূল রাস্তায় পাঁচজন ও আরও পাঁচ থেকে ছয়জন টহলে থেকে পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও কিলিং মিশনে অংশ নেয়াদের পরিস্থিতি অবগত করে। আর পুরো ঘটনা তদারকি করেন রুহুল আমিন, যিনি আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরসার স্থানীয় কমান্ডার হিসেবে ক্যাম্পগুলোতে পরিচিত।

সেসময় ঘরেই ছিলেন মুহিবুল্লাহর ভাই, বোনসহ আত্মীয়রা। খুনের পর এপিবিএন সদস্য মোতায়েন থাকলেও এখনও প্রতিক্ষণ মৃত্যুভয় তাড়া করে তাদের।

উখিয়া থানায় হওয়া হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতারের কথা জানান তদারক কর্মকর্তা নাইমুল হক। এদের মধ্যে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরসার সম্পৃক্ততা দাবি করা হলেও তা মানতে নারাজ কর্মকর্তারা।

হত্যাকাণ্ডের আগে ক্যাম্পের বাইরে একাধিক বৈঠক করার প্রমাণও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ এর মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করার পর থেকেই আলোচনায় এসেছিলেন এই রোহিঙ্গা নেতা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply