রাজধানীতে গামছা পার্টির দৌরাত্ম্য; এক বছরে অন্তত ১৬ খুন

|

রাজধানীতে গামছা পার্টির দৌরাত্ম্য; এক বছরে অন্তত ১৬ খুন

কোনভাবেই থামছে না গামছা পার্টির দৌরাত্ম্য। গেলো এক বছরে এই চক্রের হাতে খোদ রাজধানীতেই খুন হয়েছেন অন্তত ১৬ জন। সিএনজি চালক ও যাত্রী সেজে রাতের বেলায় মানুষকে জিম্মি করে তারা। পরে সর্বস্ব লুটে নিয়ে হত্যার পর নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায় মরদেহ।

সম্প্রতি রাজধানীর কুড়িল এলাকায় এই চক্রের সদস্যদের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে দুইজন। আটক করা হয়েছে অপর দুই সদস্যকে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

চলতি মাসের ৬ তারিখ ভোর রাতে কুড়িল ফ্লাইওভারের উপর থেকে সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর নামের এক যুবকের গলায় গামছা পেঁচানো রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে করোনা পরীক্ষা করাতে ওই রাতে ঢাকা এসেছিলেন তিনি। দুইদিন পর তার আবুধাবী যাওয়ার কথা ছিলো। মাত্র পাঁচমাস আগে বিয়ে করেছিলেন সুভাষ।

নিহত সুভাষের স্ত্রী জানান, আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। সরকারের কাছে আমার আবেদন হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়।

সম্প্রতি রাজধানীর কুড়িল এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে গামছা পার্টির সদস্যদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় আর ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় দুইজনকে। আটককৃতরা জানান, ৬ মে রাতে তারই হত্যা করেছে সুভাষকে।

আটককৃতদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে কিভাবে সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রী ও চালক সেজে সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি ও হত্যা করা হয় তাই দেখায় ওই দুইজন। তারা জানায়, প্রথমে কাউকে কৌশলে সিএনজিতে তুলে নেয় তারা। এরপর কোন একটি নির্জন স্থানে যাওয়ার পর তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে নাকে-মুখে আঘাত করে সব ছিনিয়ে নেয়। পরে সে অবস্থাতেই লাশ ফেলে দেয়া হয়।

এজন্য রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোই এই চক্রের প্রথম পছন্দ বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা জানান, গেলো এক বছরে প্রায় দেড় ডজন মানুষ এই পার্টির হাতে নির্মমভাবে জীবন দিয়েছেন।

ডিএমপি ডিসি (ডিবি-গুলশান) মশিউর রহমান বলেন, গত কয়েকমাস ধরে এই গামছা পার্টি তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকা, যার কাছে যা পেয়েছে তাই তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। এবং ছিনিয়ে নেয়ার এই প্রক্রিয়ায় কাউকে হত্যা করেছে, আবার কাউকে আউকে গুরুতর আহত করে ফেলে চলে গেছে। গভীর রাতে মানুষ যখন গন্তব্যে যাবার গাড়ি পায় না তখন এই চক্রটি রাইড শেয়ারার হিসেবে সব জায়গাতে এই কাজ গুলো করে থাকে।

ভুক্তভোগীরা জানান, চলমান বিধি নিষেধের কারণে গণপরিবহন স্বল্পতায় সিএনজি অটোরিক্সায় যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায় এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

এই চক্রের সদস্যদের হাত থেকে বাঁচতে সন্ধ্যার পর সতর্কভাবে সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবহারের পরামর্শ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তাদের।

ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি-উত্তর) হারুনুর রশিদ বলেন, আগামী কিছু দিনের মধ্যে ঢাকা শহরের প্রতিটি জায়গাতে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থ্যা করা হবে। এতে করে যে কোন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত অপরাধীকে বের করা সম্ভব হবে। এছাড়া রাজধানীতে এমন আরও কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে, যাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

এনএনআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply