পেটের নিচ থেকে জোড়া লাগানো জমজ শিশু, চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতা-পিতা

|

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :

প্রতিবন্ধী দম্পতি রুবেল আর আঙ্গুরী বেগমের কোল আলোকিত করে এসেছে ফুটফুটে সন্তান। কিন্তু যমজ শিশুর জন্ম গ্রহণের পরই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পিতা-মাতা। যমজ দুই শিশুর পেটের নিচ থেকে জোড়া লাগানো, পায়ুপথও একটি। জটিল চিকিৎসার ব্যয়ভার আর অস্ত্রোপচারের জটিলতা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

গত সোমবার ভোর ৫টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করে এই যমজ শিশু। এরপর রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন সেখানে যমজ শিশু দুটিকে আলাদা করা সম্ভব নয়। পরামর্শ দেন ঢাকা নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু অর্থ না থাকায় পিতা দিনমজুর রুবেল হোসেন বাধ্য হয়ে শিশুদের ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বিদিরপুর রেল বস্তিতে ভোর বেলা গিয়ে দেখা গেছে শিশু দুটি রয়েছে দাদির কোলে। মা আঙ্গুরী বেগম এখনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট থেকে খরব পেয়ে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক মুঞ্জুরুল হাফিজ ও সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী। প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ৪টি কম্বল প্রদান করেন। দ্রুত চিকিৎসার জন্য তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্স যোগার করে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।

প্রতিবেশীরা বলেন, রুটির দোকানের দিনমজুর রুবেল হোসেন। বিদিরপুর রেল বস্তির এই দম্পতি এমনিতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন যাপন করে। গর্ভকালীন প্রতিবেশীদের সহায়তায় কোনোমতে দিনাতিপাত করেছে। এমনকি আল্ট্রাসনোগ্রাম করার অর্থ জুটাতে না পারায় গর্ভকালীন অবস্থার কোনো ধারণাও পায়নি তারা। গত রোববার অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় আঙ্গুরী বেগমকে। কিন্তু জেলায় এধরণের চিকিৎসা সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ধার-কর্য করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। একদিকে স্ত্রীর চিকিৎসাভার অন্যদিকে শিশু সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তা সময় কাটছে দিনমজুর রুবেলের। পরিস্থিতি সামলানো এখন অসম্ভব বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় সুহৃদয় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানিয়েছেন পিতা রুবেল হোসেন।

মনিরুল ইসলাম নামে এক প্রতিবেশী জানান, আপাতত ডিসি স্যারের সহযোগিতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখানেও হয়তো চিকিৎসা হবে। কিন্তু ব্যয়বহুল চিকিৎসার খচর যোগাতে বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, এটি অবশ্যই জটিল একটি চিকিৎসা। এটিকে আমরা কনজয়েন্ট টুইন বলি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার করা গেলে সফলতা সম্ভব। এর আগেও দেশে এধরনের চিকিৎসা হয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করা গেলে শিশু দুটিকে বাঁচানো সম্ভব।

জেলা প্রশাসক মুঞ্জুরুল হাফিজ জানান, বিষয়টি জানার পরই আমি তাদের দেখতে এসেছি। তারা অত্যন্ত দরিদ্র। এছাড়া দ্রুত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি দ্রুত শিশু দুটিকে ঢাকায় প্রেরণের জন্য বলেছেন। এজন্যই আমি দ্রুত তাদের ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করেছি।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply