ত্রিশ বছর পর ডাঙায় ঠিকানা পাচ্ছে ‘মানতা’ সম্প্রদায়

|

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে মানতা সম্প্রদায়ের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

ত্রিশ বছর নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী মানতা সম্প্রদায় এখন সামাজিক পরিচয় পাওয়ার অপেক্ষায়। যাদের পরিবার গঠন, জন্ম মৃত্যু সবই ছিল নৌকায়। তাদের ঠিকানা হবে এবার ডাঙ্গায়। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় তাদেরকে দেয়া হবে সব ধরনের সুযোগ। পাল্টে যাবে তাদের জীবনধারা।

তাদের জীবন চলে জোয়ার আর ভাটার ছন্দে। নিজেদের কোনো জমি না থাকায় চিরকালই এদের বসবাস ছিল নৌকায়। নদীর সাথে এদের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। শুধু মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করাই এদের পেশা। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মুসলিম এ জনগোষ্ঠীর নাম ‘মানতা সম্প্রদায়’। আবার ‘ভাসান’ বা ‘ভাসমান’ বলেও ডাকা হয় এদের।

পটুয়াখালীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে এ রকম শতাধিক পরিবারের সদস্যরা নদীর একঘাটে রান্না করে আরেক ঘাটে গিয়ে খাবার খায়।

ডাঙ্গায় বসবাসের লক্ষ্যে মুজিববর্ষের উপহার হিসাবে এদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ২৯টি পাকা ঘর। এ খবরে সবাই আনন্দিত। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্মের স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পাবে তারা।

ঘর নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। চরমোন্তাজ লঞ্চঘাট সংলগ্ন সরকারি খাসজমিতে এসব ঘর নির্মাণ প্রায় শেষ। কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবে তারা।

চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হানিফ বলেন, আমাদের এখানে মানতা শ্রেণির লোকজন প্রায় ৩০ বছর ধরে নদীতে বা নৌকায় থাকতো। প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের এসব ঘরে ৩১টি পরিবার তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই এখানে বসবাস শুরু করতে পারবে।

ইতোমধ্যে এই সম্প্রদায়ের ঝড়ে পড়া শিশুদের জন্য বেসরকারিভাবে একটি বোডস্কুল চালু হয়েছে। যার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করছে মানতা সম্প্রদায়ের শিশুরা। এতে পাল্টে যাবে তাদের জীবনধারা। তবে সব পরিবারকে ঘরে উঠানোর পরামর্শ স্থানীয়দের।

প্রায় ত্রিশ বছর পর এদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে সরকারি বিভিন্ন খাদ্য সহায়তার আওতায় আসছেন তারা। এদের জীবনমান উন্নয়নে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে আরও ঘর নির্মাণের আশ্বাস সরকারি কর্মকর্তাদের।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাশফাকুর রহমান বলেন, তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার তাগিদ থেকে তাদেরকে ভোটার করা প্রয়োজন ছিল। ভাসমান থাকায় তারা কোনো ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিল না। এ জন্য তাদেরকে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তাদেরকে নতুন করে ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এরপরেই আমরা তাদেরকে অন্য সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনতে পেরেছি।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply