শিক্ষার্থীদের চুল কর্তনকারী সেই শিক্ষিকার তিন পদ থেকে পদত্যাগ

|

ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অভিযুক্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার ওপর অর্পিত ৩টি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি এদিন রাতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল এ পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ বা পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সাথে তারা ৪ দফা থেকে সরে এসে এখন ১ দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী অপসারণ বা পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস-১ এ আমরণ অনশন শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে রবির শিক্ষার্থী হাসিব জানায়, রবির ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। সেই সাথে তার স্থায়ী অপসারণ বা পদত্যাগের দাবিতে আমরা বুধবার সকাল থেকে রবি ক্যাম্পাস-১ এ আমরণ অনশন শুরু করবো। তিনি অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আমরণ অনশন চলবে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্ররা জানান, গত রোববার দুপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন আগে থেকে কাঁচি হাতে পরীক্ষার হলের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশের সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের মাথার সামনের অংশের বেশ খানিকটা চুল তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এভাবে একে একে ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এরপর পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের পরিবার তুলে গালিগালাজ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হয়।

এছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুরে পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করার চেষ্টা করলে রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে তিনি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিনকে তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও রবি থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার হুমকি দেন। এতে তার শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তুহিন সোমবার রাত ৭টার দিকে দ্বারিয়াপুরের শাহমুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে ৩৫টি ঘুমের বড়ি একসাথে গুড়ো করে সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। রাত ৮টার দিকে তার সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে সে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা এখনও আশংকাজনক বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই রবি ক্যাম্পাসে ছুটে এসে বিক্ষোভ করে। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের এ বিক্ষোভ চলে। পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা আবারও বিক্ষোভ শুরু করলে রবি ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।

এ বিষয়ে রবির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ ও রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ইয়াসমিন বাতেন মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply