নরসিংদীতে ফোনে ডেকে নিয়ে কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা

|

তুচ্ছ ঘটনায় নিহত হয়েছেন কলেজ ছাত্র শ্রাবণ মিয়া (২২)।

ষ্টাফ রিপোর্টার,নরসিংদী:

নরসিংদীর মনোহরদীতে মো. শ্রাবন মিয়া (২২) নামের এক অনার্স পড়ুয়া ছাত্রকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন নামের আরও এক যুবক।

আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুরে নিহতের বাবা মো. শাহজাহান বাদি হয়ে দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মনোহরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে গতকাল সোমবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মনোহরদীর একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের একদুয়ারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত মো. শ্রাবন মিয়া নরসিংদীর শিবপুরের আবদুল মান্নান ভূঁইয়া কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের মো. শাহজাহানের ছেলে।

মামলার আসামি দুজন হলো, হৃদয় মিয়া ও মৃদুল মিয়া। এই দুজনকে মামলা হওয়ার আগেই অভিযান চালিয়ে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদের দুজনকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, গত ২৫ জুলাই শিবপুরের লাখপুর বাজার এলাকার শীতলক্ষা নদীতে একদল কিশোর-যুবক ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে নৌকায় আনন্দভ্রমণ করছিল। ওই সময় কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমান আদালত সেখানে অভিযান চালায়। ওই অভিযানে নৌকাটিতে অবস্থানরত ৭১ জন কিশোর-যুবককে আটক করা হয়। পরে অপ্রাপ্তবয়স্ক ৩১ জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় এবং ৪০ জনকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। তাদের মধ্যে শ্রাবন ও সাখাওয়াৎ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে চলে আসায় তাদের অর্থদণ্ড দিতে হয়নি। অথচ হৃদয় ও মৃদুলসহ অন্যদের জরিমানার টাকা দিতে হয়েছে। এ নিয়ে হৃদয় ও মৃদুলের সঙ্গে শ্রাবন ও সাখাওয়াতের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর জের ধরেই গতকাল রাতে শ্রাবনকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ফোন পাওয়ার পর শ্রাবন আর সাখাওয়াত একটি মোটরসাইকেলে করে একদুয়ারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে হৃদয় ও মৃদুলসহ সাতজনের সঙ্গে ওই দুজনের কথা কাটাকাটি হয়। উত্তেজনার একপর্যায়ে তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে তাদের দুজনকে পেটাতে শুরু করে। এ সময় শ্রাবন মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে চলে যাওয়ার সময় মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে উপর্যুপরি মারধর করেন ওই সাতজন। পরে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মনোহরদী থানার পুলিশ সুরতহাল শেষে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। অন্যদিকে আহত সাখাওয়াত হোসেনকে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আহত মো. সাখাওয়াৎ জানান, ফোন পেয়ে শ্রাবনের মোটরসাইকেলে করে আমরা দুজন একদুয়ারিয়াতে গিয়েছিলাম। তাদের জরিমানা দিতে হয়েছে, অথচ আমাদের দিতে হয়নি-এ কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত চাইছিলেন তারা। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে আমাদের দুজনকেই উপর্যুপরি মারধর করা হয়। ঘটনার সময় আমি কোনরকমে দৌড়ে পালিয়ে আসতে পারায় এখনো বেঁচে আছি।

নিহতের বাবা ও মামলার বাদি মো. শাহজাহান বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় আমার ছেলেকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলল। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, এই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply