দুই নায়িকার প্রেমিক দিলীপ কুমার, ঘর বেধেছিলেন সায়রা বানুর সাথে

|

বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’ দিলিপ কুমার হতে চেয়েছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে গেলেন নায়ক। তার পর প্রায় ছয় দশকের অভিনয় করেছেন বলিউডে। জীবনে বহু উত্থান-পতন দেখেছেন। আবার নায়িকাদের প্রেমেও পড়েছেন একাধিক বার।

ইউসুফ খান নামে বম্বে টকিজে পা রাখেন তিনি। প্রথম দিকে ছবির গল্প বাছাই এবং চিত্রনাট্য লেখার কাজে সাহায্য করতেন। খুব ভাল জানতেন উর্দু। ফলে নিজের কাজে সুনাম অর্জন করতে সমস্যা হলো না।

অভিনেত্রী দেবিকারানি তাকে প্রস্তাব দিলেন অভিনয়ের। ১৯৪৪ সালে মুক্তি পেল অমিয় চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘জোয়ার ভাটা’। দেবিকারানির পরামর্শে নাম পাল্টে ফেললেন ইউসুফ খান। ছবির জন্য তার নাম হল দিলীপকুমার। ইউসুফ খান হয়ে গেলেন দিলীপকুমার।

প্রায় ৬০ বছরের কেরিয়ারে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছেন ৬৫টির বেশি ছবিতে।
১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় ‘শহিদ’। এই ছবিতে দিলীপ কুমারের নায়িকা ছিলেন কামিনী কৌশল। অভিনয়ের মাঝেই হয়ে যায় প্রেম। সেই প্রেম তখন ছিল টক অফ দ্য ইন্ডাস্ট্রি।

দিলীপ-কামিনী বিয়ে করবেন বলেও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বাধা দিলেন কামিনীর ভাই। সে এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। শোনা যায় দিলীপ কুমারকে হুমকিও দিয়েছিলেন কামিনীর ভাই।

ওই ঘটনার পর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ওই বছরই কামিনী বিয়ে করেন তার মৃত বোনের স্বামীকে। দুর্ঘটনায় নিহত বোনের দুই মেয়ের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেন কামিনী।

এর পর দিলীপকুমার প্রেমে পড়েন মধুবালার। দীর্ঘ সাত বছর চলে তাদের প্রেমপর্ব। এই সম্পর্ক ভেঙে যায় দুই তারকার ইগোর কারণে। একটা ছবির শুটিং-এ মধুবালাকে যেতে বাধা দিচ্ছিলো তার বাবা।

পরিচালক দিলীপকুমারকে অনুরোধ করেন মধুবালার বাবার সাথে কথা বলতে। দিলীপ কুমারের অভিযোগ ছিলো, মধুবালার বাবা তাকে অপমান করেছেন।

অন্য দিকে মধুবালার বক্তব্য ছিলো, দিলীপ কুমারের কাছে অপমানিত হয়েছেন তার বাবা আতাউল্লাহ খান। তিনি তার বাবার অমান্য করতে পারেননি। মধুবালার কথায় আতাউল্লাহর কাছে ক্ষমা চাননি দিলীপকুমার। ভেঙে যায় দিলীপকুমার-মধুবালা প্রেম।

১৯৬০ সালে মধুবালা বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে। কিন্তু দিলীপ কুমার কয়েক বছর একাই ছিলেন।

বেশ কয়েক বছর পর, ১৯৬৬ সালে তিনি বিয়ে করেন সায়রা বানুকে। শোনা যায়, তার বিয়ের খবরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন অসুস্থ মধুবালা। তার তিন বছর পরে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

সায়রা বানুকে বিয়ের সময় দিলীপ কুমারের বয়স ছিলো ৪৪। সায়রা বানু ছিলেন ঠিক অর্ধেক ২২। সায়রা বানু অনেকবার বলেছেন, তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই দিলীপ কুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। অথচ তার স্বপ্নের নায়কই তাকে প্রথম দিকে পাত্তাই দিত না। প্রথম সাক্ষাতে সায়রা বানুর রূপের প্রশংসা করেছিলেন দিলীপ কুমার। কিন্তু ‘বাচ্চা মেয়ে’ বলে দূরত্ব বজায় রাখতেন।

এ দিকে দিলীপ কুমারের ভক্ত সায়রা বানু নিজেই এক দিন পা রাখলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। শোনা যায়, সে সময় রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে তার অল্প-সল্প ভাল লাগার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সায়রার মা, সাবেক অভিনেত্রী নাসিম বানুর হস্তক্ষেপে বিবাহিত রাজেন্দ্র কুমারের কাছ থেকে সরে আসেন সায়রা বানু।

এর পর নাসিম বানুই দিলীপকু মারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। সায়রা বানুর মনে হয়েছিল, দিলীপকুমারকে স্বামী হিসেবে পেয়ে তার বহু দিনের স্বপ্ন পূর্ণ হল।

সে সময় অনেকেই বলেছিল, এই বিয়ে বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে দিলীপকুমার-সায়রা বানু দু’জনে দু’জনের পাশে ছায়া হয়ে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন এক ছাঁদের নিচে।

তবে আশির দশকে কিছুটা ঝড়ের মুখে পড়েছিল তাদের দাম্পত্য। পাকিস্তানের নাগরিক আসমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন দিলীপ কুমার। এমন গুঞ্জনও শোনা যায়, তিনি সায়রা বানুকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়েও করেছিলেন আসমাকে। কিন্তু সে বিয়ে নাকি মাত্র দু’বছর স্থায়ী হয়েছিল। সেই সম্পর্ক ভেঙে তিনি ফিরে আসেন সায়রা বানুর কাছে। আবার বিয়ে করেন তাকে। এর পর সায়রা বানু অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেন। তাদের মতো দীর্ঘ দাম্পত্য বলিউডে বিরল।

বুধবার এই প্রেমিক পুরুষের মৃত্যুতে একটা যুগের অবসান হল। তার বয়স হয়েছিল ৯৮। দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ফুসফুসে ফ্লুইড জমছিল বারবার। গত এক বছর একরকম বিছানায় পড়েছিলেন দিলীপ। তবে স্ত্রী সায়রা বানু সবসময় পাশে ছিলেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply