মিতুর জন্মদিনে স্বামী আজিজুলের মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস

|

নেপালে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত নিউইয়র্ক প্রবাসী বিলকিস আরা মিতুর স্বামী আজিজুল হক দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

বুধবার বিমান থেকে প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে ইংরেজিতে লেখা হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

আজিজুল লেখেন, ‘আমার জান, আমার কলিজা, কেন তুমি আমাকে ভীষণ একা করে দিয়েছ? তুমি ছিলে আমার জীবনের সেরা পাওয়া। তুমি সবসময়, প্রতিটি দিন, প্রতিটি সেকেন্ড আমাকে পরিপূর্ণ করেছ। তুমি প্রতিমুহূর্ত আমার বেঁচে থাকার কারণ। তুমি তো জানতে, তা হলে কেন আমার বুক থেকে সারাজীবনের জন্য আকাশে লুকিয়ে গেলে।’

আজিজুল আরও লেখেন, ‘তোমাকে বলেছিলাম- আমি এতিম-অনাথ এবং তুমিই একমাত্র যে আমার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছ।’

এর পর তিনি লেখেন, ‘আমার কলিজা, আজ তোমার জন্মদিন। কিন্তু আমি কীভাবে সবসময়ের মতো আজ তোমার জন্মদিনটি উদযাপন করব। কীভাবে আমি কেকের টুকরো তোমার নাকে লাগিয়ে দেব, কীভাবে আমি দুষ্টুমি করে কেক খাইয়ে দেব?’

আজিজুল লেখেন, ‘বেহেস্তে তুমি শান্তিতে থাক। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া কিছুতেই আমি থাকতে পারছি না। কোনোভাবে বোঝাতে পারছি না।’

ফেসবুক পোস্টটির সঙ্গে আগের একটি জন্মদিনের ছবিও দিয়েছেন আজিজুল। পোস্টটি দেয়ার পর বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আজিজুল হকের কথা হয়।

আজিজুল জানান, তিনি এখন বিমানে আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছেন। কিন্তু কোনোভাবেই স্ত্রীকে ভুলতে পারছেন না। কথাগুলো বলার সময় তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

এর আগে বুধবার বিকালে নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগমুহূর্তে আজিজুল হক জানান, স্ত্রী মিতুকে শেষ দেখতে এবং তার মহদেহ শনাক্ত করে লাশ গ্রহণ করতে তিনি দেশে যাচ্ছেন। দেশে পৌঁছেই নেপালে যাবেন।

টেলিফোনে কথা বলার সময় আজিজুল বারবার কেঁদে উঠছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার বাবা-মা নেই, আত্মীয়স্বজন নেই, আমার জীবনে ছিল শুধু স্ত্রী মিতু। আমি তাকে খুব ভালোবেসেছিলাম।

তিনি আরও বলেন, ‘মিতুর সুবিধার জন্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। মিতু বলেছিল, পড়াশোনার ব্যস্ততায় সে খুব ক্লান্ত। তাই দেশ থেকে ঘুরে আসতে চায়। দেশে যাওয়ার জন্য সে আমার কাছে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু আমি কেন যে অনুমতি দিয়েছিলাম!’

গত সোমবার নেপালের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত স্ত্রী মিতু তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল বলে জানান আজিজুল।

তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে তার বিভিন্ন রকমের ছবি আমাকে ট্যাগ করছিল। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ছবি, ঘুরে বেড়ানোর ছবি, সব…। কিন্তু সে যে নেপাল যাচ্ছে এ কথাটি আমাকে বলেনি।

আজিজুল আরও জানান, নেপালে বিমান দুর্ঘটনার আগে-পরে ঘণ্টা তিনেক মিতুর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ খোঁজখবর নেই, তাই মিতুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তার সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আজিজুল জানান, নেপালে বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনে এবং মিরপুরে বস্তিতে আগুন লাগার খবরে মনটা খুব খারাপ হয়েছিল তার। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্টও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না তার স্ত্রীর করুণ পরিণতির কথা।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (নিউইয়র্ক সময় সোমবার মধ্যরাতের পর) পত্রিকায় বিলকিস আরা মিতুর নাম দেখে আমার সন্দেহ হয়। এর পর আমি ঘটনা জানতে পারি। তার পর কয়েক ঘণ্টা ঘোরের মধ্যে কেটেছে। ওই সময়ের কথা আমার মনে নেই। সম্ভবত আমার হুশ ছিল না।

সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়ে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫২ জন নিহত ও ১৯ জন আহত হন।

ওই বিমানের যাত্রী ছিলেন রাজশাহীর সপুরা এলাকার নওদাপাড়া রোডের মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া ও মনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী বিলকিস আরা মিতু (২৬)।

কাঠমান্ডুতে এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply