ডেনিশ রূপকথার সমাপ্তি টেনে ‘ফুটবলকে ঘরে ফেরানোর’ শেষ ধাপে ইংল্যান্ড

|

'ফুটবলকে ঘরে ফেরানো'র শেষ ধাপে ইংল্যান্ড।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ জয়ের ৫৫ বছর পর আবার কোনো শিরোপার দ্বারপ্রান্তে ব্রিটিশরা। সাদাকালো টিভির সময় থেকে ইন্টারনেট, ফেসবুক, রঙিন টিভির বিবর্তনের এই পুরোটা সময় পর ‘ডেনিশ রূপকথা’র সমাপ্তি রচনা করে ফুটবলকে ঘরে ফেরানোর শেষ ধাপে গিয়ে দাঁড়াল ইংলিশরা।

ওয়েম্বলির বাতাসে বাজছিল যুদ্ধের দামামা। ইউরোর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বিনা যুদ্ধে এক সুতা পরিমাণ জায়গাও ছাড় না দেয়ার প্রতিজ্ঞায় খেলেছে ইংল্যান্ড ও ডেনমার্ক। প্রথমার্ধেই অজস্রবার নখ কামড়ানো দুশ্চিন্তা আর উল্লাসে লাফিয়ে উঠতে গিয়েও চুপ করা এবং চুপ থেকে ড্যামসগার্ডের অবিশ্বাস্য দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে ওয়েম্বলি ও টিভির সামনে দর্শকের বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলে পড়ার মতো মুহূর্ত উপহার দিয়েছে এ ম্যাচ।

রক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে আক্রমণে জোর বাড়ানোর অভিন্ন রীতি নিয়ে মাঠে নেমেছিল সাউথগেট ও হিউলমান্ডের শিষ্যরা। ফরোয়ার্ড পাসিং ও এন্ড টু এন্ড আক্রমণের জোরে মাঝমাঠে বলের অলস সময় কেটেছে খুবই কম। গতির সাথে আগ্রাসন ও নির্ভুল পাসিংয়ের প্রতিযোগিতায় নির্ধারিত হচ্ছিল গোলের সম্ভাবনা। ভ্যাস্টারগার্ড, সিমন কায়ের ও ক্রিস্টেনসেনের গড়া বিশ্বমানের ডেনিশ রক্ষণ প্রাচীর ভাঙার জন্য দরকার ছিল উপস্থিত বুদ্ধি। ঠিক তেমনি হ্যারি ম্যাগুয়ার, কাইল ওয়াকার, জন স্টোনসের দেয়ালও পুরো ইউরোতেই ছিল অনেকটা দুর্ভেদ্য। সেই প্রাচীর ভাঙতে দরকার ছিল কামানের গোলা।

দুটোই নিয়ে হাজির দু’দল। ম্যাচের ৩০ মিনিটে কামানের গোলা নিয়ে আসলেন ডেনিশ ফরোয়ার্ড মিকেল ড্যামসগার্ড। দূরপাল্লার দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে চোখের নিমিষে ম্যাগুয়াররা দেখলেন কী করে ভেঙে পড়ে ইংরেজদের দূর্গ।

৩৮ মিনিটে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা সেভটি করেন ডেনিশ গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেল। কেইনের বাড়ানো বল খুব কাছ থেকে গোল লক্ষ্য করে নেয়া স্টার্লিং এর শট ঠেকিয়ে দেন স্মাইকেল। আর তারপরের মিনিটেই হ্যারি কেইন উপস্থিত বুদ্ধি ও শিকারির প্রবণতা থেকে আচমকা পাস বাড়ান ডি-বক্সে স্টার্লিনহ এর দিকে। এবার গোল বাঁচাতে গিয়ে সিমন কায়েরের পায়ে লেগে বল জড়ায় জালে। ম্যাচে আসে সমতা।

দ্বিতীয়ার্ধে দু’দলই চেষ্টা চালায় এগিয়ে যাবার। কিন্তু আক্রমণে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকে তাদের বেঞ্চের জোরে। জর্ডান হেন্ডারসন ও জ্যাক গ্রিয়ালিশ নামায় মধ্যভাগের দখল আর হারায়নি তারা। ফিল ফোডেন নামায় বাড়ে সৃষ্টিশীলতা। এর সাথে কেইন, স্টার্লিংদের সুযোগড় সন্ধানী মুভমেন্টে ব্যস্ততা বাড়ে ডেনমার্ক রক্ষণভাগের। আবার ইউসুফ পোলসেন ও ড্যানিয়েল ভাসের সতেজ পায়ে ডেনিশরাও চালায় পাল্টা আক্রমণ। কিন্তু ফাইনালের থার্ডে ডেনিশ ফরোয়ার্ডদের প্রচেষ্টা ইংলিশ প্রাচীরে হতে থাকে প্রতিহত।

এমন জমাট রক্ষণের ম্যাচে সুযোগ আসে কদাচিৎ। তেমনি অতিরিক্ত সময়ের খেলায় ১০২ মিনিটে ম্যাথিয়াস জেনসেন ও জোয়াকিম ম্যায়লের মাঝ দিয়ে রাহিম স্টার্লিং বল নিয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ডেনিশ ডি-বক্সে ঢুকতে গেলে ম্যায়লের আলতো চ্যালেঞ্জে পড়ে যান বক্সের ভেতর, রেফারি বাজান পেনাল্টির বিতর্কিত বাঁশি। হ্যারি কেইনের পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়ে মুহূর্তকালের জন্য নায়ক বনে যান পুরো ম্যাচে নয়টি সেভ করা ডেনিশ গোলরক্ষক ক্যাস্পার স্মাইকেল। কিন্তু ফিরতি বল জালে জড়াতে আর কোনো ভুল করেননি ক্যাপ্টেন কেইন। ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম পারফরমেন্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন কেইন; ৫টি গোল নিয়ে আছেন ইউরোর অন্যতম সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে।

এগিয়ে যাবার পর বাকি সময়টুকুতে আর কোনো বিপদে না পড়ার জন্য শুরু হয় কেইন এন্ড কোং ম্যানেজমেন্ট কোর্স। এখানে বলের দখল না হারানোর শর্তে গোলের সুযোগের সামনে থেকে ব্যাকপাস দিয়ে সময় কাটানো শেখানো হয়েছে।

এ অবস্থায় বহু চেষ্টা করেও আর সিমন কায়েরের দল তাদের ইউরো রূপকথায় নতুন কোনো অধ্যায় যোগ করতে পারলো না। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের সতীর্থরা মাথা উঁচু করেই বিদায় নিলো ইউরো থেকে। গোল, জয় বা সেমিফাইনাল থেকে বিদায়ের চাইতেও নিশ্চিতভাবে অনেক বড় কিছুই তারা পেয়েছে এ আসরে, দিয়েছেও- ফুটবল বিশ্বকে এক নতুন রূপকথার পরিচয়। তবে নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও ইংলিশ সমর্থকদের সাথে আরও অনেকেই এখন ভাবছে, ৫৫ বছর পর ফুটবল এবার ফিরবে ঘরে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply