‘ধুর বেডি! পোলাপানে ভাত দিলে কি আর রিকশা চালাই?’

|

স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:

তপ্ত রোদ। পশু-পাখি, মানুষজন যখন গরমে হাঁপিয়ে উঠছিলো তখন রিকশার প্যাডেল চাপতে চাপতে জীবনের পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে বাবা আব্দুস সালাম (৭২)। তিনি নেত্রকোণা সদরের সিংহের বাংলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাংলা গ্রামের বাসিন্দা। ছেলেমেয়েরা সবাই বিবাহিত, ঢাকায় থাকে।

শুক্রবার (৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রিকশায় করে চালের বস্তা নিয়ে যাচ্ছিলেন কোথাও। বিষয়টি চোখে পড়ে নেত্রকোণা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারের। তিনি যাচ্ছিলেন সদরের সিংহের বাংলা ইউনিয়নের টিকা কেন্দ্র পর্যবেক্ষণে। বৃদ্ধ রিকশা চালকের কষ্ট দেখে গাড়ি থেকে নেমে রিকশা থামালেন। জিজ্ঞেস করলেন এতো রোদে রিকশা চালাচ্ছেন কেন? ছেলে মেয়ে ভাত দেয় না?

আব্দুস সালামের সরল উত্তর ‘ধুর বেডি! পোলাপানে ভাত দিলে কি আর রিকশা চালাই?’ ভাতের দায়িত্ব কেউ নেয় না। তাই এই বয়সেও প্যাডেলচালিত রিকশাই অবলম্বন। আব্দুস সালাম জানান, নিজের ও স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্য রিকশা চালান তিনি।

জানতে চাইলে আব্দুস সালাম বলেন, পথ দিয়ে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়ি থামতে দেখে প্রথমে ভয় পেয়েছিলেন, লকডাউনে রাস্তায় দেখে আবার সাজা দেয়া হবে কিনা! পরে উনি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) খাবার জিনিসপত্র দিয়ে গেলেন। আব্দুস সালাম বলেন, আমি খুব খুশি হয়েছি। নিজের সন্তানও খাবার দেয় না; রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছি দেখে আমাকে এসব দিয়ে গেছে। এমন ভালো মানুষ জীবনেও দেখিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা জানালেন, সিংহের বাংলা ইউনিয়নের নারায়ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে চাচার সাথে দেখা। তিনি রিকশায় করে ২৫ কেজি ওজনের কয়েকটি চালের বস্তা একজনের বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে প্যাডেল চালিত রিকশায় চালের বস্তা টানতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। গাড়ি থেকে নেমে তাই বৃত্তান্ত জিজ্ঞেস করেছিলেন এই কর্মকর্তা। চাচা জিজ্ঞস করতেই জানালেন, ছেলেমেয়েরা ভাত দেয় না। সবাই নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

মাহমুদা আক্তার বলেন, মনে হলো একজন পিতা, দায়িত্ব নিয়ে ৫ সন্তান বড় করে বিয়ে দিয়ে সংসারী করে দিলেন; আর তারা ৫ জন মিলেও সেই পিতার দায়িত্ব নিতে পারলো না!

তিনি আরও বলেন, আমি যে এত কিছু খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করছি উনি একবারও কোনো সাহায্য করার কথা বলেননি। উনি বয়সের ভারে নত হলেও কারো কাছে সাহায্য চেয়ে নত হননি দেখে খুব ভালো লাগলো। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সামগ্রী যখন উনার হাতে তুলে দিলাম উনি এতটাই খুশি হয়েছেন যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। বয়স্ক ভাতার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানলাম, বছর খানেক ধরে তাও পাচ্ছেন না। বিষয়টি সমাধানের জন্য নাম ঠিকানা নিয়ে আসলাম যাতে সমস্যার সমাধান করা যায়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply