মন্দিরের সম্পত্তি রক্ষায় হামলার শিকার নারীরা, প্রশাসন বলছে খাস জমি

|

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের উলিপুরে দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা ও নারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার উপজেলার ধরনী বাড়ি ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে শতাধিক নারী-শিশু-পুরুষ উপজেলা সদরে বিক্ষোভে প্রদর্শন করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমি ও গৃহ প্রদান আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩শ ৫০টি গৃহ নির্মাণের বরাদ্দ আসে। সে মামোতাবেক প্রথম পর্যায় ২শ গৃহ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমান ১শ ৫০টি গৃহ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।এই প্রকল্পের আওতায় ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের শতাধিক ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়ত পঙ্ক চন্দ্র মহন্ত (৬৫) বলেন, ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের তৎকালীন জোতদার ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সির দানকৃত ১৮ একর দেবোত্তর সম্পত্তিতে শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির এবং রাধা গোবিন্দ জিউ মন্দির রয়েছে। সেখানে আমরা দীর্ঘদিন থেকে পূজা অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ, সেবায়তর ভরণ পোষণ, মন্দিরের সংস্কারসহ সার্বিক ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি।

তিনি দাবী করেন এই জায়গা জমি দেবোত্তর সম্পত্তি। কিছুদিন থেকে উপজেলা প্রশাসন দেবোত্তর সম্পত্তিকে সরকারি খাস জমি দাবি করে সেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য শতাধিক গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যেই অর্ধেক গৃহের কাজ সমাপ্ত করেছে।

মন্দির সংলগ্ন জমিতে আমরা প্রতিবছর অষ্টপ্রহর ও নাম কীর্তন করে আসছি। সেই জমিতে গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করলে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় এতে বাঁধা দেয়। এ বিষয়টি নিয়ে ১০-১২ দিন থেকে উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে একাধিকবার এসে মিটিং করে মন্দির সংলগ্ন জায়গায় গৃহ নির্মাণ করা হবে না বল প্রতিশ্রুতি দেন।

আজ সকালে দেবোত্তর সম্পত্তিতে আবারও গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-শিশু ও পুরুষ সকল মিলে এতে বাঁধা প্রদান করে। এসময় গৃহ নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব থাকা কয়েকজন নারীদের উপর হামলা চালায়।

হামলার শিকার জবা রানী (২৬) বলেন, মন্দিরের জমি রক্ষার দাবিতে আমরা ঘর তুলতে বাঁধা দেয়ায় উপস্থিত প্রশাসনের সামনে মুক্তা ও তার লোকজন আমাদের গায়ে হাত দেয়। এ সময় তারা আমাদের পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে ও মারপিট করে হাতের আঙ্গুলসহ বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশী রাসেল মিয়ার উপরও তারা হামলা করে।

ঘটনার প্রতিবাদ আমরা বুধবার বিকেলে উপজেলা সদর বিক্ষোভে মিছিল করতে গেলে সেখানও তারা আমাদের উপর আক্রমণ করে। এ ঘটনায় এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভে ও আতঙ্ক বিরাজ করেছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

মন্দিরের পূজারী রতন মহন্ত (৩২) বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তিতে পূর্বেও তারা ৫০টির অধিক গৃহ নির্মাণ করেছে। বর্তমান মন্দিরে সংলগ্ন জমিতে তারা গৃহ নির্মাণ করার সামগ্রী ইট-বালু এনে ফেলেছে। এতে আমরা আপত্তি করলে উপজেলা সদর থেকে মুক্তার নেতৃত্ব একদল যুবক এসে মহিলাদের উপর হামলা চালায়। আমরা দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা ও হামলার বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাই।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ উলিপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সমেন্দ্র প্রসাদ পান্ড গবা জানান, ওই সম্পত্তি ইতোপূর্বে সরকার খাস খতিয়ান নেয়। সেখান সামান্য কিছু দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। মন্দির সংলগ্ন জমিতে যেন গৃহ নির্মাণ না হয় সে বিষয় আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের সদস্য সচিব সিরাজ উদ দৌলা বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তিতে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে না। মন্দির সংলগ্ন জায়গায় গৃহ নির্মাণ করা হয়নি। ভূমি অফিস কর্তৃক দেয়া সরকারের খাস জায়গায় গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। জায়গাগুলা পূর্ব দেবোত্তরের সম্পত্তি ছিল। তিনি আরও বলেন, নির্মাণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজন দেবোত্তর সম্পত্তি দাবি করে তা ভেঙে দেন। এসময় আমাদের পক্ষ থেকে দেখা শোনার দায়িত্ব থাকা মুক্তা নামের একজন বাধা দিলে তার উপর হামলা চালানো হয়।

মুক্তার লোকজন কর্তৃক মহিলাদের উপর হামলার বিষয় জানতে চাইল তিনি বলেন, ঘটনা সঠিক নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রকল্পের সভাপতি নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, সেখানে হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি। যারা বিক্ষোভে মিছিল করেছেন তারাই গৃহ নির্মাণের কাজের লোকজনের উপর হামলা চালিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা হিন্দু সম্প্রদায় নেতাদের সঙ্গে দ্রুত বসা হবে।

উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ কবীর বলেন, মন্দির এলাকায় সরকারি ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ বিক্ষোভে মিছিল হলেও এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগে পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply