মা আমি টাকা দিচ্ছি, আপনি ঘরে ফিরে যান!

|

স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:

কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে প্রায় চার মাইল হেঁটে কলা বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা রেনু আক্তার। তার গ্রামের বাজারে মানুষ নেই। তাই কলা বিক্রির আশায় শেষ পর্যন্ত যাচ্ছিলেন চার মাইল দূরের বারহাট্টার গোপালপুর বাজারে।

রেনু আক্তার নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রামের বাসিন্দা।

তবে গোপালপুর বাজারে পৌঁছানোর আগেই তাকে আটকে দেয় পুলিশ। চলমান লকডাউনের কারণে বসানো চেকপোস্টে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান মুখোমুখি হয় বৃদ্ধা রেনু আক্তার। প্রশ্নের জবাবে ওসিকে জানালেন নিজের অসহায়ত্বের কথা। ঘরে টাকা পয়সা নেই। খাবার নেই। তাই কলা বিক্রি করে খাবার নেবেন তিনি।

রেনু বেগম জানান, ঘর থেকে বের হতে না পারায় কাজকর্মও বন্ধ। তাই খাবারের অভাবে পেট চালাতে পারছেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে বাড়ির গাছের থেকে কলা নিয়ে বাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।

সংসার জীবনের দারিদ্র্যতার কথা জানিয়ে তিনি বললেন, এক ছেলে এক মেয়ে আছে। কিন্তু তারা নিজেরাই চলতে পারে না, অভুক্ত থাকে। ওদের জীবনই তো দুর্বিষহ। যদি ওরা নিজেরা চলতে পারতো এবং তখন যদি আমার ভরণপোষণ না করতো তবে মনে কষ্ট থাকতো। কিন্তু এখন তা নেই। নিজেরাই চলতে পারছেন না।

এদিকে সবকিছু শুনে অফিসার ইন-চার্জ অসহায় বৃদ্ধা রেনু বেগমকে বললেন, মা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মধ্যে আপনার বাইরে থাকা বা কলা বিক্রির দরকার নেই। আমি টাকা দিচ্ছি, কি দরকার তা কিনে আপনি ঘরে চলে যান।

অফিসার ইন-চার্জ মো. মিজানুর রহমান’র কথা শুনে তার দেয়া টাকা হাতে পেয়ে বেজায় খুশি হলেন রেনু বেগম।

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, লকডাউনে টহলের সময় সড়কের পাশে ওই বৃদ্ধাকে দেখে গাড়ি থামালাম। উনি আমাদের দেখে ভয় পাচ্ছিলেন। আশ্বস্ত করলাম,কথা বললাম। তিনি নিজের গাছের কলা কয়েক মাইল হেঁটে নিয়ে বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন। এটা শুনে খুব খারাপ লেগেছে। তাই বাজার করার জন্য কিছু টাকা দিলাম। টাকা দিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply