গর্ভধারিণী মাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেল মেয়ে

|

স্টাফ রিপোর্টার:

ঢাকার নিজের বাসা থেকে নিয়ে মাদারীপুরের শিবচরে ৯০ ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা মাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে দিয়ে চলে গেছে মেয়ে পার্বত্য রানী মণ্ডল। এক ভ্যান চালকের সহায়তায় অবশেষে এক নাতনীর বাড়িতে আশ্রয় হয়েছে সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা সাম্প্রীয় বৈরাগীর।

বৃদ্ধা সাম্প্রীয় বৈরাগী ও তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের সাদেকাবাদ গ্রামের মৃত রাজমোহন বৈরাগীর স্ত্রী সাম্প্রীয় বৈরাগী। সাম্প্রীয় বৈরাগী, মেয়ে পার্বতী, সরস্বতী, ছেলে কুমোদ বৈরাগী, স্বত্ব বৈরাগী ও নিত্য বৈরাগীকে রেখে গত প্রায় ৩০ বছর আগে রাজমোহন বৈরাগীর মৃত্যু হয়। সেই থেকে ২ মেয়ে ও ৩ ছেলেকে নিয়েই ছিলেন সাম্প্রীয় বৈরাগী।

৩ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে কুমোদ বৈরাগী গত প্রায় ১৯ বছর আগে মারা যায়। মেঝো ছেলে স্বত্ব বৈরাগী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। ঢাকাতে স্ত্রীর উপার্জনের টাকায় কোনমতে চিকিৎসা চলছে তার।

ছোট ছেলে নিত্য বৈরাগী কোলকাতায় পাড়ি দিয়ে নিরুদ্দেশ আছে অনেক বছর যাবত। ছোট মেয়ে সরস্বতী বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সাথে কোলকাতায় আছেন। তার সাথেও পরিবারের তেমন যোগাযোগ নেই। আর সাম্প্রীয় বৈরাগীর বড় মেয়ে পার্বতী মণ্ডল ঢাকার আগারগাঁও থানার তালুকদার রোড এলাকার চতুর্থ তলার একটি ফ্লাটে স্বামীর সাথে বসবাস করেন। তার স্বামী দিনা মণ্ডলের রয়েছে লোহার গ্রিলের ব্যবসা।

গত প্রায় ৪ বছর আগে পার্বতী তার মা সাম্প্রীয় বৈরাগীকে নিজের কাছে রাখার জন্য গ্রামের বাড়ি সাদেকাবাদ থেকে ঢাকায় নিয়ে যার। প্রথম অবস্থায় মেয়ের বাসায় সুখ ও শান্তিতেই ছিলেন সাম্প্রীয় বৈরাগী। তবে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে সরিয়ে বাসার বেলকনির খালি জায়গায় রাখতে শুরু করে মেয়ে পার্বতী ও তার পরিবার। বেলকনিতেই তাকে খাবারও দেওয়া হতো। চোখের জলে খেয়ে না খেয়ে বেলকনিতেই দিন পার করছিলেন বৃদ্ধা সাম্প্রীয়। তবে এতেও যেন বোঝা হালকা হচ্ছিল না মেয়ে পার্বতীর।

তাই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মেয়ে পার্বতী মণ্ডল ঢাকা থেকে একটি গাড়িতে করে বৃদ্ধা মা সাম্প্রীয় বৈরাগীকে গ্রামের বাড়ি শিবচরের সাদেকাবাদ এলাকায় নিয়ে এসে ঐ এলাকার একটি কাঁচা রাস্তার পাশে মাকে ফেলে রেখে দিয়ে ঢাকায় ফিরে যায়। রাস্তার পাশে পড়ে কাঁদছিল অসহায় সাম্প্রীয়।

পরে সন্ধ্যার দিক স্থানীয় এক ভ্যানচালক আনোয়ার মিয়া তাকে দেখতে পেয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে বৃদ্ধা সাম্প্রীয় মাদবরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচর গ্রামের তার বড় ছেলের মেয়ে নাতনী রিতা রানী মণ্ডলের শ্বশুর বাড়ির কথা বলে। পরের দিন শুক্রবার ভ্যানচালক আনোয়ার বৃদ্ধা সাম্প্রীয়কে তার নাতিন জামাই ডাইয়ারচর গ্রামের দয়াল মণ্ডলের ছেলে জগদীশ মণ্ডলের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। সেখানেই নাতনির আশ্রয়ে আছেন সাম্প্রীয় বৈরাগী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply