ফেসবুকে মন্তব্য: ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী

|

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে বেফাঁস কথা লিখে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহানা মিলি (৩২)। ইতোমধ্যে তাকে জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এবার মিলির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা। তিনি জানান, এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গত শনিবার মিলি তার ফেসবুকে দলের শীর্ষ স্থানীয় পদের এক নেতাকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। এতে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। ওই দিন ও পরের দিন অনলাইনে একাধিক নিউজ পোর্টালে তার পোস্টের বিষয়বস্তু নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিতর্কের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মিলিকে অব্যাহতি দেয়ার তথ্য জানায় মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‌‘ফারহানা মিলি তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অসৌজন্যমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেজন্য বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তার এই সংগঠন পরিপন্থী, সংগঠন বিরোধী এবং অসৌজন্যমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

এ বিষয়ে মাহমুদা বেগম সাংবাদিকদেরকে বলেন, মিলি অনেকদিন ধরেই অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। তার সর্বশেষ স্ট্যাটাসে সংগঠনের আচরণবিধি চূড়ান্তভাবে লঙ্ঘন করেছে। সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে সংগঠনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি মিনারা আলম বলেন, ‘মিলি নিজেও সোমবার পদত্যাগ করেছে। তাকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে। তবে কী কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সেটি কেন্দ্রের তারাই ভালো বলতে পারবে। আমি কিছু জানিনা।’

বিভক্ত জেলা সংগঠনে মিলি সভাপতির গ্রুপেই ছিলেন। জানা যায়, গত ৩/৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া মিলিকে নিয়ে আগে থেকেই দলের মধ্যে নানা বিতর্ক ছিল। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তিনি ‘ফেসবুক নেত্রী’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। ক্ষণে ক্ষণে স্ট্যাটাস আর ছবি পোস্ট করা তার প্রতিদিনের রুটিন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে প্রায় নানা আপত্তিকর মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ অনেকে।

স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, এক লেখায় মিলি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও অবমাননাকর কথা লিখেছিলেন। এসব নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।

২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মিলির বিরুদ্ধে মামলা করেন জেলা যুব মহিলা লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মুক্তি খান। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, মিলির গ্রুপের সদস্যরা একই বছরের ২৬ মার্চ তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।

এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত এক হাজার টাকার নোট আগুনে পোড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ঘটনায় মিলির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর মামলা হয়। আইসিটি আইনে সদর থানায় মামলাটি করেন জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মশিউর রহমান লিটন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, আমাকেও ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণ করে চরম আপত্তিকর কথা সে ফেসবুকে লিখেছে। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা অনুমোদনের জন্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশে আরেকটি মামলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ যে ফেসবুক পোস্ট নিয়ে এত বিতর্ক তাতে গত শনিবার লিখেছেন, ‘রাজনীতি বুঝুক না বুঝুক, সেক্সনীতি বুঝলেই বাপের বয়সী সাধারণ সম্পাদকের কোলে বসে ফুর্তি করাটাই রাজনীতিতে পদবী পাওয়ার কাজ দেবে! শিক্ষিত না হলে দোষ নাই, একাধিক নেতা আর ব্যবসায়ীদের শারীরিক সুখ দিতে পারলেই পদবী পাওয়া যাবে!’ তিনি আরও লিখেন, ‘মঞ্চে দাঁড়িয়ে দুই চারটা রাজনৈতিক ভালো কথা বলতে না পারলেও হোটেলে গিয়ে বাচ্চাদের ভঙ্গিমায় প্রেমালাপ পারলেই রাজনীতি হবে! স্বামীর রোজগারে ঠিকমত বাসাভাড়া আসবে না, কিন্তু জীবন যাপনের স্টাইল লাখ টাকার বাজেটে করতে পারাটাই রাজনৈতিক স্বার্থকতা তাদের জন্যে!…’


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply