লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের সৈন্য ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে রাশিয়া

|

লিবিয়ার একটি গ্রামের একজন তার আত্মীয়ের মৃতদেহের ছবি দেখাচ্ছিলেন বিবিসিকে।

লিবিয়ার অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে দেশটির বিদ্রোহীদের সহায়তা করেছে রাশিয়া। বিবিসির একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে জেনারেল হাফতারকে লিবিয়ান সামরিক বাহিনীর (ন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফোর্সেস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে ওয়াগনার গ্রুপ নামের একটি সংগঠন, যেটি পরিচালিত হয় মস্কো থেকে। বিবিসি জনায়, লড়াইটিতে অন্তত ১ হাজার ভাড়াটে রুশ সৈন্য অংশ নেয়, এমনকি রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও পাঠানো হয়।

ওই যুদ্ধে লিবিয়ান ন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফোর্সেসের সাথে লড়াইয়ের মাধ্যমে হাফতার বাহিনী বেশকিছু এলাকা দখলে নেয়। তখনই অভিযোগ উঠেছিল, বিদেশি সাহায্য নিয়েই জেনারেল হাফতার ওই লড়াইয়ে লিবিয়ান বাহিনীকে মোকাবেলা করেছিল। এবার ব্রিটিশ গণমাধ্যমটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেই অভিযোগেরই সত্যতা উঠে এসেছে।

জিএনএ ফোর্সেসের সাবেক আর্টিলারি কমান্ডার হাইথাম ওয়াইফাল্লি বলেন, শুরু থেকেই তারা খুবই আগ্রাসী ছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম এরা লিবিয়ার নয়। এদের অস্ত্রও ছিলো ভিন্ন রকমের। যেটা সাধারণ লিবিয়া কিংবা এই অঞ্চলে আগে ব্যবহৃত হয়নি। যেমন ফিল্ডগান এবং গাইডেড মিসাইল।

বিবিসি বলছে, হাফতার বাহিনীর পক্ষে লড়াই করতে ভাড়াটে সৈনিক বা মার্সেনারি হিসেবে যাদের লিবিয়ায় পাঠানো হয়, তাদেরই একজনের ফেলে যাওয়া ট্যাব পেয়েছে বিবিসি। আর তখন থেকেই শুরু হয় বিবিসির অনুসন্ধান। বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াগনার গ্রুপ নামে একটি মার্সেনারি সংগঠনের প্রায় ১ হাজার সদস্য যোগ দিয়েছিল ওই লড়াইয়ে। তাদের জন্য ট্যাংক থেকে শুরু করে শত শত একে-৪৭, এবং গাইডেড মিসাইলের অস্ত্র সরবরাহ করা হয় রাশিয়া থেকে।

ন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফোর্সেসের জেনারেল ওসামা জুয়াইলি বিবিসিকে জানিয়েছেন, যুদ্ধের সময়ই তারা খেয়াল করেছেন, কিছু সৈন্যের আকৃতি এবং লড়াই করার ধরন লিবিয়ানদের থেকে আলাদা। তারা ছিলো খুবই আগ্রাসী এবং বর্বর। তিনি বলেন, যখন রকেট কিংবা ভারি মেশিনগান দিয়ে ওরা আমাদের সাথে পেরে উঠলো না তখনই দূরপাল্লার কামান থেকে হামলা হলো। যেটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিলো। তারপর আমরা বুঝলাম ওই যোদ্ধারা সবাই রুশ।

যদিও বাস্তবে কাগজে কলমে ওয়াগনার গ্রুপের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে বিবিসি বলছে এই সংস্থার সাথে অন্তত ১০ হাজার মার্সেনারি কাজ করছেন। তবে এদের সক্ষমতা যে কোনো পেশাদার সেনাবাহিনীর মতোই। সাবেক এক রুশ মার্সেনারি জানান, ওয়াগরার গ্রুপের মূল লক্ষ্য হলো রাশিয়ার বাইরে বিভিন্ন দেশে রুশ স্বার্থ রক্ষা করা। সেটা সরাসরি যুদ্ধ হোক কিংবা বিক্ষোভ বা সহিংসতা। সাবেক সেনা সদস্য এবং যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা সাধারণত মার্সেনারিতে যোগ দেন। আবার অনেকে দেশপ্রেম থেকেও যোগ দেন বলেও জানান তিনি।

রাশিয়া ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলের একজন বিশ্লেষক জানান, এ ধরনের মার্সেনারি বা ভাড়াটে সৈন্যদের সংগঠনের কাগজে কলমে কোনো অস্তিত্ব না থাকার কারণ, যেন ব্যর্থ হলে তাদের সাথে সম্পর্ক অস্বীকার করা যায়। তবে সফল হলে তাদের সাহায্য করা অব্যাহত থাকে।

ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। এছাড়া সিরিয়া, মোজাম্বিক এবং সুদানেও এই সংস্থার বিভিন্ন তৎপরতার প্রমাণ মেলে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply