হাতই নেই তবুও অদৃশ্য ব্যথা, আয়না থেরাপিতে মুক্তি

|

হাতই নেই তবুও অস্তিত্বহীন হাতে অদৃশ্য ব্যথায় প্রাণ যায় যায়, এমন মানসিক অনুভূতি যে, ব্যথার চোটে পাগল হয়ে যাবার দশা। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলেও সে অঙ্গের অনুভূতি পায়, এমনকি অনূভব করে অস্তিত্বহীন অঙ্গে প্রচণ্ড অদৃশ্য ব্যথা। এই ব্যথা উপশমের ওষুধ-ইঞ্জেকশন কিংবা অন্য কোনও প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিও স্বস্তি দিতে পারছে না। এরকম এক রোগীকে ব্যথা থেকে মুক্তি দিয়েছে আয়না থেরাপি।

জানা যায়, ভারতের কোন্নগরের বাসিন্দা রাজেনবাবু জুটমিলে কাজ করতেন। ডান হাত মেশিনে ঢুকে গিয়েছিল। প্রথমে ডাক্তাররা হাতটি বাঁচানোর চেষ্টা করলেও পরে ব্যথা কমানোর জন্য সেই অকেজো হাতটি কেটে ফেলে। কেটে ফেলার আগেই অবশ্য অসাড় হয়ে যাওয়া হাতটিতে ব্যাখ্যাহীন যন্ত্রণার অনুভব করে রাজন। চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন হাত কেটে ফেলে দিলে সুরাহা হবে। কিন্তু হয়নি। কাঁধের কাছ থেকে কেটে ফেলা সেই হাতেই প্রবল যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকেন রাজেনবাবু। এমনই যন্ত্রণা যে, খাওয়া-ঘুম শিকেয় ওঠে।

রাজনবাবু বলেন,  “যে হাতটা নেই, তাতেই অসম্ভব ব্যথা! কত হাসপাতাল ঘুরেছি। কত ওষুধ খেয়েছি। কিছুতেই কিছু হয়নি। দাড়ি কামাতে পারতাম না। গায়ে এক ফোঁটা জল পড়লে প্রাণ বেরিয়ে যেত। মনে হত, আত্মহত্যা করি।”

শেষ পর্যন্ত তাঁর শাপমুক্তি ঘটেছে আয়নার জাদুতে। রাজেনবাবুর চিকিৎসক ‘ইনস্টিটিউট অফ পেইন ম্যানেজমেন্ট’-এর কোর্স ডিরেক্টর ডাক্তার সুব্রত গোস্বামী জানালেন, “এই রোগের নাম ফ্যান্টম পেন। মানে অশরীরী ব্যথা। যে অঙ্গের অস্তিত্ব নেই, সেখানেই তীব্র ব্যথা।”

চিকিৎসকরা বলছেন, থেরাপির পদ্ধতি খুব সহজ। বাড়িতে বসেও যে কেউ এই অনুশীলন করতে পারবেন। রোগীকে প্রথমে আয়নার মাধ্যমে অক্ষত অঙ্গটির প্রতিবিম্ব (মিরর ইমেজ) দেখানো হয়। অনুপস্থিত অঙ্গ নড়াচড়া করলে যে ব্যথা হয় না সেটি মস্তিষ্ককে অনুভব করানো হয়। বিশেষ এক ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা হয়, যন্ত্রণাবিদ্ধ অঙ্গটির আদতে কোনও অস্তিত্ব নেই। ধীরে ধীরে ব্রেন তা বুঝতে পারে। সেই সঙ্গে যন্ত্রণাও কমতে থাকে।

মিরর থেরাপির কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুব্রত জানান, দেহের প্রতিটি অঙ্গকে সক্রিয় রাখার ভার মস্তিষ্কের এক-একটি অংশের। অঙ্গটি বাদ পড়লেও তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশটি কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে নিষ্ক্রিয় হয় না। মস্তিষ্কের ওই কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গটিকে স্বাভাবিক রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালায়। যার প্রতিক্রিয়ায় অশরীরী ব্যথার জন্ম। ওষুধ, ফিজিক্যাল ট্রিটমেন্ট, নার্ভ ব্লক, নিউরোমডিউলেশন, সার্জারি, কিছুতেই ব্যাথা যায় না।  মূলত রোগটি তৈরি হয় মাথায়। আয়না থেরাপির মাধ্যমে মস্তিষ্কেকে বুঝানো হয় আসলে অঙ্গটি নেই যেটিতে ব্যথা অনুভব করছে। আর এভাবেই অদৃশ্য ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে।

এ পর্যন্ত রাজেনবাবুর মতো প্রায় দশ জনকে এর সাহায্যে কার্যত নবজীবন দিয়েছেন ডাক্তার সুব্রত গোস্বামীরা।

 


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply