গণসঙ্গীতের এক কিংবদন্তির প্রয়াণ

|

২০১৩ সালে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এসেছিলেন। গণমানুষের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছেন গান। সংগৃহীত ছবি।

বাংলাদেশের গণসঙ্গীতের কিংবদন্তি ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে জগন্নাথ কলেজে উচ্চশিক্ষা আরম্ভ করেন তিনি। সেখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণ করেন। শুক্রবার (২৩ জুলাই) এই কিংবদন্তি গণসঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত হয়েছেন।

সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে একসময় সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিয়ে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা পপ গানের বিকাশেও তিনি রেখেছেন বিশেষ অবদান।

ফকির আলমগীর সঙ্গীতের জগতে প্রবেশ করেছিলেন ষাটের দশকেই। বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনেই তিনি গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার ভূমিকা নিয়েছিলেন। এমনকি ২০১৩ সালে শাহবাগেও (বর্তমান প্রজন্ম চত্বরে) তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এসেছিলেন। গণমানুষের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছেন গান। তার দরাজ কণ্ঠ তখনও মানুষকে দাবি আদায়ের শক্তিতে উজ্জীবিত করেছিল।

ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে সংগীতচর্চা করেছেন। গান গাওয়া ছাড়াও বাঁশীবাদক হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন। ‘আমার কথা’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘যাঁরা আছেন হৃদয়পটে’,‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে তার।

তার দীর্ঘ সঙ্গীতজীবনে গাওয়া অসংখ্য গান দশকের পর দশক ধরে মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেরিয়েছে। তার ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইলা আমারে’ গানটি ১৯৮২ সালের বিটিভিতে প্রচারের পর থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া তার ‘কালো কালো মানুষের দেশে’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘জুলেখা’ ইত্যাদি গান এখনও মানুষের কণ্ঠস্থ।

সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফকির আলমগীর। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযোগ সমিতির সদস্যসহ অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’। এছাড়াও ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply