দুই ভাইয়ের দুই পথ, ক্ষেত্র সেই ক্রিকেটই

|

জীবনে যেখানেই যাই বা যে অবস্থাতেই থাকি, শরীরে শক্তি যতদিন আছে ততদিন খেলে যাবো। কথাগুলো ইফতেখার নাঈম আদিবের। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই নামটি সেভাবে পরিচিত নয়। তবে বছর দশেক আগে যারা ঘরোয়া ক্রিকেট বা বয়সভিত্তিক দলগুলোর খবর রেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও জানেন আদিবের ব্যাপারে। তার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে তিনি জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার নাফিসের ছোটভাই। ১৯৮৮ সালে পৃথিবীর আলোয় আসা আদিব মাত্র ১০ বছর বয়সে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় দলে।

১৯৯৮ সালের সেই দলে খেলেছিলেন মোহাম্মাদ আশরাফুলও। এরপর সাকিব, তামিম, নাসির, নাঈম ইসলামদের সাথে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলে।

বড় ভাই শাহরিয়ার নফিসের মতই আদিবেরও খেলা হয়নি আন্ডার-নাইন্টিন বিশ্বকাপে। দুই ভায়ের মধ্যে পার্থক্য যেখানে সেটি হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে না খেলেও জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন নাফিস। আর আদিব জাতীয় দল পর্যন্ত আসতে পারেননি কোনোভাবেই। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক ফারুক আহমেদের খালাতো ভাই তিনি। কিন্তু নির্বাচকদের সুদৃষ্টিতে পড়ার সৌভাগ্য আর হয়ে উঠেনি। ফলে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে তার দৌড়। অবশ্য,আদিবের বড় ভাই শাহরিয়ার নাফিসের ক্ষেত্রে এমন ঘটেনি। জাতীয় দলে বেশ কিছুদিন খেলেছেন দাপটের সাথেই। তবে হঠাৎই নাফিসের ছন্দপতন ঘটে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগ আইসিএলএ নাম লিখিয়ে। তারপর থেকেই উপেক্ষিত হয়েছেন জাতীয় দলের জন্য। তবে নিজের যোগ্যতা দিয়েই আবারও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মাঝে ফিরেছেন; তবে এবার আর মাঠের খেলোয়াড় নয়, বিবিসির অপরেশন্স ম্যানেজার হিসেবে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে আদিব খেলেছেন মোট ২৮টি ম্যাচ, যেখানে তার ফিফটি ছিল ৪টি। আর সেঞ্চুরি করেছিলেন দুটি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ইনিংসটি ১৪৯ রানের। ব্যাট হাতে তার মোট রান ১৩৬৭। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যাচ নিয়েছে ৩৪টি। লিস্ট এ ক্রিকেট খেলেছিলেন ১৩ ম্যাচ প্রায় ২৬ গড়ে ব্যাট হাতে করেছেন ২৩১ রান।

সেই সময় অনেকেই দেখে ফেলেছিলেন, এই ব্যাটার জাতীয় দলে খেলবেন একদিন। কিন্তু তা আর হয়নি। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ২৫ বছর বয়সে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে গিয়েও ক্রিকেট ছাড়েননি তিনি।

বেশ কিছুদিন হলো শোনা যাচ্ছে বিশ্বের বড় বড় খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়ে জাতীয় দল গঠনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যেই টেস্ট খেলুড়ে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে ৪৪ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে দেশটি। তার বাইরে
ক্রিকেটের পাইপলাইন মজবুত করতে আরও ১০০ জনকে বাছাই করেছে ইউএসএ ক্রিকেট।

এই ১০০ জনকে নিয়ে মোট ছয়টি ভাগে ভাগ করে তাদের ট্রেনিং ক্যাম্প করানো হবে। সেই ট্রেনিংয়ে যারা ভালো করবেন, তারা যোগ দিবেন ইউএসএ ক্রিকেটের মূল স্ট্রিমে। টাইগারদের হয়ে জাতীয় দলে খেলা না হলেও আদিবের সুযোগ এসেছে ইউএসএ জাতীয় দলে খেলার। এখন শুধুই ট্রেনিং ক্যাম্পে নিজের জাত চেনাতে পারলেই হয়।

এই সংবাদ পাওয়ার পরেই নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে স্বপ্ন পূরণে একধাপ এগিয়ে যাবার কথা জানিয়েছেন সবাইকে। যমুনা নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যেখানেই যাই, যেখানেই থাকি আর যেভাবেই থাকি ক্রিকেটই খেলে যাবো, যতদিন শরীরে শক্তি আছে। চেষ্টা থাকবে আমেরিকার জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়ার। তবুও যদি বাংলাদেশের নাম কোথাও লেখাতে পারি সেটাই হবে আমার জন্য বড় পাওয়া এবং গর্বের। এখানে বিশ্বের বড় বড় টেস্ট খেলুড়ে দল থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করছে ইউএসএ ক্রিকেট। বাংলাদেশের হয়ে জোনাল ট্রেনিং গ্রুপে থাকতে পেরে আমি গর্বিত।

দেশের হয়ে খেলার বাস্তবতা থেকে তিনি এখন অনেকটাই দূরে। সেটি মেনে নিয়েই আদিবের কথা, দেশের হয়ে এখন আর খেলা সম্ভব নয়। তাই এখানকার ক্রিকেটেই মনোযোগ দিতে চাই। আর কখনো যদি দেশে আসি কাজ করতে চাই ক্রিকেট নিয়েই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply