‘মসজিদে গেলেও সবাই এমনভাবে তাকায় যেন অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি’

|

ফরিদ আহমেদ।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ:

জাতীয় হটলাইন ৩৩৩-তে খাদ্য সহায়তা চেয়ে উল্টো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে শাস্তি পাওয়া ফরিদ আহমেদ মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। এমনকি তিনি একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলেও জানায় তারা।

পরিবার বলছে, আগের মতো ঘর থেকে বের হচ্ছেন না ফরিদ। কিছুক্ষণ পরপর মাথায় হাত দিয়ে কী যেন চিন্তা করছেন। বলছেন, লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ্যে সাহায্য চাইতে না পেরে ৩৩৩-তে ফোন করেছিলাম। এখন আমার কী থেকে কী হয়ে গেলো।

শাস্তি পাওয়া ফরিদ আহমেদ বলেন, আমার আত্নীয়-স্বজন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন, যে কারখানায় কাজ করি তারা সবাই আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। এমনকি মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও সবাই এমনভাবে তাকায় যেন আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি। এ কথা বলেই চোখ মুছতে থাকেন তিনি।

ফরিদ আহমেদের স্ত্রী হিরণ বেগম জানান, ফরিদ আহমেদ ব্রেন স্ট্রোক করার কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ। এখন তিনি এলোমেলো কথা বলেন। হিরণ বেগম বলেন, সাহায্য চেয়ে কি আমার স্বামী ভুল করেছেন, নাকি ভুল ইউএনওর হয়েছে, তা আল্লাহই জানেন।

প্রশাসনের এমন অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না ফরিদের প্রতিবেশীরাও। তারা বলছেন, ভালোভাবে না জেনে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। তার উচিত ছিল ফরিদ আহমেদের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, করোনাক্রান্তিতে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও দারিদ্রসীমার নিচে নেমে এসেছে। তাদের জন্যই তো ৩৩৩ নম্বরটি করার কথা বলা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। তাহলে ফরিদ আহমেদকে কেনো এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হলো?

গত ২৫ এপ্রিল সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের হানায় যারা কাজ হারিয়েছেন, তারা ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিলেই পাবেন খাদ্যসহায়তা। তিনি আরও বলেছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি নির্দেশনা দিয়েছেন যে অনেকে এমনকি মধ্যবিত্তরাও দরিদ্রসীমার মধ্যে চলে আসবে এই করোনাভাইরাসের সময়। তারা হয়তো লজ্জায় বলতে পারবে না। সে জন্য ৩৩৩ নম্বরটি প্রচার করছি। যে কেউ খাদ্য কষ্টে থাকলে এই নম্বরে ফোন করলে তাকেও তালিকাভুক্ত করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।

যে ফরিদ আহমেদের মতো মানুষের জন্যই ৩৩৩ নম্বরটি সৃষ্টি করে সরকার এমন উদ্যোগ নিলো সেটি কতিপয় আমলা এভাবে কলুষিত করায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন অনেকে। এই শাস্তির কারণে তিনি সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও মনে করছেন তার প্রতিবেশীরা। তাদের কথা, টাকা না হয় ফেরত দেওয়া হবে, কিন্তু ফরিদ আহমেদের সম্মান কীভাবে ফেরত দেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন? আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আদৌ শাস্ত হবে কিনা?

এদিকে, ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম ব্যাপারী জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা হবে।

গত রোববার প্রশাসনের অনুরোধে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির প্রধান ব্যবসায়ী শাহনুর আলম ফরিদ আহমেদ ও তার স্ত্রী হিরণ বেগমের হাতে ৬০ হাজার টাকা তুলে দেন। শাহনুর আলম জানান, তিনি নিজস্ব তহবিল থেকে এই টাকা অনুদান দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নগরীর পশ্চিম দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার ফরিদ আহমেদ ৩৩৩-তে কল করে খাদ্য সহায়তা চান। কিন্তু উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা স্থানীয় মেম্বারের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন ফরিদ আহমেদ চার তলা বাড়ির মালিক। পরে উপজেলা প্রশাসন ‘স্বাবলম্বী’ ফরিদ আহমেদকে সরকারি কাজের সময় নষ্ট করায় শাস্তি হিসেবে ১০০ জন দুস্থ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেন। দুইদিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে গিয়ে ফরিদ আহমেদের এই খাদ্য সহায়তা বিতরণে অংশ নেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply