টোল পুনর্নির্ধারণ না করেই কাল উদ্বোধন হচ্ছে পায়রা সেতু

|

পায়রা সেতু, পটুয়াখালী।


স্টাফ রিপোর্টার:


কাল উড়ছে উদ্বোধনী পায়রা, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বাস্তবে রূপ নিয়ে পায়রা সেতু অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।

আগামীকাল রোববার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন পটুয়াখালীর স্বপ্নের পায়রা সেতু। উদ্বোধনের পরপরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পায়রা ফোরলেনের এ সেতুটি। তবে সেতুতে চলাচলের জন্য নির্ধারিত অতিরিক্ত টোল না কমানোয় হতাশ পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।

পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, সেতুটি উদ্বোধনের জন্য ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সাজসাজ রব বিরাজ করছে সেতুর উভয়পাড়ে। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করবেন। সেজন্য সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তত করা হয়েছে। যেখানে পটুয়াখালী পাঁচজন সংসদ সদস্য ছাড়াও বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

পায়রা সেতু প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর লেবুখালী নদীর উপর পায়রা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার চারশত ৪৭ কোটি টাকা। যার ৮২ ভাগ অর্থ বহন করছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট এবং এপেক ফান্ড।

২০১৬ সালের ২৪শে জুলাই নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া পায়রা সেতুর ৯৯ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট পায়রা সেতুর উভয়পাড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। নদী শাসনের কাজও প্রায় সম্পন্ন।


পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম আরও জানান, এ সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করার কারণ হলো নানা সুবিধা পাওয়া। ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ওভার লোডেড গাড়ির কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে পূর্বাভাস মিলবে এ মনিটরিং সিস্টেম থেকে। এছাড়া এটি দেশের দ্বিতীয় ব্রিজ, যা এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সিস্টেমে তৈরি করা হয়েছে। পায়রা নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ দশটি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এটিতে। যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে ঝুলন্ত মনে হবে। জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে। চারলেনের সেতুটির উভয় পাশে মোট ১২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

তবে টোল নির্ধারণ নিয়ে জেলার পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের মাঝে আছে ব্যাপক অসন্তোষ। ফেরির তুলনায় সেতুর ৭ গুন টোল নির্ধারণ গত ১৮ মার্চ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (টোল অধিশাখা) উপসচিব ফাহমিদা হক খান স্বাক্ষরিত এক গেজেটে সেতুটির টোল নির্ধারণ করা হয়। এতে পায়রা সেতুতে ট্রেইলার ৯৪০ টাকা, হেভি ট্রাক ৭৫০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ৩৭৫ টাকা, বড় বাস ৩৪০ টাকা, মিনি ট্রাক ২৮০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ২২৫ টাকা, মিনিবাস-কোস্টার ১৯০টাকা, মাইক্রোবাস ১৫০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন ১৫০টাকা, সেডান কার ৯৫টাকা, ৩-৪ চাকার যান ৪০ টাকা, মোটর সাইকেল ২০ টাকা, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ি ১০টাকা হারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

অথচ ওই সেতুর নীচে লেবুখালী নদী পারাপারে ফেরি ভাড়া মোটরসাইকেল ৫ টাকা, প্রাইভেটকার ৪০ টাকা, যাত্রীবাহী বাস ৫০ টাকা, বড় ট্রাক ২৫০ টাকা আদায় করা হতো। কিন্তু, ফেরি পারাপারে যাত্রীবাহী বাসের ভাড়ার তুলনায় সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭গুন বেশি। এত বেশি ভাড়া কেন নির্ধারণ করা হয়েছে তার সঠিক কোনো কারণ জানা নেই কারও।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply