বৃষ্টি নিয়ে উদ্বিগ্ন আবহাওয়াবিদরা

|

বিশ্বজুড়ে টানা ভারি বর্ষণে চিন্তিত গবেষকরা।

বিশ্বব্যাপী একের পর এক দেশে নজিরবিহীন ভারি বৃষ্টিপাত নিয়ে উদ্বিগ্ন আবহাওয়াবিদরা। তিনদিনের ব্যবধানে বৃষ্টিপাতের সব রেকর্ড ভেঙেছে দুই প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারত। এখনও পানিবন্দি লাখো মানুষ। চলতি মাসেই রেকর্ড বৃষ্টি দেখেছে জার্মানিও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের এমন ঘনঘটা।

একদিনে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই, বলা হয়, অতি ভারী বর্ষণ। সেখানে ভারতের মহারাষ্ট্রে বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০০ মিলিমিটার। উপকূলীয় রাজ্যটির ইতিহাসে এতো বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি আগে কখনও।

টানা বৃষ্টির প্রভাবে বন্যা-ভূমিধসে ভয়াবহ দুর্যোগে মহারাষ্ট্রের অনেক মানুষ। দুর্গত এলাকাগুলোয় এখনো নিখোঁজ একশো’র মতো মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে।

ভারতের মাত্র তিনদিন আগে নজিরবিহীন বৃষ্টি হয় প্রতিবেশী চীনের হেনান প্রদেশে। সেখানে এক ঘণ্টায় রেকর্ড হয় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। চীনা আবহাওয়াবিদরা বলছেন, হাজার বছরে একবার এতো বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে শহরের সব বন্যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। হেনানের কোথাও কোথাও এখনও গলা সমান পানি। নিঁখোজ ও দুর্গতদের উদ্ধারে অব্যাহত আছে অভিযান। প্রকৃতির এমন অচেনা আচরণের জন্য মানব সভ্যতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

হংকং সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনি শান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির লেটেস্ট প্রমাণ, বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক প্রলয়ংকারী বন্যা ও বৃষ্টিপাত। যখনই বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বাড়বে, পৃথিবীর জলভাগেও বাড়তে থাকবে উষ্ণতা। অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি পানি বাষ্পীভূত হবে, সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে ঝড়-বৃষ্টির। এরকম সময়ে উন্নত বা দরিদ্র দেশ নয়, যে কোনো জায়গাতেই হতে পারে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস।

চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে নজিরবিহীন বন্যার কবলে পড়ে জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি শিল্পোন্নত দেশ। বন্যা, ঝড়ের মতো দুর্যোগ স্বাভাবিক বিষয় হলেও, এগুলোর তীব্রতা ও ভয়াবহতা যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে শঙ্কিত, বিশ্লেষকরা।

মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিরান্ডা শেররস বলেন, এখন ভাবতে হবে জীবাশ্ব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে মানবজাতি কিভাবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনবে। কী করলে প্রকৃতি শান্ত থাকবে শিখতে হবে সে কৌশলও। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার কলাকৌশল শিখতে হবে বিভিন্ন দেশকে। ভুলে গেলে চলবে না বিশ্বজুড়ে চলমান দুর্যোগ আরও সাংঘাতিক রূপ নিবে সামনে।

গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত পাঁচ দশকে সারাবিশ্বে যতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে তার অর্ধেকই পানি সম্পৃক্ত। এই ৫০ বছরে শুধু খরা, ঝড়-বন্যায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply