খাগড়াছড়িতে টেন্ডার ছাড়াই হচ্ছে সরকারি ভবনের সংস্কার কাজ; জানেন না কর্মকর্তারা

|

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি আবাসিক ভবনের সংস্কার কাজ চলছে ভূতের টাকায়। টেন্ডার ছাড়া কার নির্দেশে এই কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে তাও জানেন না খোদ উপজেলা প্রশাসনের কর্তারা। এ নিয়ে পানছড়িতে ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, এমন অনেক কাজ হচ্ছে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অরুণ দাস ও তারই খুব ঘনিষ্ঠজনের প্রভাব বিস্তারকারী ঠিকাদার উত্তম কুমারের মাধ্যমে। অভিযোগ থাকলেও অরুণ-উত্তমের আধিপত্যের কারণে ভয়ে মুখ খুলছেন না উপজেলার কোনো ঠিকাদার। তবে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বিষয়টি
জানতে চাইলে তিনি তৎক্ষণিকভাবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে ফোনে কাজ বন্ধ রেখে টেন্ডার আহবানের মাধ্যমে ভবন সংস্কার কাজ করার জন্য বললেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।

পানছড়ি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবকটি আবাসিক ভবন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সেখানে চলছে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ভবনের ছাদসহ বিভিন্ন অংশ সংস্কার ও ভবন রং করণের কাজ। তবে কোন প্রকল্পের আওতায় কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান হতে এ কাজের অর্থায়ন করা হয়েছে তার কোনো তথ্যই দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ কাজের প্রসঙ্গে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এটা উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের খাগড়াছড়ি নির্বাহী প্রকৌশল মো. শাহজাহানের কাছেও। তিনি বলেন, ‘যদি এমন কোনো কাজ হয়ে থাকে তবে তা উপজেলা পরিষদের ফান্ড থেকে হতে পারে।’

তবে এ প্রসঙ্গে চার দফায় পৃথক পৃথক বক্তব্য দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার। প্রথমে তার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, ‘এগুলো ভুয়া খবর। উপজেলা পরিষদের ডরমিটরিতে কোন সংস্কার কাজ হচ্ছে না। আমাকে বিব্রত করার জন্য কেউ আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে।’

পরবর্তীতে তার কার্যালয়ে গিয়ে ফের কথা হয় প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস’র সাথে। এবার তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা ছোট ছোট সংস্কার কাজগুলো কোনো টেন্ডার ছাড়াই করিয়ে নেই। পরে সমন্বয় মিটিংয়ে ভাউচার উত্থাপন করি।’ কোন টেন্ডার ছাড়া আগেই সরকারি ভবন সংস্কার করে পরে তার বিল নেয়া বৈধ কিনা এমন প্রশ্ন করলে তৃতীয়বারে তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের আমি চিনি না। আমি আসলে জানিও না যে কে বা কারা এই কাজ করতে লোক পাঠিয়েছে।

সরকারি ভবনে ভূতুরে টাকায় সংস্কার কাজ সমাপ্ত হয়ে যাচ্ছে, অথচ এ ব্যাপারে আপনারা যারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আছেন তারা কিছুই জানেন না এমন প্রশ্নে এবার মুখ খুললেন প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস। শেষবারে তিনি জানালেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব ও তার ব্যবসায়িক সহযোগী হোসেন শরীফ এই সংস্কার কাজ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছেন।

কোনো বরাদ্দ নেই অথচ সরকারি ভবনে কীভাবে লোক পাঠিয়ে সংস্কার কাজ করছেন তা জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় ঠিকাদার উত্তম কুমার দেবের সাথে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় তিনি বলেন, ‘কথা বলার মতো সময় আমার কাছে নেই। আপনার যা ইচ্ছে হয় লিখে দেন।’

ঠিকাদার উত্তম কুমার দেবের ব্যবসায়িক সহযোগী হোসেন শরীফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এটা উত্তম বাবু বলতে পারবেন।’

এছাড়া জেলা শহরের ঠিকাদারদের অভিযোগ, অরুণ-উত্তমের সিন্ডিকেটের কারণে জেলার অন্য কোনো ঠিকাদারও পানছড়ি উপজেলার সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারছেন না।

এদিকে, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, পানছড়ি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অরুণ কুমার দাসের সম্পর্কে অনেক অভিযোগ শুনেছেন। এসব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভবন সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করে কাজ সম্পর্কে জানতে চান তিনি। একপর্যায়ে দ্রুত টেন্ডার আহবানের মাধ্যমে ভবন সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেন। তারপরও কর্ণপাত করেননি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অরুণ কুমার দাস।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply