পরীমণিকে নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরীর কবিতা

|

পরীমণিকে নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরীর কবিতা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর যে কজন তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তার মধ্যে বরেণ্য লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী একজন। পরীমণির মুক্তি জন্য সরব ছিলেন তিনি। শাহবাগ, প্রেস ক্লাবসহ যেখানে পরীমণির জন্য মানববন্ধন হয়েছে, সেখানেই লন্ডন থেকে তিনি মোবাইল ফোনে বক্তব্য দিয়েছেন। পরীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

এবার আবদুল গাফফার চৌধুরী চিত্রনায়িকা পরীমণিকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবিতার নাম ‘পরীমণি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না’। প্রেম, বিচ্ছেদ, মাদক মামলায় আটক, প্রেফতার, জামিনে ছাড়া পাওয়াসহ সেই কবিতায় ঠাই পেয়েছে পরীমণি তেজস্বিনী মনোভাবের পটভূমি, যা তিনি নিজের মতো করে প্রকাশ করেছেন।

পরীমণিকে নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা ‘পরীমণি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না’ শিরোনামের কবিতাটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

পরীমণি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না

তুমি আমার জন্য কেঁদেছো, শরতের আকাশের
চুপিসারি কান্না
যা শিশির হয়ে টুপটাপ ঝরে।
আমি রোগশয্যায় শুয়ে শুনেছি সেই রোদন
তুমি কেন আমার জন্য কাঁদলে
আমি টেলিফোনে শুনেছি তোমার সেই কান্না
নায়াগ্রায় দাঁড়িয়ে যে জলপ্রপাতের
শব্দ শুনেছিলাম
তোমার কান্না সেই শব্দের সংগীতকে স্তব্ধ করেছে।
এখানে বড় ঠাণ্ডা, সেই ঠাণ্ডায় তোমার কান্না
উষ্ণ জলপ্রপাতের কাজ করেছে
আমার হৃদয়ে।

পরীমণি, তুমি আমার জন্য কেন কাঁদলে
কেন হৃদয় দিয়ে হৃদয় বাঁধলে
ওরা তোমাকে বলে চরিত্রহীনা, আকাশনীলা পাখি
আমি জানি, তুমি শরতের শিশির ধোয়া
শিউলির মতো সুচরিতা।
ছবি দেখেছি, জেল থেকে বেরিয়ে আসছো
দুই হাত ঊর্ধ্বমুখী জোয়ান অব আর্কের মতো
ওরা তোমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল
তুমি স্ফিংসের মতো জেগে উঠেছ
দুই ডানায় আগুনের ফুল।

পরীমণি, ওরা তোমাকে দ্রৌপদী বানাতে চেয়েছিল
তুমি হয়ে গেলে দয়মন্তী।
তোমার কান্না আমার মগ্নচৈতন্যকে স্পর্শ করেছে
তোমার চোখের কান্নায় দেখেছি আমার মায়ের
চোখের জল।
তুমি তেরো নদী সাত সমুদ্র পেরিয়ে
আমাকে সিক্ত করলে মায়ের সেই চোখের জলে।
তোমার কান্না আমার বেদনাকে
ছুঁয়ে গেছে।
তুমি স্কাইলার্কের গান শুনেছ
বিলাতের বসন্তের বাগানে?
সুন্দরী পাখিটির কণ্ঠে কান্নাই গান
তুমি ওই স্কাইলার্কের মতো
আমাকে তোমার কান্না শোনালে
কান্না নয় গান, চোখের জল নয়
হৃদয়ের প্লাবন।
ভারত মহাসাগর পেরিয়েছে
তোমার কান্না, বঙ্গোপসাগরেও
বনানীর জলপাই রঙের বাড়িটা ছেড়ে
চাঁদপুরের পুরোনো বন্দরটা পেরিয়ে
মেঘনার জলকে টেমসের সঙ্গে মিশিয়ে
কার্তিকের চাঁদ হয়ে ঝুলে আছে
আমার রোগশয্যার বারান্দায়।

পরীমণি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না
মায়ের মতো ভালোবাসার
দুবাহু বাড়ায়ে দিও না
ভালোবাসা বড় দুর্লভ সৌরভ
সুগন্ধির দোকানে কখনো পাবে না।

[লন্ডন, নর্থ উইক পার্ক হাসপাতাল, ২৯.৯.২১]

এনএনআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply