শিশুকে হাঁড়িতে ভাসিয়ে পোলিও খাওয়াতে নিলেন বাবা

|

ছবি: সংগৃহীত

লাগাতার বৃষ্টিতে গ্রামের মাটির রাস্তা এখন জলাশয়। বাড়ির চতুর্দিকে পানি। সদ্য বাবা হওয়া নিজামুদ্দিন মোল্লা তাই কার্যত ঘরবন্দি। এমন পরিস্থিতিতেই হাঁড়িতে ভাসিয়ে শিশুকে নিয়ে পোলিও টিকা খাওয়ালেন তিনি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

খবরে বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ক্যানিং-২ নম্বর ব্লকের সারেঙ্গাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহেশ্বর সাবসেন্টার এলাকায় রোববার এমন ঘটনা ঘটেছে।

পানি যতই ঘিরে ধরুক, দেরি করতে চাননি ব্যাগ তৈরির কারিগর নিজামুদ্দিন। নবজাতককে বড় মুখওয়ালা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে শুইয়ে জলে ভাসিয়ে শিশুকে নেন তিনি। কাঁধে চাপিয়ে নেন আড়াই বছর বয়সের বড় ছেলে শামিমকেও।

তিনি বলেন, বাচ্চা দুটোকে পোলিও তো খাওয়াতেই হবে। তাই এভাবেই পৌঁছে গেলাম।

আবার শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, ভাবলেই শিউরে উঠছেন বাসিন্দারা। পোলিও টিকা খাওয়াতে এদিন সেখানেই নবজাতককে হাঁড়িতে ভাসিয়ে নিয়ে আসতে দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই।

কোথাও কোমরসমান, কোথাও হাঁটুসমান পানিতে নেমে বাচ্চাদের পোলিও টিকা খাওয়াতে খাওয়াতেই নিজামুদ্দিনদের এলাকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারা ছিলেন একটু উঁচু মূল রাস্তায়। যে মাটির রাস্তা ধরে নিজামুদ্দিনের বাড়ির সামনে যেতে হবে, সেখানে প্রায় এক কোমর পানি। আর ওই যুবকের বাড়ির সামনে পানি বুকসমান। তাই ঝুঁকি নেননি স্বাস্থ্যকর্মীরা।

স্বাস্থ্যকর্মী সোনালি জানান, আচমকাই তারা দেখেন পানিতে ভাসানো একটি হাঁড়ি ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন নিজামুদ্দিন। পিছনে অন্য একজনের কাঁধে তার বড় ছেলে। প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। পরে বুঝলাম হাঁড়িতে করেই তার বাচ্চাটা নিয়ে আসছে।

স্বাস্থ্যকর্মী নমিতা জানান, শিশুকে ওইভাবে আনতে দেখে তারাও মূল রাস্তা থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে যান। নিজামুদ্দিনের কাছে জানতে চান, হাঁড়িতে করে কেনো? তখন নীজামুদ্দিন তাদের জানান, স্ত্রী সাফিয়া খাতুনের পানি ঠেলে আসার ক্ষমতা নেই। আবার তিনি নিজেও ১৫ দিন বয়সের ছেলেকে কোলে নিয়ে পানি ঠেলে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন। কোনোভাবে বাচ্চাটি যদি পড়ে যায়! তাই কর্মীদের ডাক শুনেই বাড়িতে থাকা বড় মুখের হাঁড়িতে ছেলেকে কাঁথায় মুড়িয়ে শুইয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন নিজামুদ্দিন।

রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, সাধারণত মায়েরাই বাচ্চাদের পোলিও খাওয়াতে নিয়ে আসেন। সেখানে একজন বাবা দুর্যোগের মধ্যে এভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এটা খুবই প্রশংসার।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply