কেন বিক্ষোভ কিউবায়

|

দেশব্যাপী সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল কিউবা।

বিক্ষোভে উত্তাল কিউবা। রাজধানী হাভানা থেকে শুরু করে দেশটির সকল বড় শহরে এখন বিক্ষোভের আগুন। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা দেশটির প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেলের পদত্যাগের দাবিতে রোববার (১২ জুলাই) হাজারো বিক্ষোভকারী নেমে আসেন কিউবার পথে পথে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটিতে এটিই সবচেয়ে বড় সরকার বিরোধী বিক্ষোভের ঘটনা।

স্বাধীনতা ও আমরা ভয় করিনা, এই দুই শ্লোগানে মুখর এখন কিউবার সব রাজপথ। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি কিউবার জনগণের মাঝে নজিরবিহীন এই উত্তেজনার কারণ বের করতে গিয়ে কয়েকটি ইস্যুকে সামনে এনেছে।

প্রথমত, করোনা মহামারি। এই মহামারির কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে কিউবার জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এছাড়া এই মহামারির কারণে দেশটির অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে সৃষ্টি হয়েছে গভীর সংকট। এই সংকট নিরসনে কিউবার ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতা সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়িয়েছে ক্ষোভ। গত বছর দেশটিতে করোনা সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত কয়েক মাসে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন অসংখ্য করোনা রোগী। নিজস্ব টিকা উদ্ভাবনের মত উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের থাকলেও সম্প্রতি সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কিউবা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে গণ অসন্তোষ।

দ্বিতীয়ত, কিউবার জাতীয় আয়ের একটা বড় অংশ আসে দেশটির পর্যটন খাত থেকে। কিন্তু করোনা মহামারিতে পুরোপুরি বিপর্যস্ত দেশটির পর্যটন খাত, যার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। খাদ্য, ঔষধের মত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির চরম সংকট দেশজুড়ে। ক্ষমতাসীন মিগুয়েল সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সর্বস্তরে মজুরি বৃদ্ধির আশ্বাস দিলেও এই আশ্বাসে মোটেও আশ্বস্ত নয় কিউবার জনগণ। লকডাউনের কারণে গত বছরের শেষ নাগাদ কিউবায় নিত্যপণ্যের দোকান খুললেও এসব দোকানে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করে খাবার ও নিত্য ব্যবহার্য পণ্য কিনতে হত। কিন্তু কিউবানরা চান নিজস্ব মুদ্রা পেসো’র মাধ্যমে পণ্য কিনতে। এটিও কিউবানদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের অন্যতম একটি কারণ। কিউবা সরকারের দাবি, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে করোনা মহামারি ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। গত কয়েক বছরে কিউবার বিরুদ্ধে চলমান নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেছে ওয়াশিংটন।

তৃতীয়ত, এর আগে কিউবানরা সর্বশেষ বড় বিক্ষোভ দেখেছিল ১৯৯৪ সালে। তবে ওইসময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনকার মত ভাল না থাকায় খোদ রাজধানী হাভানার অনেক মানুষও জানত না তখন দেশে কী হচ্ছিলো। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর আমলে কিউবায় ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বৈধ হওয়ায় মানসিকভাবে অনেকটাই বদলে গেছে কিউবার বর্তমান প্রজন্ম। বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে তা যেমন হাতের নাগালে তেমনি ক্ষোভ প্রকাশেরও সবচেয়ে সহজ মাধ্যম এখন ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মত জনপ্রিয় সাইটগুলো। গত রোববারের বিক্ষোভে তরুণদের সংগঠিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোই।

তবে কিউবার ক্ষমতাসীন মিগুয়েল সরকারের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে যে ভূমিকা সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন কারণে। সরকার দলীয় সমর্থকদের প্রতি-বিক্ষোভ এবং তাদেরকে সরকারিভাবে আশকারা দেয়া। এছাড়াও কিউবা সরকারের অভিযোগ দেশটিতে এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পশ্চাতে সরাসরি হাত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে উসকে দিচ্ছে সিআইএ। প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উসকানি সহ্য করা হবে না।

এদিকে কিউবায় চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও তা দমনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, কিউবার জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার বলেন, আমরা কিউবানদের পাশে আছি। নিজ দেশের জনগণের অভাব ও নিপীড়ন দূর করার নজিরবিহীন এই ডাক দেশটির স্বৈরাচারী সরকারের শোনা উচিত।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply